বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বন্দরের মদনপুর তথা উত্তরাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী কাবিলা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় এলাকাবাসী স্বস্থ্যি প্রকাশ করেছে। ২০০৪ সালে মদনপুরের চাঞ্চল্যকর রেহানা হত্যা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের সাহসী অভিযানে থানার তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী কাবিলা (৪৫) গ্রেফতারের খবরে চানপুর, নয়াপুরসহ কয়েকটি গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। সেইসাথে মদনপুরের কুখ্যাত কাবিলা-খলিল বাহিনীর বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তাদের অপকর্ম প্রকাশ করতে শুরু করেছে এলাকাবাসী। জানা গেছে, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর মদনপুরের কেওঢালায় অবস্থিত হায়দরী নীট গার্মেন্টস ও ডাইং ক্রয় করে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জামায়াতের প্রভাবশালী এমপি আবদুল্লাহ আবু তাহের। সেসময় মদনপুরসহ আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী কামু-সুরত আলী বাহিনী তৎপর ছিলো। ২০০৩ সালে তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী কামু (বর্তমানে মৃত) চাঁদার দাবিতে হায়দরী কম্পোজিটে ঢুকে এমপি তাহেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে তাহেরের বডিগার্ড গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ বাহিনী তিনদিন মদনপুরে অবস্থান করে কামুকে ধরতে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়। এর প্রতিশোধ নিতে এমপি তাহের কামু বাহিনীকে ধ্বংস করতে সুরত আলী বাহিনীকে শেল্টার দিতে শুরু করে। সেসময় সুরত আলী বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলো সন্ত্রাসী কাবিলা। এই বাহিনী ২ বছরে কামু পরিবারের দুই ভাই নুরা ও বাবুল, দুই বোন নিলুফা ও রেহেনাসহ অন্তত ৮ জনকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে। ২০০৫ সালে কামুর ভাই আবুলের হাতে গ্যাং লিডার সুরত আলী নিহত হওয়ার পর বাহিনীর দায়িত্ব নেয় সেকেন্ড ইন কমান্ড কাবিলা। এরপরই কাবিলার সাথে যুক্ত হয় শরিয়তপুর থেকে আসা খলিল। মদনপুর বাজারের মুরগী বিক্রেতা খলিল কাবিলা বাহিনীতে যোগ দিয়ে অল্প দিনেই নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নেয়। ওয়ান ইলেভেনের সময় কাবিলা-খলিল বাহিনী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও ২০০৯ সালে পুনরায় এলাকায় এসে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয় খলিল। দূর্ধর্ষ কাবিলা খলিল বাহিনীর প্রভাবে এবং সিদ্ধিরগঞ্জের আরেক গডফাদার নুর হোসেনের সহায়তায় ভোটকেন্দ্র দখল করে মেম্বার নির্বাচিত হয় খলিল। এরপর কাবিলা-খলিল বাহিনী পুরো মদনপুরকে জিম্মি করে ফেলে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, বালুর ব্যাবসা নিয়ন্ত্রন, পরিবহন চাঁদাবাজীতে একক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এরপর লাভজনক ব্যবসা হিসেবে শুরু করে মাদক পাচার। গত ৬ এপ্রিল বুধবার জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ মদনপুরে অভিযান চালিয়ে খলিল মেম্বারের শ্যালক মারুফকে বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ আটক করে। এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সেলিম বাদী হয়ে বন্দর থানায় মামলা রুজু করে। গ্রেফতারকৃত মারুফ একই এলাকার শরাফত আলীর ছেলে। সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে এসে মাদক স¤্রাট মারুফ আবারও বীরদর্পে ইয়াবা ব্যাবসা শুরু করেছে। তার সঙ্গে রয়েছে ভায়রা কামাল, কানা মতিন, মুকুল ও সুখেরটেকের আমিনুলসহ অর্ধশতাধিক সদস্য। এরাই বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান পৌছে দিচ্ছেবলে সূত্রটি জানায়।
এদিকে ১০ সেপ্টেম্বর বন্দরের মদনপুরে র্যাব ১১ অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ মো: নাইমুর রহমানকে গ্রেফতার করে। র্যাবের অভিযানে সন্ত্রাসী নাইমুর ০১টি বিদেশী পিস্তল, ০১টি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুটার গান, ০১টি ম্যাগাজিন, ০৪ রাউন্ড পিস্তলের তাঁজা গুলি, ৬২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ইয়াবা বিক্রয়ের ৫০,০৭০/- টাকাসহ গ্রেফতার হয়। অভিযানে এলাকায় স্বস্থ্যি নেমে এসেছে। তবে এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বিতর্কিত ইউপি মেম্বার ও মাদক সন্ত্রাসীদের শেল্টারদাতা খলিল মেম্বার স্বাক্ষী হওয়ায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে।

