বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
আগামী বছরের শেষে কিংবা ২০১৯ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন সামনে রেখেই রাজনীতির মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তাপ। দলগুলো তাদের প্রার্থী বাছাইয়ে প্রস্তুতিও শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। বসে নেই প্রধান রাজনৈতিক দল ও তাদের শরিকরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নারায়ণগঞ্জে চাঙা হয়ে উঠছে বিভিন্ন দলের তৃণমূলের রাজনীতি। নেতাকর্মীদের আগাম ভোটের মাঠে নামাতে তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিটসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সম্মেলন, বর্ধিত সভা, উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় করে তৃণমূলকে চাঙা করার কাজ শুরু করেছে নেতারা। পুরানো কমিটিগুলো ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সংঙ্ঘবদ্ধ শক্তিশালী তৃণমুল নেতাকর্মীদের নিয়েই মাঠে নামার চিন্তায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের পদপ্রার্থীরা। ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী প্রচারণার জবাব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে সাধারণ ভোটারদের নৌকার পক্ষে উৎসাহিত করতে আগাম ভোটের মাঠে নামানো হচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। শোকের মাস আগস্টজুড়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের সক্রিয় করে মাঠে নামানো হবে বলে পরিকল্পনা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রার্থী নয় প্রতিকের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে তৃণমূলের রাজনীতিকে সক্রিয় করে আগাম ভোটের মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও বসে নেই। বিশেষ করে যেসব ইউনিট কমিটি নেই সেগুলো নতুন কমিটি করা, ঝিমিয়ে পড়া কমিটি সংযোজন বিয়োজন করে সক্রিয়া করা, যেসব নেতাকর্মী মান অভিমান করে নিস্ক্রিয় রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সক্রিয় করে তোলা। জেলা ও নগর কমিটির নির্দেশনার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো মতবিনিময় ও বর্ধিত সভা শুরু করে দিয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ইউনিট কমিটি ঢেলে সাজানোসহ তাদের চাঙা করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগসহ আরও কয়েকটি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা একযোগে আগাম ভোটের মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সূত্রমতে, নগর আওয়ামীলীগের বেশিরভাগ ওয়ার্ডে কয়েকযুগ বছর ধরে কোনো কমিটি ছিল না। নগরীর ওয়ার্ডগুলোতে কমিটি ঢেলে সাজানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া শিগগিরই সব কয়টি থানা শাখায় নতুন কমিটি দেয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃহাই বলেন, ইতোমধ্যেই মূল দলসহ সকল ইউনিটকে বর্ধিত সভা করে ভোটের মাঠে নামার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই উপজেলা পর্যায়ে বর্ধিত সভা শুরু হয়েছে। এর পর পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির বর্ধিত সভা করা হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেত্রীর নির্দেশে নগর আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করেছে। শোকের মাস আগস্টজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করে ভোটের মাঠে নামানো হবে।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলেন, বিএনপিসহ তাদের অনুসারিরা ইতোমেধ্যই সরকার বিরোধী ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেমেছে। এই সব প্রচারণার জবাব দিতে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা সর্বোচ্চ সক্রিয় থেকে সরকারের সফলতা তুলে ধরে সাধারণ ভোটারদের নৌকার পক্ষে উৎসাহিত করবে।
মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড.খোকন সাহা বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায় থেকে আরো ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ করা হচ্ছে। মহানগরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতেও কমিটি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে তৃণমূলকে চাঙা করতে ভেতর ভেতর কাজ করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মহানগর ও জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দরা আগামি জাতীয় সাংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের মতো জেলাগুলোতে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য হেভিওয়েট প্রার্থী বাছাইয়ে কাজ করছে। সে সাথে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষোদগার বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সাধারন ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এদিকে দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে নারায়ণগঞ্জের জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থা অনেকটাই শক্তিশালী। দশম জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের দুটি আসনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টির দুই সাংসদদ্ধয় স্ব স্ব এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৩ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থীদেরকে বর্তমান জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমান এবং লিয়াকত হোসেন খোঁকার মত জনপ্রিয় ব্যাক্তিকে টপকিয়ে জয়লাভ করাটা অনেকটা কষ্টসাধ্য হবে বলেও নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করেন।
মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, বিএনপি একটি অনেক বড় দল। এর অঙ্গ সংগঠন প্রচুর। অঙ্গ সংগঠনগুলোর যেগুলো কমিটি পুরানো হয়ে গেছে সেগুলো ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় কাছে আসছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন মোকাবেলায় সেভাবেই দল গোছানো হচ্ছে।