বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জে অপহরণ মামলা ও মৃত মামুন জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগকারী নারীসহ ৬ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। একই সাথে আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ও মামলার তদন্তকারী পুলিশ ও সিআইডির ২ কর্মকর্তার তদন্তের বিষয়ে পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে নির্দেশ দিবেন আদালত ।
এ্ড. সৈয়দ জিল্লুর রহমান-এ,পি,পি( সরকারী পাবলিক প্রসিকিউটর জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌস এর আদালতে এই আদেশ দেন। এসময় মামুন ও ভুক্তভোগী ৬ জন সহ পুলিশ ও সিআইডি’র ৩ কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদনকারী সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ হারন অর রশীদকে এই মামলার তদন্ত থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
মো. মামুন ২০১৪ সালে নিখোঁজ হন। ২০১৬ সালের ৯ মে ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন তার বাবা আবুল কালাম। আসামি করা হয় তাসলিমা আক্তার, তার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক মিয়া, খালাতো ভাই মো. সাগর, সোহেল মিয়া ও ছাত্তার মোল্লাকে।
প্রথমে তদন্ত করে ছয় জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে রিমান্ড প্রতিবেদন দেন ফতুল্লা থানার এসআই মিজানুর রহমান।এতে তিনি এক চাক্ষুষ সাক্ষীর জবানবন্দিও জমা দেন। এতে দাবি করা হয়, ওই নারী নিজে দেখেছেন, আসামিরা মামুনকে খুন করে শীতলক্ষ্যায় মরদেহ ভাসিয়ে দিয়েছে।
ফতুল্লা থানা-পুলিশের পর মামলাটি তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। তারা মরদেহ খুঁজে না পাওয়ার কথা জানান আদালতকে। এর পর মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। ২৩ মাস তদন্ত শেষে তারাও আদালতে অপহরণের প্রমাণ হাজির করে প্রতিবেদন দেয়। এর পর শুরু হয় বিচার।গত ৩০ সেপ্টেম্বর শুনানি চলাকালে মামুন নিজেই হাজির হন বিচারকের সামনে। এ ঘটনায় সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্য।
ভুক্তভোগীদের পক্ষের আইনজীবী এড. এমদাদ হোসেন সোহেল জানান, অপহরণের মামলার তদন্তে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, নিখোঁজ যুবক আদালতে হাজির হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আদালত নারীসহ ৬ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই সাথে ভুয়া অপহরণ মামলার বাদী ও জবানবন্দি দেয়া ভুয়া সাক্ষী সহ পুলিশ সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছি।
দেড় বছর কারাভোগকারী নারী পোশাক শ্রমিক তাসলিমা আক্তারসহ তার পরিবার জানান, ৬ বছর ধরে হয়রানি করেছে আমার পরিবারকে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর রিমান্ডে এনে আত্যাচার করেছে পুলিশ । মামুনকে খুন না করে, অপহরণ না করে মিথ্যা মামলায় সাজা খেটেছি। যারা এই মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করেছে তাদের শাস্তি চাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা হলেন, ফতুল্লা থানার এস আই মিজানুর রহমান, সিআইডি’র উপপরির্দশক জিয়াউদ্দিন উজ্জল ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ।
ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার তাসলিমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় মামুন। সেই প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে তাসলিমা। ওই জের ধরে ২০১৪ সালের ১০ মে মুঠোফোনে ছেলে মামুনকে ডেকে নেওয়ার পর থেকে সে নিখোঁজ থাকে। ওই ঘটনার দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে তাঁর ছেলে মামুনকে অপহরণের অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন।
ওই মামলায় আসামী করা হয় গার্মেন্টসকর্মী তাসলিমা, তাঁর বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সাগর, সোহেল ও ছাত্তার মোল্লাকে। পুলিশ ওই মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তির জন্য পাঠালেও আসামীরা কেউ জবানবন্দী দেননি। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন মামলার স্বাক্ষী ও আসামী ছাত্তার মোল্লার স্ত্রী মাকসুদা বেগম।
সেই রিমান্ড প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আসামীরা মামুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশের তদন্তেও তাই জানা গেছে বলে জানান ওই সময় মামলার তদন্তকারী এসআই মিজানুর রহমান। পরবর্তী মামলাটিকে ডিবি পুলিশ তদন্ত করে। কিন্তু মামুনের সন্ধান না পাওয়ায় ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারী মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।
সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ২৩ মাস পর ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতে অপহরণ উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর গুম হওয়া ব্যক্তি মামুন(২৬) নারায়ণগঞ্জে আদালতে এসে হাজির হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।