বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জে জুডিশিয়াল আদালত আগের জায়গাতেই থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আইনজীবী সমিতির ভবনটি নিজ খরচে আধুনিকায়ন করে দিবেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। পাশাপাশি শহরে নির্মাণ হওয়া নতুন ভবনটি তোলারাম কলেজের ছাত্রবাসের জন্য বরাদ্দ দিতে আইনমন্ত্রীর কাছে দাবী রেখেছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
রোববার ৩০ অক্টোবর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় ৪ জন সংসদ সদস্যের সাথে আইনমন্ত্রীর দীর্ঘ আলোচনা শেষে আইনজীবী সমিতি ভবনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় আনিসুল হক এ ঘোষণা দেন।
১৯৯৬ সালে শামীম ওসমান সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে শহর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রুটে নারায়ণগঞ্জ আদালতকে স্থানান্তরিত করে ছিলেন। যেখানে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জজ কোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এবং পাশেই নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার রয়েছে। যেখানে নারায়ণগঞ্জের মানুষ একই স্থানে সকল সেবা পেয়ে থাকে এমন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এবং শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে মন্ত্রী সরেজমিনে বিষয়টি ঘুরে দেখে জুডিশিয়াল কোর্টকে আগের স্থানেই রাখার সিদ্ধান্ত দেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা জুডিশিয়াল আদালতটি আগের স্থানেই রাখার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে যেহেতু নারায়ণগঞ্জ শহরে জুডিশিয়াল আদালতের ভবনটি নির্মাণ হয়ে গেছে সেহেতু আগে সেটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা আবেদন রাখবো ভবনটি সরকারী কোন সংস্থাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য। ওই ভবনটির একটি ব্যবস্থা হলেই আমরা নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গনে জুডিশিয়াল আদালত ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করবো।
সভা পরিচালনা করতে গিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল আইনজীবী সমিতির ভবনের বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে বক্তব্য দেওয়ার আহবান জানান।
সেলিম ওসমান তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনের অবস্থা এমনটা হতে পারে না। তাছাড়া দিন দিন নারায়ণগঞ্জ আদালতে নারী আইনজীবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দু:খের বিষয় নারী আইনজীবীদের ব্যবহারের জন্য কোন ভাল টয়লেট পর্যন্ত নেই। আজকে আমাদের আইনমন্ত্রী এখানে এসেছেন। উনি যদি আমাকে অনুমতি দেন তাহলে আমি আইনজীবী সমিতির জন্য একটি আধুনিক ভবন করে দিবো। যেহেতু আমি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এবং এই এলাকাটি আমার নয় তাই মাননীয় মন্ত্রী অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে।
এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাথে সাথে দাড়িয়ে আইনজীবী সমিতির ভবনের জন্য সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে অনুমতি প্রদান করেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার বক্তব্যে বলেন, আইনমন্ত্রীর কাছে জুডিশিয়াল আদালতের ব্যাপারে যখন উপস্থাপন করে ছিলাম তখন উনি আমাকে বলে ছিলেন দেখছি। কিন্তু উনি লোক পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং আজকে নিজে এসে দেখে সমস্যার সমাধান দিয়ে গেছেন। আপনারা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীর জন্য দোয়া করবেন। বর্তমান সরকার জনগনকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করছেন। সেবার মাধ্যমে জনগনকে খুশি করতে পারলেই আল্লাহ খুশি করা হয়। সেই সাথে তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনের আধুনিকায়ন করতে নিজে সহ অন্যান্য সংসদ সদস্যরাও সহযোগীতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এদিকে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে নারায়ণগঞ্জ শহরে নির্মাণ হওয়ার ভবনটি সরকারী তোলারাম কলেজের ছাত্রাবাসের জন্য বরাদ্দ চেয়ে শামীম ওসমান আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, সরকারী তোলারাম কলেজে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ওই কলেজের একটি ছাত্রাবাস রয়েছে যা এখন পানির নিচে রয়েছে। শহরে নির্মাণ হওয়ার জুডিশিয়াল আদালতের জন্য নির্মাণ হওয়া ভবনটি তোলারাম কলেজের ছাত্রাবাসের জন্য তিনি মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী ভবন তোলারাম কলেজের ছাত্রাবাসের জন্য বরাদ্দ চেয়ে লিখিতভাবে আবেদন করতে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে অনুরোধ করেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু তার বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের অধিকাংশই বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক বলে দাবী করেন এবং বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ধারণকারী সকল আইনজীবীদের ঐক্য থেকে কাজ করার আহবান রাখেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপুর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন, চীফ ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, জেলা আওয়ামীলীগে সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, জেলা পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন সহ আইনমন্ত্রনালয়ের সচিব, উপ সচিব, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দরা।