বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সেলিম ওসমানকে নয় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে আপনারা যতদিন ক্ষমতায় রাখবেন ততদিনই আপনারা কাঙ্খিত উন্নয়ন পাবেন। দেশের উন্নয়ন হবে দেশের সাধারণ জনগনের উন্নয়ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি বলেনছেন, আজকে আমি মুছাপুর কাইকারটেক হয়ে একটি রাস্তা দিয়ে সাবদীতে এখানে এসেছি আমার ১০ মিনিট সময় লাগেনি। গত ৫ বছর আগেও এমন ছিলনা। বর্তমান সরকারের আমলে বন্দরে এতো উন্নয়ন হয়েছে আজকে আমি এই রাস্তা দিয়ে না আসলে বুঝতাম না। তাই আমি আপনাদের সবার উদ্দেশ্যে বলবো সেলিম ওসমানকে নয় এই সরকারকে যতদিন আপনারা ক্ষমতায় রাখবেন ততদিনই উন্নয়ন পাবেন।
শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারী বন্দর সাবদী দিঘলদী এলাকায় একটি মন্দিরের উন্নয়ন কাজের পরিদর্শনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা দিপক সাহা তাঁর প্রয়াত স্ত্রীকে উৎসর্গ করে সম্পূর্ন ব্যক্তিগত খরচে এখানে মন্দিরের উন্নয়ন করছেন। এখানে সবার ইচ্ছা অনুসারে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর একটি মন্দির বানানো হচ্ছে। লোকনাথ ব্রহ্মচারী সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি উনি আর্ভিভাব হয়ে ছিলেন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমাতে। তাই আমাদের অনেক মুসলিম ভাইয়েরাও উনার আশ্রমে যান। আবার আমাদের অনেক নবী, আউলিয়া আছে যাদেরকে হিন্দু ধর্মের মানুষও সম্মান করেন, আউলিয়াদের মাজারে যান। উনারা সবাই আর্ভিভূত হয়ে ছিলেন মানুষের মাঝে ভেদাভেদ খুচাতে, শান্তিরবানী ছড়াতে। আমাদের বাংলাদেশে সেই সম্প্রীতি এখনো বিরাজমান আছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন উক্তিই যার প্রমান।
এর আগে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ও বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ তাদের বক্তব্যে, দেশে বিভিন্ন সময় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উপর সংকটময় সময়ে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের অসাম্প্রদায়িকতার অন্যন্য উদাহরন তুলে ধরেন। সেই সাথে সাবদী এলাকায় অবস্থিত উক্ত মন্দির সহ শ্মশ্মান কালী মন্দির ও একটি রাস্তা সহ ব্রহ্মপুত্র নদীতে একটি ঘাটলা নির্মাণের দাবী রাখেন। এ সময় এফবিসিআই এর পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা শ্মশ্মান কালী মন্দিরের উন্নয়নের জন্য দাবীকৃত ২টন রড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
পরিপ্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, দিপক কুমার সাহা নিজ খরচে মন্দিরের উন্নয়ন কাজ করেছে। একটি ৬ তলা ভবনের ফাউন্ডেশন দিয়েছেন। আপনাদের মধ্যে যারা বিত্তশালী যাদের সামর্থ্য আছে তারা একটি সহযোগীতা করলে ভবনটি সম্পন্ন হয়ে যাবে। আর সহ সরকারী ভাবে যে সকল উন্নয়ন প্রয়োজন সেগুলো আপনারা উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি ডিজিটাল ফরমেটে আমাকে প্রস্তাবনা দেন আমি সরকারের কাছ থেকে এই এলাকাটিকে সম্পূর্নভাবে পর্যটন এলাকায় রূপান্তর করতে পর্যটন কেন্দ্র করে দিতে চাহিদাপত্র দিবো। আর যেখানে আমার ব্যক্তিগত ভাবে কিছু করার দরকার হবে আমি করবো।
পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি বলেন, এই এলাকার মানুষ ফুলের চাষ করে। এখানে চারপাশে ফুলের ক্ষেত। অপরপাশে ব্রহ্মপুত্র নদ। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসে। তাই এটিকে সম্পূর্ন ভাবে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে আর এতে সব থেকে বেশি সহযোগীতার প্রয়োজন হবে এলাকার মানুষের। আপনারা রাস্তার পাশে জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করবেন না। আর যারা ফুল চাষী আছেন আপনাদের এই ফুলই হবে এই এলাকার পর্যটন কেন্দ্র এবং আপনাদের অর্থনৈতিক মুক্তি মূল ভিত্তি। প্রয়োজনে ফুল চাষের উপর আপনাদের সরকারী ভাবে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হবে। আমি উক্ত এলাকার চেয়ারম্যান সহ উপজেলা কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছি খুব দ্রুত এই এলাকার সকল চাষীদের উৎপাদিত ফুল দিয়ে এখানে যেন বড় পরিসরে একটি ফুল মেলার আয়োজন করা হয়। প্রয়োজনে আপনারা জেলা প্রশাসকের সহযোগীতা নিবেন। এতে করে সারা দেশের মানুষ জানতে পারবে এখানে দেশী বিদেশী সকল ধরনের ফুলের চাষ হয়ে থাকে। মূলত এই বন্দর এলাকাতেই ফুলে চাষ শুরু হয়। আমাদের দেখে যশোরে ফুলের চাষ শুরু করেছে। কিন্তু যশোরের ফুল চাষীরা অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের বন্দরের ফুল চাষীদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি দিপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসি আই এর পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা ইসলাম শান্তা, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি বাচ্চু মিয়া, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও গন্যামান্য ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক ওসমান পরিবারের উত্তরসূরী দাদা, বাবা এবং বড় ভাইয়ের মত এমপি সেলিম ওসমানও সব সময় নারায়ণগঞ্জের হিন্দু ধর্মালম্বীদের সহযোগীতায় সব সময় পাশে থেকেছেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবেও আর্থিক অনুদান সহ সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করে থাকেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গা উৎসবে নিজ নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন সদর ও বন্দর থাকা এলাকায় ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ৫৫টি দূর্গা পূজা মন্ডপে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ৬৩টি দূর্গা পূজা মন্ডপে প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা করে মোট ৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ৬০টি দূর্গা পূজা মন্ডপে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে মোট ১২ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ৭৪টি দূর্গা পূজা মন্ডপে প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ১৮ লাখ ৫০ হাজার, ২০১৯ সালে ৬৭টি পূজা মন্ডপে ৩০ হাজার টাকা করে ২০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন। এছাড়াও ২০১৫ সালে লাঙ্গলবন্দে ¯œান উৎসবে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া ১০জন পূর্ন্যাথীর লাশ সৎকারের জন্য প্রত্যেকের পরিবারের হাতে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেন, ২০১৮ সালে লাঙ্গলবন্দ ¯œানে এসে অসুস্থ্য হয়ে একজনের মৃত্যু হলে তাঁর লাশ সৎকারের জন্য বাড়ি নিয়ে যেতে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করেন। পাশাপাশি প্রতি বছর লাঙ্গলবন্দ ¯œান উৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তিনি সার্বিক সহযোগীতা প্রদানের পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করে থাকেন। ২০১৬ সালে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে ময়মনসিংহ পট্টিতে বসবাসকারী বিআইডব্লিউটিএ এর জমি থেকে উচ্ছেদকৃত ২৫টি সংখ্যালঘু পরিবারসহ মোট ৫২টি পরিবারকে পুর্ণবাসনে প্রতেক পরিবারকে ৫৪ হাজার ৫’শ টাকা করে আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করেন। ২০১৬ সালে নাসিকের ১৮নং ওয়ার্ডের সত্য নারায়ণ জিউর মন্দির উন্নয়নে আর্থিক অনুদান ১৫ লাখ টাকা, শহরের নতুন পালপাড়া এলাকায় শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের উন্নয়ন কাজের জন্য ১০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন।