বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সিদ্ধিরগঞ্জে স্ত্রীর কথাকে মূল্য দিতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ২০১৭ সালের ৩০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর ফরম ফিলাপ করতে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে কলেজের অধ্যক্ষ সমীর কর্মকার। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসের আন্দোলন সংগ্রাম করলেও অধ্যক্ষ তাদের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরন করতে দিবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এঘটনায় শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এবং জেলা প্রশাসকের সাথে স্বাক্ষাত করে অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রী কর্মকান্ড তুলে ধরেছে। অপর দিকে অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রী ময়না রাণী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলীর ভয় দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের খেলার পুতুল করে ফেলেছেন। তাই তারা অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রীর বদলী দাবি করছেন।
জানা গেছে,সিদ্ধিরগঞ্জে পাঠানটুলীতে নারায়ণগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে। যা জেলার মধ্যে এক মাত্র কারীগরী শিক্ষাদান কেন্দ্র। এ প্রতিষ্ঠানটিতে ৪টি আলাদা ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। ২০১৭ সালে এখান থেকে ১৪৪ জন ছাত্র/ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষা দেবেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সমীর কর্মকার ৩০ জন ছাত্রকে অন্যায় ভাবে এসএসসি পরিক্ষার ফরম পূরন করতে দিবেনা বলে জানিয়ে দেয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তা জানতে চাইলে সে স্কুলে আসেনা তার হাজিরা না বলে পরিক্ষা দিতে পারেবনা। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থী /অভিভাবক ও এলাকায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিরা অধ্যক্ষ সমীর কর্মকারকে অবগত করে ও সরাসরি দেখা করে পরিক্ষার দেওয়ার ব্যবস্থা করা আহবান জানান। কিন্তু অধ্যক্ষ তাদের কথাকে অপমূল্যায়ন করে ৩০ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক এর নিকট একটি লিখিত আবেদন বলেছে। আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সাথে স্বাক্ষাত করে তাদের পরিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি তারা অধ্যক্ষ সমীর ও তার স্ত্রী ময়না রানী বরাল প্রতিষ্ঠানের তাদের আধিপত্য ও কর্মকান্ডের বিষয়ে অবগত করেন।
জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে ফরমপূরণ করার দাবীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গত সোমবার দুপুরে প্রথম দফায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো: রশিদ আল মামুন মৃধার সঙ্গে অভিভাবকদের বাকবিতন্ডায় উত্তেজনা দেখা দিলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মো: শাহজাহান, কৃষকলীগ নেতা মো: ইয়াছিন, ফজলে কাদের জীবন, মো: মোতালিব সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষ মো: রশিদ আল মামুন মৃধার আশ্বাসে বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসিত হয়। ওই ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীরা কলেজে প্রবেশ করার পর অধ্যক্ষ মো: রশিদ আল মামুন মৃধাকে ফরমপূরণ করার বিষয়টি অবগত করলে তিনি কাউকে ফরম পূরন করতে দিবেন না জানিয়ে দিলে দেখা দেয় উত্তেজনা। এমনকি পাঠানটুলী সড়ক অবরোধ সহ মানববন্ধন করার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন বাধা দেন।
শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, শিক্ষিকা মনি রানী ববি ট্রেড বিষয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে আমাদের কম নাম্বার প্রদান করে। এছাড়া ম্যাডাম আমাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ সহ একবারের বেশী কোন বিষয়ে জানতে চাইলে বিভিন্নভাবে ধমক দিয়ে থাকেন।
পরীক্ষার্থী তানহা বলেন, আমি শতভাগ উপস্থিতসহ সকল বিষয়ে ভাল ফলাফল করি। একমাত্র ট্রেডে কম নাম্বার পাওয়ার কারণে আমাকে ফরমপূরণ করতে দেয়া হচ্ছে না। একই অভিযোগ করে অন্য পরীক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল আদেল, রাইসুল ইসলাম, মো. ইমন সহ মোট ৩০ জন পরীক্ষার্থী।
অভিভাবকদের পক্ষে মো: রফিকুল ইসলাম জানান, অধ্যক্ষ মো: রশিদ আল মামুন মৃধার সহধর্মীনী মনি রানী ববি তার স্বামীর দাপটে বেশীর ভাগ ছাত্র ছাত্রীকে ট্রেডের বিষয় অজুহাত দেখিয়ে ফরমপূরণ দেয়া হচ্ছে না। অভিভাবক প্রতিনিধি মো: ছিদ্দিুকর রহমান বলেন, মনি রানী ববি ট্রেডে তার মনগড়ার মতো হাজিরা দিয়ে থাকেন বিধায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি হার কম হয়েছে। অধ্যক্ষ সমীর কর্মকার তার স্ত্রী ময়না রানী বলারের কথায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। কারন তার স্ত্রীও এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। একটি ডিপার্টমেন্টের প্রধান। ছাত্র/ছাত্রীরা ময়না রানীর ক্লাসের হাজিরা খাতায় তাদের অনুপস্থিতি দেখায়। অন্যান্য ক্লাসে হাজিরা সঠিক রয়েছে। ইচ্ছে করে ময়না রানী ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষা জীবন নষ্ট করছে। এ অধ্যক্ষ ভৈরবে এমন কর্মকান্ড করার কারনে মারধর ক্ষেয়েছে। তার পরেও তার লজ্জা হচ্ছেনা। আমরা ময়না রানী ও অধ্যক্ষর বদলী দাবি করছি। পাশাপাশি ছাত্র/ছাত্রীদের পরিক্ষার ব্যবস্থা করা আহবান করছি।
এদিকে অপর একটি সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী ময়না রানীর কথাকে মূল্য দিতে গিয়ে অধ্যক্ষ সমীর ৩০ শিক্ষার শিক্ষা জীবন অন্ধকারে ঢেলে দিচ্ছে। স্ত্রীর কথা তার কাছে অনেক বেশী মূল্য।
সুত্রটি আরো বলেন, ময়না রানীর জন্যই প্রতিষ্ঠাটির শিক্ষক ও শিক্ষিকা দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। তার কারেন ছাত্র/ছাত্রীদের লেখাপাড়ার মানবৃদ্ধি পাচ্ছেনা। সঠিক মত ক্লাস হয়না। ময়না রানীর কথা না শুনলেই প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বদলীর ভয় দেখিয়ে থাকেন। তাই স্বামীও স্ত্রী এক প্রতিষ্ঠান থেকে বদলী করার আহবান করছি।
নারায়ণগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সমীর কর্মকার জানান, আমি শিক্ষার নিয়ম নীতিমালার বাহিরের কোন কিছুই করেনি। এসএসসির যে সকল পরীক্ষার্থীরা ফরমপূরণ করতে পারছেন না বেশীরভাগই ছাত্র ছাত্রীর উপস্থিতি হার খুবই কম। যেখানে ৭০ ভাগ উপস্থিত থাকার কথা সেটা পূরণ হয় নাই। তাছাড়া ট্রেডে উপস্থিত না থাকলে তাকে কখনো পরীক্ষায় ফরম পূরণ করার কোনভাবেই অনুমতি দেয়া যায় না। এছাড়া বেশীরভাগই শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে একাধিক অভিভাবকেরা অসুস্থতার কথা প্রকাশ করেছেন। আপনারা মেডিকেল সার্টিফিকেট সহ আমার কাছে আবেদন করলে আমি অবশ্যই ফরম পূরন করার জন্য সুপারিশ করবো। তবে আমি সরাসরি ফরম পূরণ করার অনুমতি দেয়ার কোন ক্ষমতা নাই। মাত্র ১০ টাকা বেতনে তারা লেখাপড়া করে। অপরদিকে তাদেরকে কারিগর শিক্ষাবোর্ড প্রতি বছর ২বার শিক্ষা ক্ষেত্রে ২ হাজার ৬ শত টাকা প্রদান করছে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরে ও অভিভাবকদের অবহেলার কারণে সঠিকভাবে শিক্ষা গ্রহন করতে পারছে না।