মন্তব্য প্রতিবেদন,হাবিবুর রহমান বাদল
নারায়ণগঞ্জের পেশাদার সাংবাদিকদের অনৈক্যের সুযোগ নিচ্ছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর প্রভাবশালী মহল। গতকাল আমার এক লেখায় সমাজকে কিছু দেয়ার জন্য নিজেদের সকল বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আহবান জানিয়েছিলাম আমাদেরই স্বার্থে। পেশাদার সাংবাদিকদের অনৈক্যের সুযোগে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলাসহ কিছু অসাধু নামধারী সাংবাদিকদের দিয়ে প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের চরিত্র হরণের চেষ্টা করে বিভিন্ন দুনীর্তিবাজ প্রভাবশালী মহল। আমার বক্তব্যের ২৪ ঘন্টা যে না যেতেই গতকাল বুধবার বিকেলে ফতুল্লায় একজন পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিছিল ও সমাবেশ হয়। কোন সংবাদ প্রকাশের পর এভাবে সমাবেশ করে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার ঘটনা আমার পেশাগত জীবনের প্রায় ৪ দশকে দেখিনি। একজন সাংবাদিক সে এ সমাজেরই বাসিন্দা। একজন মানুষ হিসাবে তার ভুল ক্রটি থাকতেই পারে। তার লেখনির মাধ্যমে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে সে উক্ত সংবাদের প্রতিবাদ করতে পারে কিংবা এতেও যদি সে স্বস্তিবোধ না করে তবে সে প্রেস কাউন্সিলে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। আমার জানামতে গতকাল বুধবার বিকেলে যুগান্তরে প্রকাশিত একটি রিপোর্টকে কেন্দ্র করে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ফতুল্লায় ঘটলো তা পেশাদার সাংবাদিকদের অনৈক্যের ফসল বলে আমার ধারণা। শুধু মিছিল কিংবা সমাবেশ করেই প্রতিবাদকারীরা ক্ষান্ত্র হয়নি বরং একটি অনলাইনের আপলোড থেকে জানা যায়, সমাবেশে বক্তরা নাকি বলেছে কুচক্রিমহল কাউছার আহম্মেদ পলাশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সামাজিক ভাবে ক্ষতি করার জন্য তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের দিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছে। আমরা তাদেরকে বলতে চাই, আপনারা সাপের লেজ দিয়ে কান চুলকাবেন না তাহলে ভালো হবে না। আমাদের নেতার প্রতিষ্ঠিত ২৬ বেসিক ইউনিয়নের নেতা কর্মীরা মাঠে নামলে আপনারা পালানোর সুযোগ পাবেন না। আলটিমেটাম দিয়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, একই কায়দায় নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র আইভিকে নিয়েও মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে। আজ এ অঞ্চলের মেহনতি মানুষের আশ্রয়স্থল কাউসার আহমেদ পলাশের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। অবিলম্বে এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ প্রত্যাহার করা না হলে বৃহৎ আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত শ্রমিক সমাজ। প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে কাউসার আহাম্মেদ পলাশের দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে কোন প্রতিবাদ তিনি দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। পাশাপাশি কাউসার আহাম্মেদ পলাশ, শ্রমিক রাজনীতিতে একটি ভাল অবস্থানে রয়েছেন। জাতীয় ক্ষেত্রে তার পরিচিতি রয়েছে। তার পরও তিনি তার অনুসারীদের কেন এমন ঘটনা থেকে বিরত রাখতে পারলেন না তা আমার বোধগম্য নয়। কারণ কাউসার আহাম্মেদ পলাশকে একজন শ্রমিক বান্ধব নেতা হিসাবে জানি। তিনি এবং তার অনুসারীরা যদি মনে করে কেউ তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাকে সামাজিক ভাবে হেয় করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তবে তিনি সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক কিংবা দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে বিষয়টি অবহিত করে বিচার চাইতে পারতেন। তা না করে গতকাল সমাবেশে প্রকাশিত সংবাদের রিপোর্টার সম্পর্কে যে আপত্তিকর শ্লোগান অনলাইনে দেখলাম তা আমি কাউসার আহাম্মেদ পলাশের মতো একজন বিজ্ঞ শ্রমিক নেতার কাছে আশা করিনি। মিছিলে নাকি এমনও শ্লোগান দেয়া হয়, ‘আমরা সবাই পলাশ সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা’, ‘চলছে লড়াই চলবে, পলাশ ভাই লড়বে’, ‘আল আমিনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘পলাশ ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘পলাশ ভাইকে নিয়ে মিথ্যাচার, বন্ধ করো করতে হবে’, দালাল আমিনের চামড়া, তুলে নেবো আমরা’সহ নানা শ্লোগান দিচ্ছিলো মিছিলকারীরা। অনলাইনের এ বক্তব্য যতি সত্য হয়, তবে অবশ্যই তা দু:খজনক। এ ব্যপারে প্রশাসনের দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ এই সমাবেশ মিছিল বর্তমান সরকার বিশেষ করে মিডিয়া বান্ধব হিসাবে পরিচিত প্রধানমন্ত্রীর ইমেজকে অনেকটাই ক্ষুন্ন করবে। কারণ কাউসার আহাম্মেদ পলাশ ক্ষমতাশীন দলের শ্রমিক ফ্রন্টের সাথে জড়িত। এমতাবস্তায় নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের হর্তা-কর্তারা কি করবেন তা নিয়ে আমি ভাবছিনা। তবে এ ঘটনার পর পেশাদার সাংবাদিকদের এক টেবিলে বসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ ৪ দশকের পেশাগত জীবনে ফতুল্লার শ্রমিকদের গতকালকের সাংবাদিক বিরোধী মিছিল নারায়ণগঞ্জের মিডিয়া জগতে এক কালো অধ্যায় হিসাবে চিহিৃত হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। তাই ক্ষমতাশীন দল পেশাদার সাংবাদিকদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কি করবে প্রশাসনই বা কি পদক্ষেপ নিবে তা দেখার অপেক্ষা ছাড়া একজন সাধারণ সংবাদ কর্মী হিসাবে আমার করনীয় কিছু আছে বলে মনে করি না। তবে পেশাদার সাংবাদিকরা যদি একহয়ে গর্জে উঠে তবে আগামী লেখা হবে ভিন্নতর।