বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
মন্তব্য কলাম, রণজিৎ মোদক : বন্যা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের চাকা এগোতে বাঁধার সৃষ্টি করছে। কিছুতেই যেন সামনের দিকে ঘুরছে না। একদিকে মানুষের জীবন রক্ষা, অপরদিকে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দুই দিক রক্ষায় কাজ করছেন। সারাবিশ্ব যখন কারণ আক্রান্ত আমাদের বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। আর করোনাকে পুঁজি করে প্রতারক শ্রেণী রাতারাতি বড়লোক ধর্নাঢ্য হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সরল মানুষের রক্ত চুষে নিচ্ছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা লাখ লাখ মানুষের ঘর ভাসিয়ে নিচ্ছে। গৃহহীন মানুষ ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বাংলার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা।
বন্যার হুমকিতে রাজধানীর পূর্বাঞ্চল। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস, ২৫ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে প্রতিবছরই বন্যার ঝুঁকিতে থাকছে রাজধানী ঢাকার পূর্বাঞ্চল সহ অন্য এলাকাগুলো। কবে নাগাদ এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না? এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে তুরাগ নদ এবং বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর অতি প্লাবনে ঢাকার পূর্বাচলে নিয়মিতই বন্যার ঝুঁঁকি দেখা দেয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নকশা প্রস্তুত না হওয়া। বারবার ডিপিপি পরিবর্তন ও অর্থ সংকটের কারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর চারপাশের নিম্নাঞ্চলগুলো প্রতিবছর প্লাবিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার সন্নিকট নারায়ণগঞ্জ ডেমরা এলাকাজুড়ে ডিএনডি বাঁধ। এ বাঁধের ভিতর মিল-কারখানার বিষাক্ত পানির সাথে বৃষ্টির পানি মিশে বন্যার রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় তার চিত্র সহ সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। ডিএনডি বাঁধের পানি নিষ্কাশন এর কাজ চলছে। কিন্তু কবে তা সম্পন্ন হবে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না? কোটি টাকার এ প্রকল্প সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে ১৩’শ কোটি টাকার কথা বিভিন্ন নেতার মুখে শোনা যাচ্ছে। একপাশে বুড়িগঙ্গা অপরপাশে শীতলক্ষ্যা মাঝখানে ডিএনডি বাঁধের ভিতর শিল্প আবাসিক এলাকা। বৃষ্টির পানিতে নাকাল হচ্ছে এলাকাবাসী। এ শুধু আজকের ঘটনা নয়। প্রতিবছর এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাংলাদেশের ১৭ জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। যে হারে বন্যার ছবিগুলো পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। সেই হারে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ বিতরণের দৃশ্য চোখে পড়ছে না। সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি ধর্নাঢ্য শিল্পপতি এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসা প্রয়োজন। বন্যার দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যা মোকাবেলায় সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন। বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। এজন্য দলের সবাইকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
করোনায় মৃত্যুর মিছিল বৃদ্ধি হওয়া সত্বেও মানুষ অকুতোভয়ে হাট-বাজার মিল কারখানায় কাজ করছে। একদিকে বিষয়টি ভালো হলেও বিপদের ঝুঁঁকি কমছে না। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে গরুর হাটের সংখ্যা কম। কিন্তু সেসব হাটে সামাজিক দূরত্ব তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। হাট ইজারাদাররা তাদের কাউন্টার থেকে সবাইকে সামাজিক নিয়ম-রীতি মানার ঘোষণা দিচ্ছে কিন্তু নিয়ম-রীতি মানা হচ্ছে না। সরকার ঈদের পূর্বাহ্নে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ঈদের জামাত এলাকার বিভিন্ন মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন।
করোনার সুযোগে সাহেদ, ডাক্তার সাবরিনা ও পাপিয়ার দল সমগ্র জাতির সাথে প্রতারণা করে নিজেরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয় করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে আমাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রকে কলঙ্কিত করেছে। বাংলাদেশের চিকিৎসার মানকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত। অকুতোভয় বাঙালি জাতির উচ্চশিরকে ভূলুণ্ঠিত করেছে প্রতারক গোষ্ঠী। এই সব প্রতারক চোর-বাটপারদের ধরতে গিয়েও সরকারের বদনাম সহ্য করতে হচ্ছে।
চাণক্য বলেছেন, দুষ্টুকে শাস্তি না দিলে তার পাপের ফল রাজাকে ভোগ করতে হয়। কথায় আছে, রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়। নারীর দোষে সংসার নষ্ট, শান্তি চলে যায়। কথাগুলো গুণীজনদের কথা। তাই রাজাকে কঠোর হতে হবে। ক্ষমা যেন দুর্বলতার রূপ না নেয়। আমরা জানি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তার কাছে জাতির অনেক দাবি। ৩০ লাখ শহীদের আত্মা, আজকের ১৭ কোটি মানুষ এবং আগামী প্রজন্ম তাকিয়ে রয়েছে একটি মানুষের মুখের পানে সে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভবন কক্ষে আর্থিক সরকারি অনুদান অনুষ্ঠানে বলেন, দেশে প্রচন্ড ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন ধরনের হত্যাসহ দেশকে ৭৫ এর পরের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। বিদেশের মাটিতে বসে এ ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের ষড়যন্ত্র বলে বিজ্ঞজনেরা বলে আসছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারসহ হত্যাযজ্ঞের পর দূর্যোগের কালো মেঘ বারবার বাংলার আকাশ ঢেকেছে। আবার সূর্য উঠেছে, রক্তলাল রক্তলাল। হতাশার কিছু নেই, ভয়াবহ করো না মহামারীতে দেশের চলমান উন্নয়নে কিছুটা বাধার সৃষ্টি হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ প্রেমের আলোকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির বর্ণিল দিগন্তে এ প্রত্যাশা জাতির।
আজ করোনা প্রতারণা বন্যার মাঝেও খুশির ঈদ উদযাপন করছে জাতি। ঈদ শব্দটি ছোট্ট একটি শব্দ হলেও এর অর্থ ব্যাপক এবং গভীর। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক এ পবিত্র ঈদ। কোরবানির রক্ত মাংস আল্লাহর দরবারে পৌছাবেনা। আল্লাহ তার বান্দার ঈমানকে দেখবেন। কোটি কোটি হাত তুলে আল্লাহর দরবারে করুণা ভিক্ষা করবে। হে আল্লাহ, তুমি করোনা মুক্ত করো। প্রতারকের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করো। বন্যা থেকে নাজাত দাও। তুমি তো সব পারো। তুমি সর্বশক্তিমান রহমানুর রহিম। তোমার করুণা দিয়ে বিশ্বের করোনা মুক্ত করো।
লেখক-
রণজিৎ মোদক
শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সভাপতি, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব
ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।
মুঠোফোন : ০১৭১১৯৭৪৩৭২