বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
এক সময় যারা বাংলাদেশের তলা বিহীন ঝুড়ি বলতো এখন তারা বাংলাদেশের উত্থানে বিস্মিত। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করতেই কথিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। আর কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গীদের নিয়ে যারা সন্দেহ প্রকাশ করে বক্তব্য প্রদান করছেন তারাই জঙ্গীদের পক্ষে মদদ দাতা বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ।
শনিবার ৩০ জুলাই দুপুরে শহরের চাষাঢ়া এলাকায় নীট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ এর ১০তলা ভবনের ভিত্তি প্রস্তার স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন শেষে গার্মেন্টসে চাকুরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরন করা ৮০ জন শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের হাতে ২ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে মন্ত্রী ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রুটের চাঁদমারি এলাকায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর নব নির্মিত ৭তলা ভবনের উদ্বোধন করেন। পরে চেম্বার ভবনে অবস্থিত অর্থ মন্ত্রনালয় ও এডিবি’র অর্থায়নে ও উদ্যোগে বাস্তবায়িত এবং বিকেএমইএ’র অধীনে পরিচালিত এসইআইপি ট্রেনিং কোর্স উদ্বোধন করেন।
তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ১৯৯৬ সালে বিকেএমইএ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। বর্তমানে বিকেএমইএ বছরে ১৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছে। বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ মিলে ২৮.২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮২ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে যার মধ্যে বিকেএমইএ অন্যতম প্রতিষ্ঠান এবং নারায়ণগঞ্জ অগ্রনী ভূমিকা রাখছে। সেলিম ওসমানের প্রশংসা করে তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, সেলিম ওসমানের বিচক্ষন নেতৃত্ব ও দক্ষতায় নারায়ণগঞ্জে চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর নতুন কার্যালয় উদ্বোধন হয়েছে। এখন বিকেএমইএ এর ১০তলা কার্যালয়ের নির্মান কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হলো। এক সময় যারা বাংলাদেশকে তলা বিহীন ঝুড়ি বলতো এখন তারা বাংলাদেশের উত্থানে বিস্মিত। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা, আর এবছর বাজেট হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। আগে ৬৮টি দেশে ২৫টি পণ্য রপ্তানী হতো। আর এখন পৃথিবীর সকল দেশে ২ শতাধিক পণ্য রপ্তানী হচ্ছে। আগে রিজার্ভ ছিল ৫শ’ কোটি টাকা। আজকে সেটা ২৯ বিলিয়ন ডলারের বেশী। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাদের রপ্তানী কতো। তখন তিনি জানিয়েছিলেন ২৪ বিলিয়ন ডলার। আর আমাদের রপ্তানী ৩৪ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৩৭ বিলিয়ন ডলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সকল ক্ষেত্রে পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে এগিয়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু কণ্যা জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি দায়িত্ব পেলে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করবেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবে। ভিশন ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন না এখন এটা বাস্তব। বর্তমানে দেশে ৩৮ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। চাহিদা মিটিয়ে আমরা ৩০-৪০ লাখ মেট্রিক টন চাল রফতানী করতে পারবো।
নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি ১৯৯৮ সালের বন্যায় নারায়ণগঞ্জে এসেছিলাম। তখন আমি সেলিম ওসমানের ফ্যাক্টরীসহ অনেকগুলো ফ্যাক্টরী ভিসিট করেছিলাম। নারায়ণগঞ্জ একটা ঐতিহাসিক জায়গা। বঙ্গবন্ধু অনেকবার নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৮ মে এই নারায়ণগঞ্জে সভা করে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হয়েছিলেন। তারপর তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হতে হয়েছিল। সেই নারায়ণগঞ্জ সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই অর্জন এই সফলতাকে আর্ন্তজাতিকভাবে ভবিষ্যতবানী করা হচ্ছে। মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস বলেছে যে ১১টি দেশ আগামীতে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি লাভ করবে তার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। জেপি মর্গ্যান সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, বাংলাদেশসহ ৫টি দেশের কথা বলেছে। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার বাংলাদেশে তথাকথিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তবে তারা সফল হবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ ও বিচক্ষণ। ভয়ভীতি আতঙ্ক তার মধ্যে নেই। সমস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঐক্যবদ্ধ। গুলশানে হলি আর্টিজানে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ১৩ জন জীবিত উদ্ধার করেছে যেটা ইতিহাসে বিরল। কল্যানপুরে জঙ্গী তৎপরতা রুখে দিয়েছে।
তোফায়েল বলেন, যারা ২০১৩ সালে জঙ্গী তৎপরতা দেশকে অস্থিতিশীল করে ব্যবসা বাণিজ্যে ক্ষতি করেছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। ২০১৫ সালে ৯৩ দিন আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেয়েছিল তারাই আজকে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি বিশ^াস করি কোনদিন সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ তৎপরতা সফল হয়না। বঙ্গবন্ধু আমাদের ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বলেছিলেন। আমরা সেটা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ঘরে ঘরে সন্ত্রাস বিরোধী দুর্গ গড়ে তুলছি। কোন কিছুতেই আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবেনা। গত কয়েকদিনে বিএনপির কয়েক নেতার বক্তব্যে এটা বোঝা গেছে তারা জঙ্গীবাদের পক্ষে। তারা বলেছে পুলিশের অভিযানে নিহতরা জঙ্গী কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। ৬৯ এ আসাদ, মতিউর মকবুলদের হত্যা করেছিল সেই মোনায়েম খানের নাতি কেন গুলশানে না থেকে কল্যাণপুরে থাকবেন। নিহতরা কেন গুলশান, সাতক্ষীরায় না থেকে কল্যাণপুরে থাকবে। আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপে বাংলাদেশ শান্তির দেশে রূপান্তরিত হবে। যারা জঙ্গী সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতে চায় আড়াল করতে চায় তারা ইতিমধ্যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে শূণ্য হয়ে যাবে।
বিকেএমইএ’র সভাপতি এমপি সেলিম ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সেলিম ওসমানের সহধর্মিনী নাসরিন ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জের সংরক্ষিত নারী এমপি অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতউল্লাহ আল মামুন, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, বাংলাদেশ উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সেলিমা আহমেদ, জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা, পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব ইসরাত হোসেন খান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বিকেএমইএ সহ সভাপতি(অর্থ) জিএম ফারুক, কল্যাণ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলার ৭৪টি শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যজোটের প্রধান সমন্বয়ক কাউসার আহম্মেদ পলাশ সহ বিকেএমইএ ও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা।