বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
শীতলক্ষ্যা সেতুর চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের প্রতিক্রিয়ায় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্রথমেই আমি পরম করুনাময় মহান আল্লাহ্র কাছে শোকরিয়া জানাই। এরপরই আমি আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের সহ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং প্রয়াত সাংসদ মরহুম নাসিম ওসমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি দেশ স্বাধীন হলেও বন্দরবাসী সম্পূর্নভাবে তা উপভোগ করতে পারেনি। কারণ তাদের কর্মজীবন বা আনন্দ উৎসবে বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় যাতায়াতে যে অকল্পনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সেটা তারা নিজেরা ছাড়া অন্য আর কেউ উপলদ্ধি করতে পারবে না। আমার আগে যারা এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন আমার মনো উনারাও এটা অনুভব করেছেন। কিন্তু এ সেতুটি নির্মাণর জন্য বিগত সরকার গুলো সহযোগীতা করার ইচ্ছা থাকলেও কোন না কোন কারণে তা সম্পূর্ন করা সম্ভব হয়নি। প্রয়াত সাংসদ মরহুম নাসিম ওসমান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত ভাবে এবং সংসদ অধিবেশনের বক্তব্যে সেতুর প্রয়োজনীতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২০ মার্চ মদনগঞ্জে সেতুটি নির্মাণের ঘোষণা দেন এবং ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন।
যেহেতু সৌদি আরবের অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে সেহেতু আর্থিক জটিলতার কারণে নির্মাণ কাজ শুরু হতে প্রায় ১ বছর বিলম্বিত হওয়ার কারণে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সাথে এফবিসিসিআই এর একটি সভার পর উনার সাথে শীতলক্ষ্যা সেতুর নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষের চাহিদার কথা তুলে ধরি। উনি তাৎক্ষনিকভাবে লাল টেলিফোনে সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদেরের কাছে বিষয়টি জানতে চান এবং উনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দ্রুত শীতলক্ষ্যা সেতুর কাজ বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর প্রথম টেন্ডারটি বাতিল হলেও দ্বিতীয় দফায় এসে চীনা কোম্পানি সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়। এজন্য আমি সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদেরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি কারণ উনিই বন্দরের মদনগঞ্জ থেকে মদনপুর পর্যন্ত পুরাতন রেল লাইন তুলে নিয়ে তৎকালীন সংসদ সদস্য মরহুম নাসিম ওসমানের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ করে ছিলেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর সহযোগীতায় নাসিম ওসমান তখন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কটি নির্মাণ করে ছিলেন।
সেতু নির্মাণ কাজে নারায়ণগঞ্জের সকলের প্রতি সহযোগীতা কামনা করে তিনি বলেন, বিজ্রটি সম্পন্ন করতে আমি এলাকার সকল মানুষের সহযোগীতা কামনা করছি। বিশেষ করে রাস্তার দুপাশে যে সমস্ত অবৈধ দখলদাররা রয়েছেন অতিসত্ত্বর নিজ দায়িত্বে দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দেওয়া জন্য তাদের প্রতি অনুরোধ রাখছি। নয়তো আপনারা নিজেরাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। কারণ সেতু নির্মাণের জন্য ৩ বছর সময় নির্ধারণ করা হলেও নদীর দুই পাড়ের রাস্তার কাজ অতি দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা শুরু করেছি। কেউ না কেউ এটা শেষ করবে। বন্দর, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় উন্নয়ন ও শিল্পায়নের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে এইসব এলাকার মানুষেরাই সব থেকে বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে। আমরা বিশ্বাস করি শীতলক্ষ্যা সেতুর পাশাপাশি মদনগঞ্জের শান্তিরচরেরও উন্নয়ন হবে। যা একটি বৃহৎ শিল্পোনগরীতে পরিণত হবে। ইতোমধ্যে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিরচরের জায়গাটি বেইজার কাছে হস্তান্তর করেছেন। যেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে। শিল্পায়নের সুবিধার্থে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রুটের চাঁদমারি- আদমজী পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের চাহিদা অনুযায়ী পুরনো রেললাইন তুলে দিয়ে ১০০ ফুটের রাস্তা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ-পাগলা-ঢাকা পুরাতন সড়কটি উন্নয়নের জন্য সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত লিংক রুটটি বিউটিভিউ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিএনডি এলাকার উন্নয়নে সমস্ত পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বন্দরবাসীকে নারায়ণগঞ্জে যাতায়াতের সুবিধার্থে খুব তাড়াতাড়ি শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে আরো একটি পূর্ণাঙ্গ সেতু নির্মাণ করা হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বন্দরের মানুষকে আর খেয়াপাড় হয়ে নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করতে হবে না।
সুতরাং আমার দৃষ্টিতে সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসী, সকল জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একটাই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আর সেটা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাস্তবায়ন করা। আর এরজন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন নারায়ণগঞ্জের সকল জনপ্রতিনিধিদের মধ্যকার ঐক্য।