বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
“হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর”-এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় ব্রহ্মপুত্র নদের স্নানোৎসবে লাখ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অংশগ্রহন করেছেন। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দের আদি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অষ্টমী স্নান উৎসব পালিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত ৯টা-১৯ মিনিট লগ্ন থেকে শুরু হয় দুইদিনব্যাপী এই স্নানোৎসব। স্নানোৎসবে আসা দর্শনীর্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকেই দেশি বিদেশী লাখ লাখ পুন্যার্থী ডাব, দুর্বা, ফলমুলসহ বিভিন্ন পুজার সামগ্রী নিয়ে মন্ত্র পাঠ করে পুন্যস্নানে অংশ নিয়েছে। পুরো স্নানোৎসবের এলাকা জুড়ে ছিল লোকজ মেলা।
কথা হয় চট্টগ্রাম থেকে আসা পুন্যার্থী সমীর দাসের সাথে। তিনি জানান, এই পুন্যস্নান সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। মহাঅষ্টমীতে এখানে স্নান করলে আমাদের যে পাপ রয়েছে সেটা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি। সেই বিশ্বাস থেকেই আমরা এখানে অংশগ্রহন করি।
নোয়খালী থেকে স্নানোৎসবে আসছেন শিল্পি সাহা। তিনি বলেন, আমরা এখানে প্রতিবছর আসি। দেশের মঙ্গল, জনগনের মঙ্গল ও দলের মঙ্গল যাতে হয় সেই প্রার্থনা নিয়ে আসি। যাতে করে আমাদের দুঃখ গ্লানি সব কিছু এই নদীতে ধুয়ে মুছে যায়। সেই প্রত্যাশায় ও পাপ মোচনের আশায়
স্নানোৎসবে অংশগ্রহন করি।
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা দর্শনার্থী সুমন সরকার বলেন, এবার স্নানোৎসব শান্তিপূর্ন ও ভাল নিরাপত্তা ছিল। তবে ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর পানিতে প্রচুর কচুরিপানা ও নোংরা ছিল। যার কারনে স্নান করতে সমস্যা হয়েছে। তাছাড়া অস্থায়ী টয়লেটগুলো নদীর পাড়ে হওয়ায় আরো সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাকেই দোষছেন তারা। ভবিষৎতে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ভাল ব্যবস্থাপনা করার দাবি জানান দর্শনার্থীরা।
স্নান ঘাটে বসা পুরোহিত অভয় চক্রবর্তী বলেন, শাস্ত্র মতে, বিষ্ণুর অবতার পরশুরামমুনি পাপমুক্তির জন্য ব্রহ্মপুত্র নদে যে স্থানের জলে স্নান করে ছিলেন, তা লাঙ্গলবন্দে অবস্থিত। সেই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পূণ্যের। এ স্নানের ফলে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পাপমোচন হয়। সেই বিশ্বাস থেকে হিন্দু ধর্মালম্বীরা ব্রহ্মপুত্রের জলে অষ্টমী স্নানে অংশ নেন।
লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ কুমার সাহা বলেন, এ বছর মঙ্গলবার রাত ৯টা-১৯ মিনিটে স্নানের লগ্ন শুরু হয় । শেষ হবে বুধবার রাত ১০টা-৪৯ মিনিটে। স্নানোৎসবে অংশ নিতে দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে পূণ্যার্থীরা লাঙ্গলবন্দে আসতে শুরু করেছেন। এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভূটান ও শ্রীলংকার প্রায় ১০ লাখের মত পূণ্যার্থীরা স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছেন।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বি.এম. কুদরত-এ-খুদা জানান, সুষ্ঠুভাবে স্নানোৎসব সম্পাদনের জন্য সব রকম প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। ১৭টি স্নান ঘাট সংস্কার করা হয়েছে। ঘাট এলাকায় নদের কচুরিপানা পরিস্কার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ৪৭টি নলকুপ ও একশ’ অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ ও স্নান ঘাটে কাপড় পাল্টানোর ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, লাঙ্গলবন্দে তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পূর্ণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশসহ প্রায় ১২শ’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তীর্থস্থানের তিন কিলোমিটার এলাকায় ৫০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ও নদীতে নৌ-পুলিশ কাজ করেছে। লাঙ্গলবন্দে সুষ্ঠুভাবে স্নানোৎসব সম্পাদন হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শান্তিপূর্নভাবে স্নানোৎসব পালন করা হয়েছে।
বুধবার রাত ১০ টা ৪৯ মিনিট লগ্নে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের স্নানোৎসব।