বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঝিল থেকে উদ্ধার হওয়ার চার মাসপর ফেসবুকের মাধ্যমে মিলল লাশের পরিচয়।
গত ২ মে রূপগঞ্জের পূর্বাচলে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে ৯ বন্ধু মিলে বেড়াতে এসে পরিকল্পিতভাবে একবন্ধুকে হত্যার পর ঝিলে ফেলে চলে যায়। পুলিশ নিহতের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের চার মাস পর ফেইসবুকের বদৌলতে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেন পরিবার।
পুলিশের হাতে আটক হয় ৪ খুনী বন্ধু। তারা বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে খুনের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ১৯ নং সেক্টরের রঘুরামপুর ঝিলে ঘটে এই ঘটনা।
ভোলাব পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম জানান, গত ৩ মে উপজেলার পূর্বাচলের ১৯ নং সেক্টরের রঘুরামপুর এলাকার ঝিলে ১৭ বছর বয়সী এক যুবকের লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পাশাপাশি পরিচয় শনাক্তের যাবতীয় করণীয় সম্পন্ন করেন। কিন্ত লাশ উদ্ধারের চারদিনেও পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মুসলিম লাশ হিসেবে পুলিশ নিজ উদ্যোগে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কালনী সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করেন।
এদিকে পরিচয় শনাক্তে লাশ উদ্ধারের ছবি এসআই শফিকুল ইসলাম তার ফেইসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন। ঘটনার চার মাস পর চলতি সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে শেয়ার হওয়া সেই ছবি চোখে পড়ে নিহতের ছোট ভাই তৌহিদুল ইসলাম রবিনের।
পরে নিহতের মা হালিমা বেগম ছেলের কাপড় আর বিকৃত লাশ দেখে নিশ্চিত হন যে এটা তার নিখোঁজ ছেলে তাসিন(১৭)। গত সপ্তাহে তাসিনের মা ভোলাব ফাঁড়িতে এসে জানান উদ্ধার হওয়া লাশটি তার ছেলের। নিহত যুবক তাসিন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাখরকান্দি এলাকার মাসুদ মাতবরের ছেলে। তারা বর্তমানে রাজধানীর খিলগাও তিলপাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন এবং নিহত তাসিন খিলগাঁও তালতলা এলাকায় একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করতো। গত ২ মে তাসিন বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর তাকে আর খোঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে পুলিশ নিহতের পরিবারের কাছ থেকে তাসিনের ঘনিষ্ট কয়েকজন বন্ধুদের নাম সংগ্রহ করে গত সোমবার রাতে খিলগাঁও তিলপাড়া এলাকার মান্নান মিয়ার ছেলে সিএনজি চালক ইমরানকে আটক করে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২ মে তারা ৯ বন্ধু পূর্বাচলের ১৯ নং সেক্টরের রঘুরামপুর এলাকায় ঘুরতে এসে ঝিলে গোসলে নামে।
এসময় তাসিন সাঁতার না জানায় ডুবে মারা যায়। তার কথা সন্দেহজনক হওয়ায় তার দেয়া তথ্য মতে পুলিশ শাওন, আব্বাস ও শামীম নামে আরো তিনজনকে আটক করে। তারাও পুলিশকে একই ধরনের কথা বলেন।
কিন্তু মঙ্গলবার আসা ময়নাতদন্তে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে লাশের পেটে পানির আলামত না থাকায় পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে একপর্যায়ে প্রত্যেকে স্বীকার করে পূর্বশত্রুতার জের ধরে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকেই তাসিনকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে ইমরান।
গত ২ মে পূর্বাচলে এনে তাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ঝিলের পানিতে ফেলে রেখে চলে যায়। আটক চারজনই বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মোহসিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।