বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সকলের সার্বিক সহযোগীতায় চলতি বছর আগামী ৩১ ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শতভাগ যানজট মুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এমপি সেলিম ওসমান। নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মত যদি বাস টার্মিনালের ক্ষেত্রে মালিক এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আমাদেরকে সহযোগীতা করেন তাহলে আগামীকাল শুক্রবার থেকেই শহরের যানজট ৬০ ভাগ কমে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বৃহস্পতিবার ১৭ আগষ্ট বিকেল ৩টায় জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ী, ট্রাক মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সাথে শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ মত বিনিময় সভায় সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।
সভায় সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেলিম ওসমান বলেন, কোন সংসদ সদস্য হিসেবে একজন ব্যবসায়ী নেতা এবং বড় ভাই হিসেবে আমার উপর আস্থা রেখে নিতাইগঞ্জ থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরানোর দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন এবং সহযোগীতা করে ছিলেন বিদায় আজকে ওই এলাকার মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে এবং আমাকে ও জেলা প্রশাসনকে দোয়া করছেন। মেয়র আইভী এই সুযোগটি করে দিয়ে ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমি এজন্য মেয়রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করে উদ্যোগটি সফল করেছেন এজন্য আমি তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালে পরিবহন বাস অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট যানজন নিরসনে করনীয় সম্পর্কে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, যেভাবেই হোক শহর থেকে যানজট দূর করতে হবে। কোন অবস্থায় রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। সমস্যা সমাধানে সকলে এক টেবিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা হলে দেখবেন বাস ষ্ট্যান্ডকে আর কেউ শহরের বাইরে নিতে বলবে না। বন্দরের লাখ লাখ মানুষ নদী পাড় হয়ে বাস টার্মিনালের কাছে এসে দুর্ভোগে শিকার হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে পারে না। যেভাবেই হোক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদি পরিবহন মালিক নেতা শহিদুল্লাহ সাহেব সহযোগীতা করেন তাহলে আমি বিশ্বাস করি আগামীকাল থেকেই শহরের যানজট কমে যাবে। মেট্রো হল থেকে চাষাঢ়া মোড় শহরের ১ ও ২নং রেলগেইট এলাকায় স্থানীয় কাউন্সিলরদের দায়িত্ব নিতে হবে। আর সব থেকে বেশি সহযোগীতা করতে হবে সাংবাদিকদ ভাইদের।
এমপি সেলিম ওসমানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, সিটি কর্পোরেশন থেকে মেয়রের পক্ষে প্রতিনিধি (সিও), জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সহ সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বাস টার্মিনালের ভেতরে যে গ্যারেজ গুলো রয়েছে সেগুলোকে আগামী ২৪ ঘন্টার নোটিশে সরিয়ে নিতে বলা হবে। বাস টার্মিনাল এলাকায় কোন প্রকার ট্রাক বা কার্ভাটভ্যান প্রবেশ করতে পারবে না। টার্মিনালে রাস্তার ডানপাশে অর্থাৎ রিভারভিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাতের উপর কোন প্রকার অবৈধ দোকানপাট ও বাস কাউন্টার থাকবে না। ঢাকা গামী বাস গুলোকে অবশ্যই একটি নিদিষ্ট সময় অন্তর অন্তর টার্মিনাল থেকে ছাড়তে হবে। দিনে এবং রাতে যত্রতত্র বাস পাকিং না করে চারারগোপ এলাকায় রাস্তার এক পাশে গাড়ি পার্কিং করে সিরিয়াল নিবে। এছাড়া টার্মিনালে ধারন ক্ষমতা মত ২৫টি বাস টার্মিনালে অবস্থান করবে। একটি বাস টার্মিনাল ছেড়ে আরেকটি বাস টার্মিনালে ঢুকবে। আর রাতের বেলায় বাস মালিকেরা নিজস্ব উদ্যোগে বাস রাখার জন্য গ্যারেজের ব্যবস্থা করবেন। সেই সাথে চাষাঢ়া মোড় থেকে যে সকল ফিটনেস বিহীন যানবাহন চলাচল করছে সেই গুলোকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমন সিদ্ধান্ত সকলে একমত পোষন করলে আগামীকাল শুক্রবার থেকেই এটি কার্যকর করার পক্ষে সকলে মত প্রকাশ করেন।
সেই সাথে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতি অনুরোধ রেখে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে যত গুলো রিকশার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ঠিক ততগুলোই রিকশাই চলে যেন সেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। প্রয়োজনে বৈধ এবং অবৈধ রিকশা চিহ্নিত করতে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার করতে সিটি কর্পোরেশন চাইলে ব্যবসায়ীরা সহযোগীতা করবেন। পাশাপাশি চাষাঢ়া থেকে মন্ডলপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে যে ডিভাইডার রয়েছে সেটি সরিয়ে দিতে সিটি কর্পোরেশনের কাছে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেন এমপি সেলিম ওসমান। পাশাপাশি পঞ্চবটি এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের নির্মিত ট্রাক স্ট্যান্ডের ভেতরে প্রায় ৭০টি গ্যারেজ এবং জায়গা দখল করে রাখা অকেজো যানবাহন সরিয়ে নিয়ে ষ্ট্যান্ডের জায়গা খালি করার জন্য অনুরোধ রাখেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের সিও জনস্বার্থে বাস টার্মিনাল ও ট্রাক ষ্ট্যান্ড এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের দেওয়া জমির লিজ বাতিল সহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।
সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পারস্পারিক সহযোগীতার কথা উল্লেখ করে সেলিম ওসমান বলেন, যদি জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিটি এলাকায় কোন অভিযান পরিচালনা করা হয় তাহলে অবশ্যই যেন বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে আলোচনা করে করা হয়। আলোচনার জন্য প্রয়োজনে মেয়র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আসতে পারেন অথবা জেলা প্রশাসক মেয়রের কার্যালয়ে গিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
সভায় নিতাইগঞ্জে ট্রাকে মালামাল লোড আনলোডের ব্যাপারে নতুন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাতের বেলায় যে সকল ট্রাক লোড আনলোডের জন্য নিতাইগঞ্জে প্রবেশ করবে সেই ট্রাক গুলো অবশ্যই সকাল ৬টার মধ্যে শহর ত্যাগ করতে হবে। যদি সকাল ৬টার পর কোন ট্রাক নিতাইগঞ্জ বা আশপাশ এলাকায় থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরবর্তীতে সকাল ৯টা থেকে পূর্বের নিয়মে ৫০টি ট্রাক পঞ্চবটি ট্রাক ষ্ট্যান্ড থেকে টোকেন নিয়ে মেট্রো সিনেমা হলের সামনে দিয়ে শহরে প্রবেশ করবে।
নিতাইগঞ্জে ট্রাক ষ্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম ওসমান পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ রেখে বলেন, যদি নিতাইগঞ্জে ট্রাক থেকে চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ আসে তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাথে যেন যেন গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ব্যক্তি যেই হোক না কেন। সেই ব্যক্তি যদি আমি সেলিম ওসমানও হই তাহলে আমাকেও যেন গ্রেপ্তার করা হয়।
জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, আপনাদের সকলের সহযোগীতাই পারে নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে। এখন সময় এসেছে আপনাদের সকলকে পরিবর্তনের কথা চিন্তা করতে হবে। কোন অবস্থাতেই পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখন শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে মত বিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না, সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, ধান চাল আড়ৎদার মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত হোসেন, আটা ময়দা মিল মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হাজী, লবন আড়ৎদার মালিক সমিতির সহ সভাপতি হাসান ভূইয়া, জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি কর্ভাট ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাসুদুর রহমান মানিক সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।