বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের ৫০০ অসহায় পরিবারকে সাবলম্বী করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। সেই লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের পূজা মন্ডপ গুলো থেকে ৫৫০টি অসহায় পরিবারের নারীদের হাতে একটি করে সেলাই মেশিন এবং চলতি মূলধন হিসেবে নগদ ২৫০০ করে টাকা তুলে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার ৩০ সেপ্টেম্বর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত সমবায় সমিতি ভবনের কমিউনিটি সেন্টারে শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সহ হিন্দু নেতৃবৃন্দদের সাথে মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান এমন কর্মসূচীর ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য ২০১৪ সাল থেকে শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যে প্রতিটি পূজা মন্ডপে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগীতা দিয়ে থাকেন এমপি সেলিম ওসমান। বৃহস্পতিবার মত বিনিময় সভায় শুরুতে প্রবীর কুমার সাহা বক্তব্যে বলেন, যেহেতু এখনো করোনা মহামারি শেষ হয়ে যায়নি। আর সেজন্য দূর্গা পূজার আয়োজনও সীমিত পরিসরে করা হবে। তাই প্রতি বছর এমপি সেলিম ওসমান পূজা মন্ডপে যে আর্থিক সহযোগীতা দিয়ে থাকেন এবছর সেই অনুদানটি আমরা পূজা মন্ডপে না দিয়ে করোনাকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষের সহযোগীতায় ব্যয় করার জন্য সকলের পক্ষ থেকে অনুরোধ রাখছি।
পরিপ্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৩০০টি সেলাই মেশিন এবং চলতি মূলধন হিসেবে ২৫০০ করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। উনার ঘোষণার অনুপ্রাণিত হয়েম অমল কুমার পোদ্দার ১০০টি প্রবীর কুমার সাহা, পরিতোষ কান্তি সাহা, এবং সরোজ কুমার সাহা প্রত্যেকে আরো ৫০টি করে মোট ২০০ সেলাই মেশিন ও চলতি মূলধন দেওয়ার ঘোষণা দেন। সব মিলিয়ে মোট ৫৫০টি সেলাই মেশিন এবং প্রত্যেককে ২৫০০টাকা করে চলতি মূলধন প্রদান করা হবে।
এ সময় এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আপনারা পূজা মন্ডপের কমিটির গুলোর মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে অস্বচ্ছল পরিবারের নারীদের হাতে এই সেলাই মেশিন গুলো তুলে দিবেন। যাতে করে এই একটি সেলাই মেশিন ও মূলধনের ব্যবহার করে একটি অস্বচ্ছল পরিবার ঘুরে দাড়াতে পারে। সেলাই মেশিন বিতরনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার স্বজনপ্রীতি করবেন না।
সবাইকে করোনা ভাইরাসের মহামারির কথা স্মরণে রেখে উৎসবের আয়োজনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এটা কোন রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। এটা ধর্মীয় উৎসবের আলোচনা। উৎসব করতে গিয়ে আমরা যেন কেউ ক্ষতি গ্রস্থ না হই। মহামারির কারনে আমাদের সব থেকে পবিত্র স্থান মক্কা শরীফেও বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। এখনো দেশের মসজিদ গুলোতে জুম্মার নামাজ সীমিত পরিসরে আদায় করা হয়। কারো উপর জোড় করে কোন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া যায়না। আপনার চেষ্টা করবেন সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করে পূজার আয়োজন করতে। জনসমাগম যতটা এড়িয়ে চলা যায় সেই ব্যবস্থা করবেন। পূজার আনন্দ করতে গিয়ে যেন কোন প্রকার মদ্যপান, মাদক সেবন না করা হয়। অসময়ে যেন বাদ্য বাজনা না বাজানো হয়। কোন মন্ডপে যেন কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। যদি কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তাহলে যেন মন্ডপ কমিটি যেন প্রশাসনের সহযোগীতা নেন এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেন কমিটির সাথে আলোচনা করে মন্ডপটা বন্ধ রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া প্রার্থনা করে তিনি বলেন, লাঙ্গলবন্দ মহাতীর্থ স্থানে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে ১০জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা ধর্মমন্ত্রীর মাধ্যমে লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নের প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কাজে পাঠাই। প্রধানমন্ত্রী লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নের ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন। ইতোমধ্যে কিছুটা কাজ হয়েছে। করোনার কারনে সেখানে উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেখানে কিছু মানুষ রাস্তার পাশে নতুন করে মন্দির গড়ে তুলছে। যাতে করে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হবে এবং কারো উদ্দেশ্য আবার অসৎ সরকার এগুরো অধিগ্রহণ করতে গেলে তিনগুন মূল্য দিতে হবে। আপনারা হিন্দু নেতৃবৃন্দরা এই বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেন। আর আপনারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন উনাকে সুস্থ্য রাখেন দীর্ঘায়ু দান করেন। আবারো যেন আমরা আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় পাই এবং শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেলেই আমাদের স্বপ্ন গুলো বাস্তবায়ন হবে।
তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া পূজা মন্ডপের যাতায়াতের রাস্তা গুলোও অনেক সংকোচিত। আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিলো আমি তখনো এই কথা গুলো বলেছি। নারায়ণগঞ্জে ওসমানী স্টেডিয়াম আছে, শামসুজ্জোহা স্টেডিয়াম আছে, লাঙ্গলবন্দ আছে, রামকৃষ্ণ মিশনের মত এমন কয়েকটি স্থান আছে যেখানে আপনারা পূজা মন্ডপ গুলো স্থানান্তর করে একত্রে আনন্দ উৎসব করতে পারেন। এই শহরটির নাম নারায়ণগঞ্জ, নদীটির নাম শীতলক্ষ্যা ব্রহ্মপুত্র কিন্তু বদলে যায়নি। নারায়ণগঞ্জ সুন্দর করে সাজাতে আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। খানপুর ৩০০ শয্যার জন্য রণদা প্রসাদ সাহা জমি দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত আমরা হাসপাতালটির নাম আরপি সাহা হাসপাতাল করতে পারলাম না। কুমুদিনি থেকে একটি উন্নত মানের ক্যান্সার হাসপাতাল করা হবে। সেজন্য জায়গা খালি করতে হবে। কিন্তু আমাদের নারায়ণগঞ্জেরই কিছু লোক তাদেরকে জায়গা না ছাড়ার কথা বলেছিলাম। আমার আহবানে নারায়ণগঞ্জের মানুষ মানববন্ধন করেছেন। আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। যারা স্থায়ী শ্রমিক ছিল তাদেরকে ৩ মাসের চাল ডাল তেল লবন সহ প্রয়োজনীয় জিনিস এবং নগদ অর্থ দিয়ে তাদের পূর্নবাসনের চেষ্টা করেছি সেই সাথে তাদের কারো চাকরির প্রয়োজন হলে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছি। সবাই মিলে একত্রিত ভাবে কাজ করলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন সম্ভব।
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কেউ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না। প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন আমাদের তাদের পক্ষেই কাজ করতে হবে। আমি অন্য দলের হলেও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের উপর ভরসা রাখি। অতীতেও আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছি ভবিষ্যতেও দিবো। তবে যাকেই মনোনয়ন দিকনা কেন মার্কাটা কিন্তু হবে নৌকা। দলটা হবে আওয়ামীলীগ। অতএব আপনারা কেউ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না। দলের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করে আমাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করুন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি দিপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকারের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানা উল্লাহ সানু, মহানগর আওয়ামীলীগে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন শীল, হিন্দু নেতা বাসুদেব চক্রবর্তী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ মহানগর এর সভাপতি অরুন দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা সহ সকল নেতৃবৃন্দরা।