বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
আজ ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভূত চতুদর্শী। শ্রী শ্রী শ্যামা পূজা । সনাতনির মতে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দীপান্বিতা বা দীপাবলি উৎসব । কেউ কেউ এই উৎসব কে দেওয়ালী উৎসব বলে থাকেন। কার্ত্ত্বিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুদর্শী তিথীতে দীপান্বিতা পার্বণ শ্রাদ্ধ- ও শ্যামা পূজা করা হয়ে থাকে। এই দিবসে পিতৃ পুরুষদের স্মরণ করা হয়। উল্কাদানের মাধ্যমে বলা হয়ে থাকে,“অগ্নি দগ্ধাশ্চ যে জীবা যেহপ্য দগ্ধা কূলে মম । উজ্জ¦ল জ্যোতিষা দগ্ধান্তে যান্তু পরমাং গতিম ”
দীপান্বিতা উৎসবে শ্রী শ্রী শ্যামা পূজার বিধান রয়েছে। কাল হরনকারিনী দশ মহাবিদ্যা রূপিনী । ভৈরবী ছিন্নমস্তা , ধূমাবতী বগলা মাতঙ্গি ,কমলা ,কালী তারা ষোড়শী, কামাক্ষ্যা,ভূবনেশ্বরী । বহু রূপে বহূ নামে ঢাকা হয় মাকে। তিনি স্বামী বিবেকান্দের কালী দ্যা মাদার, শ্রী রাম প্রসাদের বেড়া বাধুনী কন্যারূপী কালী মা, রামকৃষ্ণের দক্ষিনেশ্বরী কালী মা,বামাক্ষ্যাপার তারা পিঠের তারা মা কামরূপের কামাক্ষ্যা দেবী, ঢাকার ঢাকেরশ্বরী, চট্রোগ্রামের চট্রেরশ্বরী, জামালপুরের দয়াময়ী,কোলকাতার কালী মা,নবদ্বীপের ভবতারিনী, ত্রেতায় সীতা ,দ¦াপরে যোগমায়া মেধামনি চন্ডিকা দুর্গা।
প্রতিটি মানব দেহে কলকুন্ডলিণী রূপে বিরাজ করছেন আদ্যাশক্তি । যারা কালীর সাধন করে শুধু তারাই বুঝতে পারেন। ষড়রিপু ও দশ ইন্দ্রিয়কে বধ না করা হলে , কালী সাধন সম্ভব নয়। কালী মায়ের গলায় যে নরমুন্ডু দেখা যাচ্ছে আসলে তা ষড়রিপু ও দশ ইন্দ্রিয় বধের প্রতীক। তিনি সৃষ্টের পালন কর্তা ,দুষ্টের বিনাশকারিনী । বিশ্বস্য বীজং পরমাশি মায়া। সত্যযুগে মধু ও কৈটক নামের দুই দ্বৈত্য বধ করেন। মহিষাসুরকে হত্যা করেন। তার পরে তিনি কুরুক্ষেত্র সমরে অর্জুনের বাহুতে শক্তি সঞ্চয় করেন। এছাড়াও দেবী যোগমায়া রূপে মধুর বিন্দাবনে শ্রী রাধা গোবিন্দের যুগল মিলনে সহায়িকা রূপে কাজ করেন । মহা বৈষ্ণনবী কালী মাতার কৃপায় কৃষ্ণ ভক্তির ঊদয় হয়। বহুরূপে বহুভাবে দেবীর সাধন ভজন করার বিধান রয়েছে । এখানে তন্ত্রমন্ত্রে দেবীকে তুষ্ট করায় অনেকেই সাধক খ্যাত হয়েছে। আবার অনেকে ভক্তির মাধ্যমে দেবীর কৃপা লাভ করে ভক্তের আসন লাভ করেছেন। দেবী সৃষ্টি রক্ষায় ভৈরবীরূপী অসুর ধ্বংশ করতে গিয়ে মাতংঙ্গি রূপে ধ্বংশ লীলায় মেতে উঠেন। ঊন্মাদিনী মন্ডুমালিনী দেবী তার ডাকিনী যোগিনী সঙ্গে রণ রঙ্গিনী বেসে ছুটে যাচ্ছে। পায়ের নিচে শব রূপী স্বামী শিব কে দেখে লজ্জায় জিহ্বায় কামড় দেয়। লজ্জিত হয়ে রণে খান্ত দিলেন, যে দেবী রক্ততৃষ্ণায় নিজের মস্তক ছিন্ন করে ছিন্নমস্তারূপ ধারন করেছিলেন। সেই দেবী নারীর লজ্জার ভূষন কে শরীরে মেখে নিলেন।
এখানে আমরা কালী রূপের মাঝে আমাদের বাংগালী মায়ের চরিত্র দেখতে পাই। স্বামীর প্রতি বাংগালী মায়েরা যে ভাবে শ্রদ্ধা ভক্তি প্রদর্শণ করেন ,তার এই চরিত্রে ফুটে উঠেছে।
এখানে কালী বা শ্যামা পূজা শুধু পূজাই নয় ,এ্টা সনাতন ধর্মাবলীর উৎসব বটে। কালীকা পূরানে স্পষ্ট বলা হয়েছে “ সর্ব রূপময় দেবী সর্বং দেবী ময়ং জগৎ ”। শ্রী চন্ডিতে দেবী বলেছেন , যখনই দানব শক্তি আসবে ,তখনই আমি শক্তি রূপে আর্বিভাব হই। শ্রী রামকৃষ্ণও তাই বলেছেন এবং তিনি আরো বলেছেন তোমরা যাকে ব্রক্ষ্ম বলো ,আমি তাকে কালী মাতা বলি। ভুত চতুদর্শী তিথিতে আচারকার্যে ওল, বেঁত,সরিষাকাল কাষুন্দে ,নিম ,জয়ন্তি, হ্যালেঞ্চা শাক, সজনে শাক, পলতা, গুলোঞ্চ ইত্যাদি খাওয়ার রীতি রয়েছে। তৎপর দীপান্বিতা পার্বন শ্রাদ্ধান্তে পিতৃ পুরুষের আর্শিবাদ প্রার্থনা প্রদ¦ীপ বা উল্কা দান করাকে দেওয়ালী উৎসব বলা হয়। এই উৎসবটি বাংলাদেশ ,ভারত, নেপাল ,ভুটানসহ পৃথিবীর সকল দেশের সনাতন ধর্মাবলী লোকেরা পালন করে আসছে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই সনাতনী জীবন বিধান পরিচালিত হচ্ছে। দীপাবলি উৎসব সবার জীবনে সুখ সমৃদ্ধি শান্তি বয়ে আনুক এই হোক সবার প্রার্থনা।