নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদকঃ
বিএনপির মিছিলে নারায়ণগঞ্জে একটি স্লোগান শুনেছি। হরে কৃষ্ণ হরে রাম, শেখ হাসিনার বাবার নাম। যারা এধরনের স্লোগান দিচ্ছে তার কত বড় সাম্প্রদায়িক শক্তি? রাজনীতি করেন কােন আপত্তি নাই, কিন্তু পায়ে পাড়া দিতে আসবেন না। আপনাদের পায়ে কিন্তু অত শক্তি নাই। আর আমাদের পা, জণগণের পা প্রচন্ড শক্তিশালী হীমালয় পর্বতের মত। এই জনগণের পায়ে যে শক্তি আছে, বুকে পাড়া দিলে কিন্তু উঠতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।
শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে শহরের রাইফেলক্লাবে আয়োজিত মুজিব শতবর্ষের স্মরণে স্মারণিকার মোড়ক উন্মোচন ও অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির মিছিলে আমি নারায়ণগঞ্জে একটি স্লোগান শুনেছি। হরে কৃষ্ণ হরে রাম, শেখ হাসিনার বাবার নাম। আমার মনে হয় আমি জাতির পিতার সৈনিক হতে পারিনি। আমার হাত পা বাঁধা। নাহলে জনগণের কাছে যদি ভালভাবে বিচার দেই জনগণ তাদের কাছে কীভাবে পৌছাবে জানা নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা মাফ করে দিয়েছি। আমরাও কিন্তু মানুষ রোবট না। আমাকে সারাক্ষণ শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে গালি দেয়। আমি এগুলো গায়ে মাখি না। ওরা মিথ্যা বলে তাদের জন্য আমার মায়া লাগে। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপোষ করতে পারি না। নারায়ণগঞ্জকে শান্ত থাকতে দিন। এমন কোন বক্তব্য দিবেন না, জনগণ কিন্তু ঘরে বসে থাকবে না। জনগণের কাছে বিচার দিলে বাড়ির ইট থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, হিন্দু সমাজের কাছে সবচেয়ে শ্রদ্ধার বিষয় হরে কৃষ্ণ হরে রাম। যারা এ স্লোগান দেয় তারা কতবড় সাম্প্রদায়িক শক্তি হতে পারে ভেবে দেখুন। শেখ হাসিনা মুসলমান বঙ্গবন্ধুও মুসলমান। আমি মুসলমান ও সনাতনদের জিজ্ঞেস করতে চাই এরা কারা যারা হিন্দু ধর্মকে আঘাত করে। এরা দুটো ধর্মকে সমান ভাবে আঘাত করল। ওরা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। দেশটাকে একটা আঘাত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশকে পিছন দিকে নিয়ে যাবার জন্য এই আঘাত করা হবে, সামনের দিকে নিয়ে যাবার জন্য না। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা আমাদের একটি স্বাধীন ভূখন্ড দিয়ে গেছেন, আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কি দিয়ে যাব, ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম, শেখ হাসিনার বাবার নাম’?
শামীম ওসমান আরো বলেন, আমি বিএনপিকে ছোট পার্টি হিসাবে মনি করি না। তাদের অনেক নেতা বড় বড় কথা বলেন। তারা এমন ভাবে ২৭ দফা দাবি করেন যে সমুদ্রের পানিও যেন চিনি হয়ে যাবে। সেই পার্টির নেতাদের কাছে আমি জানতে চাই, আপনাদের উপস্থিতিতেই স্লোগান দেওয়া হয়, ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম, শেখ হাসিনার বাবার নাম’। আমি বিএনপির ওই নেতাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই, এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে কি হিন্দু এবং মুসলিম ধর্মের মনুষদের কি আঘাত করা হয়নি? আপনাদেরই কর্মী তারা, আর আপনারাতো তারাই যারা ২০০১ এর পরে ক্ষমতায় এসে পূর্ণিমার মত শত শত সনাতন ধর্মের নারীদের ধর্ষণ করেছেন। ওরা (বিএনপি) আবারও একই পথে আগাতে চায় নির্বাচনকে বন্ধ করার জন্য। কারণ তারা যানে নির্বাচনে এলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীদের হুশিয়ার করে তিনি বলেন, অমি সংসদ সদস্য বলে আমার হাত-পা বাঁধা। দায়িত্বশীল পদে আছি বলে দায়িত্বশীল আচরণ করছি। যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এসব অশ্লীল স্লোগান দিচ্ছেন, আমি যদি আমার জনগণের কাছে বিচার দেই তবে জনগণ কিভাবে আপনাদের কাছে পৌছাবে বুঝতে পারেন? যখন এধরনের অশ্লীল স্লোগান দেয় তখন বড় বড় নেতারা দাঁত কেলিয়ে হাসছে এবং হাত উচিয়ে এই ধরনের স্লোগান দিতে উৎসাহীত করে। যারা এধরনের স্লোগান দিচ্ছে তার কত বড় সাম্প্রদায়িক শক্তি? রাজনীতি করেন কােন আপত্তি নাই, কিন্তু পায়ে পাড়া দিতে আসবেন না। আপনাদের পায়ে কিন্তু অত শক্তি নাই। আরা আমাদের পা, জণগণের পা প্রচন্ড শক্তিশালী হীমালয় পর্বতের মত। এই জনগণের পায়ে যে শক্তি আছে, বুকে পাড়া দিলে কিন্তু উঠতে পারবেন না।
বিএনপি-জামাতের নিপিরণ ও অত্যাচারের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমাদের ৫২জন কর্মীকে সমাহীত করা হয়েছে, বাড়ি-ঘরে থাকতে পারি নাই, আমাদের বাড়ি-ঘরে হামলা করা হয়েছে, সেলিম ওসমানের ফেক্টরিতে হামলা করা হয়েছে, বোবা প্রাণীদের দুধের বান কেটে দেওয়া হয়েছে। আমরা সব ভুলে ক্ষমা করে দিয়েছি, আমরা ধৈর্য ধরেছি। কারণ আল্লাহ ধৈর্যশীলকে পছন্দ করেন। আমাদের সেই দিনের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিবেন না। এখনো মাঝে মাঝে লাশগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা মানুষ, রোবট না। সব কিছুর একটা সীমা আছে, সীমা লঙ্ঘন করবেন না। ওই শহীদ মিনারে দাড়িয়ে কিছু আম-বাম, সুশীল-আতেল আমাকে সারাদিন গালি দেয়। আমি এগুলোতে কিছু মনে করি না। কিন্তু কিছু প্রশ্নেতো আর আপষ করতে পারি না। বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ-শেখ হাসিনা এই প্রশ্নেতো আপষ করতে পারি না।
অধ্যাপক ড. শিরিন বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সামসুল হক ভূইয়া ও স্বাচীপের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী বীরু সহ অন্যান্যরা।