নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
দোলা ক্লিনিকের মালিক পরিচয়দানকারী রহস্যময় নারী রীনা দাস’র (রীনা বেগম) গৃহপরিচালিকা কনিকার রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে।
বৃহষ্পতিবার রাত ৯ টায় নারায়ণগঞ্জের ডন চেম্বারের দোলা ক্লিনিকের ৪র্থ তলা ভবনে কনিকা বর্মনের (১৪) রহস্যজনকভাবে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় নিহতের স্বজনরা।
নিহত কনিকা বর্মনের মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার নোয়ানগর গ্রামের উত্তম চন্দ্র বর্মন এবং সবিতা বর্মনের মেয়।
নিহতের পরিবার জানান, তাদেরই গ্রামের রীতা রানী গ্রাম থেকে বিভিন্ন রোগী এনে দোলা ক্লিনিকে ভর্তি করায়। তার পরিচয়ে সাত মাস পূর্বে মেয়ে কনিকাকে রিনা বাইনের বাসায় কাজ করতে দেন। শুক্রবার সকালে ডাঃ রিনা বাইন তাদেরকে খবর দিয়ে এখানে নিয়ে আসেন। তারা এখানে এসে দেখেন তার মেয়ে মারা গেছে। রীনা বাইন (রীনা বেগম) তাদেরকে বলেছে কনিকা সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
তারা আরো বলেন, রীনা বাইন তাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন কিছু টাকা নিয়ে লাশ নিয়ে চলে যেতে। তবে কতো টাকা দিবেন এটা তারা জানেন না।
জানা যায়, শহরের দোলা ক্লিনিকের চার তলার রীনা দাসের ফ্লাটের গৃহপরিচালিকা কনিকা (১৪) এর লাশ নিয়ে রাত পৌনে একটায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে দুইজন যুবক ও রহস্যময়ী নারী রীনা। কনিকার গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা ঈমন মৃত ঘোষনা করলে দ্রুত পালিয়ে যায় কনিকার লাশ আনয়নকারী যুবকরা। এর কিছুক্ষন পরে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে দোলা ক্লিনিকের মালিক পরিচয়দানকারীনী রীনা বেগম। উপস্থিত হয়ে মায়াকান্না শুরু করলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে থানায় ফোন করলে পালানোর চেষ্টা চালায় রীনা। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত দারোগা আবুল কাশেম হাসপাতালে হাজির হলে তাকে ম্যানেজের চেষ্টা চালায় রীনা।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রীনা জানায়, সে এবং নিহত কনিকা গতকাল পূজার উপোষ থেকেছে সারা দিন। এরপর কাজে ব্যস্ত থাকায় ক্লিনিকের চার তলায় আর যাওয়া হয় নাই। রাতে বাসায় ফিরে ভিতরের দরেজা বন্ধ দেখে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পায় কনিকার ঝুলে আছে ফ্যানের সাথে । লাশ নিয়ে ৩শ শয্যা হাসপাতালে আসলে লাশ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রীনা বেগম প্রথমে নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিলেও পরে সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায়, গোপালগঞ্জের কোটালী পাড়ার মঙ্গল দাসের মেয়ে রীনা দাস দোলা ক্লিনিকের মালিক মোশারফ হোসেনের সাথে প্রেম করে বিয়ের পর মুসলিম ধর্ম গ্রহণ কররেও বর্তমানে মোশারফের সাথে সম্পকৃ না থাকায় সে এখন হিন্দু ধর্ম পালন করে। তার নাম রীনা বলে পরিচয় দিলেও নিজের পরিচয় গোপন রেখে মোশারফেকে ব্লাকমেইল করে দোলা ক্লিনিক নিজেই মালিকানা হিসেবে নিয়ে নেয় রীনা।
এ বিষয়ে এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই আবুল কাশেম বলেন খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে কনিকার মৃতদেহ দেখতে পাই। নিহত কনিকা রীনা বাইনের বাসায় কাজ করতো। রীনা বাইন তাদেরকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে সে ক্লিনিক থেকে বাসায় এসে দেখতে পান ভিতরের একটি রুমের দরজা লাগানো। অনেক ডাকাডাকি করেও যখন ভেতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি তখন তারা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে গিয়ে দেখতে পান কনিকা সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তখন তারা কনিকাকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তিনি মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছেন এবং ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে। আপাতত একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্টে যদি হথ্যার কোন আলামত পাওয়া যায় তবে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আসাদুজ্জামান জানান, মৃতদেহ থেকে আলামত নেয়া হয়েছে । এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না । তবে স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্কার হবে আসল ঘটনা।