বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসামনের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পরিবহন শ্রমিক, অটোরিকশা চালক, নৌকার মাঝি ও অসহায় নারী সহ মোট ২৭০০ পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে ৫৪ হাজার কেজি চাল বিতরন করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট তিন দফায় মোট ১৮ হাজার ২০০ পরিবারের মাঝে ২ লাখ ৩৪ হাজার কেজি চাল বিতরন করা হয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে পরিবহন শ্রমিক যারা আছেন তারা বছর ভরে গাড়িতে উঠার আগে সমিতির জন্য থেকে চাঁদা গ্রহন করা হয়েছে। সেই বিশাল অংকের টাকা এখন কাদের কাছে। কেন গত ১ মাসে এই সকল শ্রমিকদের কোন খোঁজ নেওয়া হলো না। আমি সেই সকল নেতাদের উদ্দেশ্যের বলতে চাই যদি ঈদের আগে শ্রমিকদের সন্তোষ্ট না করা হয় তাহলে ঈদের পর থেকে আর কোন সমিতি থাকবে না। শ্রমিকদের মাধ্যমেই পরিবহন গুলো পরিচালিত হবে। প্রয়োজনে দুদকের মাধ্যমে এসব তদন্ত করা হবে।
শনিবার ৯ মে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কলেজের মাঠ প্রাঙ্গনে শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের মাধ্যমে ২৭০০ পরিবারের মাঝে ৫৪ হাজার কেজি চাল বিতরনের পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জ বাণিজ্যিক নগরী। এখানে ভাসমান মানুষের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন। লকডাউন ঘোষণার পর শ্রমিকেরা পায়ে হাটে যার যার জেলা শহরে চলে গেল। যখন বেতন দেওয়ার কথা শুনলো তখন আবার পায়ে হেটে নারায়ণগঞ্জে চলে আসলো। এই যাওয়া আসার মাঝ পথে তারা করোনা বহন করে নিয়ে আসলো। যার ফলে নারায়ণগঞ্জ করোনা ভাইরাসের রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হলো। আমি গার্মেন্টস শ্রমিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ রাখবো ঈদের ছুটিতে আপনারা নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন। আপনারা যার যার বাসায় থাকবেন। ঈদে খুব সংক্ষিপ্ত আকারে ছুটি প্রদান করা হবে।
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যারা পরিবহনের সাথে জড়িত তারা একদিক থেকে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার কাজেও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকেন। আজকে পরিবহন বন্ধ থাকায় মানুষ আপনাদের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। কিন্তু আমি হতবাক হয়েছি আপনারা গাড়িতে উঠার আগেই আপনাদের সমিতির নেতারা একটা চাঁদা আদায় করতেন শ্রমিকদের কল্যানের নামে। আজকে সেই বিশাল অংকের টাকা কোথায়? কেন আপনাদের পাশে তাঁরা দাড়ালেন না। যদি ঈদের আগে শ্রমিকদের সন্তোষ্ট না করা হয় তাহলে এই বিষয়টি দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আর পরিবহন শ্রমিকদরে মাধ্যমেই পরিবহন গুলো পরিচালিত হবে। আর আপনারাও শহরের যেখানে সেখানে বাস গুলো রেখে সাধারণ মানুষের কষ্ট দিবেন না। প্রয়োজনে লিংক রুটে মাঠ ভাড়া নিয়ে সেখানে বাস গুলো রেখে পরিবহন পরিচালনা করবেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা দুটি ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। আমাদের দুই জনের দল ভিন্ন হলেও আমাদের মতাদর্শ এক, আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শামীম ওসমান এবং আমি পরামর্শ করে একে অপরের সহযোগীতা এবং দিক নির্দেশনা মোতাবেক সাধ্যমত জনগনের পাশে থাকার চেষ্টা করে চলেছি। খানপুর ৩০০ শয্যা(করোনা) হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে এখানে শামীম ওসমানের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। শামীম ওসমানের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল এবং সিদ্ধিরগঞ্জে পৃথক দুটি নমুনা সংগ্রহ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমরা একে অপরের সহযোগীতা নিয়ে আরো সুন্দর ভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করবো।
বন্দর ও নবীগঞ্জ খেয়াঘাটের মাঝিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমানে গার্মেন্টস গুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করছে। এতোদিন যা হয়েছে সেটা হয়ে গেছে এখন থেকে আপনারা কোন অবস্থায় নৌকায় বাড়তি চাপ নিবেন না। আপতকালীন সময়ে আপনারা প্রতিজন যাত্রী থেকে ৫ টাকা করে ভাড়া নিবেন আর ৮জনের বেশি যাত্রী তুলবেন না। অফিস টাইমে ১০জন যাত্রী নিবেন। আর বন্দর সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে আজ থেকে ট্রলার গুলো চালু করা হবে এবং প্রতিবছরের ন্যায় পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে ঈদের দিন পর্যন্ত ট্রলার গুলো ফ্রি পারাপারের ব্যবস্থা করবে।
বিতরন করা ২৭০০ প্যাকেট মধ্যে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের শ্রমিকদের জন্য ৮০০ প্যাকেটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, ও জেলা যুবসংহতির আহবায়ক রাজা হোসেন রাজু, নারায়ণগঞ্জ ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের ৪০০ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম রাফেল ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, খানপুর মেট্রোহল স্ট্যান্ডের জন্য ৩০০ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন ও শ্রমিক পার্টির আবু তাহের, বন্দর ঘাটের জন্য ২৭৫ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইমন ও মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, নবীগঞ্জ ঘাটের জন্য ৭৫ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পদাক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, অসহায় নারীদের জন্য ৭০০ প্যাকেট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহিলা পার্টির নেত্রী পলি বেগমকে। সার্বিক তত্ত্ববধানে থাকবেন মহানগর আওয়ামীলীগের সদস্য এহসানুল হাসান নিপু, ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না।
চাল বিতরন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, মহানগর আওয়ামীলীগের নেতা এহসানুল হাসান নিপু, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু, মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ঈমাইল রাফেল প্রমুখ।
উল্লেখ্য এমপি সেলিম ওসমান তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ ও ৩১ মার্চ প্রথম ধাপে তার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন সদর ও বন্দরের ৭টি ইউনিয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ১৩ হাজার পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চাল করেছেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপে ৩০ এপ্রিল প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যু বাষির্কী উপলক্ষ্যে বন্দর এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ২৫০০ পরিবারের প্রত্যেককে ২০ কেজি করে ৫০ হাজার কেজি চাল বিতরন করেছেন। তৃতীয় দফা ২৭০০ পরিবারের মাঝে ৫৪ হাজার কেজি চাল সহ সর্বমোট ২ লাখ ৩৪ হাজার কেজি চাল বিতরন করা হলো।
এছাড়াও চলতি রমজান মাসে করোনা সংকট মোকাবেলায় তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। যার মধ্যে তার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন ৭টি ইউনিয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি ওয়ার্ড এলাকায় ২০ হাজার পরিবারের মাঝে প্রত্যেককে ২০ কেজি চালের সমপরিমান ৯০০ টাকা করে মোট ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিকাশ একাউন্টে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার জন্য প্রতিটি কাউন্সিলর এবং চেয়ারম্যান মেম্বারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানকারী ডাক্তার নার্সদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০ লাখ টাকা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। বাকি ২৮ লাখ টাকায় প্রতিটি কাউন্সিলর এবং চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় ২০জন করে শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী মোট ৬০০জনকে সেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কর্মসূচী চলমান রয়েছে। যাদের প্রত্যেককে ৪৫০০ টাকা করে সম্মানী ভাতা প্রদান করা হবে।
ইতোমধ্যে জনপ্রতিনিধিদের মাধম্যে ১১ হাজার পরিবারের মাঝে ৯০০ টাকা করে ৯৯ লাখ টাকা পৌছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা ডাক্তারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের হাতে ২০ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করেছেন এমপি সেলিম ওসমান। এর বাইরে নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের খাওয়ার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৯লাখ টাকা ব্যয় এমপি সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহিবল থেকে বহন করা হচ্ছে। যা আগামী জুন মাস পর্যন্ত বহন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।