বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, আমি একটা জায়গাতেই ব্যর্থ হয়েছি। বার বার আহবান জানানোর পরেই আমি নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মহল, আইনজীবী সমিতি, ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের একত্রে বসাতে পারেনি। অপরদিকে সকল জনপ্রতিনিধিদেরকেও এক টেবিলে বসাতে পারিনি। আমি গত ২২ বছর যাবত বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। নারায়ণগঞ্জে আমার ৮টি জাতীয় ভিত্তিক ও ৩৩টি জেলা ভিত্তিক সংগঠন একটি প্লাটফর্মে এসে কাজ করে যাচ্ছি এবং আমাদের মাঝে কোন বিভেদ বা মতবিরোধ নেই। যদি ব্যবসায়ী মহল, আইনজীবী সমিতি এবং প্রেসক্লাব একসাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কাজ করে তাহলে একটি শহরের যেকোন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। পাশাপাশি যদি নারায়ণগঞ্জের সকল জনপ্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে কাজ করে তাহলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন এবং জনগনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে একজনের সাথে অপরজনের ব্যক্তিগত বিরোধ থাকতে পারে। রাজনৈতিক মাঠে সেটা যেকোন জায়গায় করা যেতে পারে। কিন্তু জনগনের কল্যাণে উন্নয়নের স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে একত্রে কাজ করতে কোন বাধাঁ আছে বলে আমি মনে করি না।
সোমবার ১৯ ফেব্রæয়ারী বিকেল ৪টায় শহরের নারায়ণগঞ্জ-পাগলা-ঢাকা রুটে অবস্থিত জেলা পুলিশ লাইনস এলাকায় জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক এর কাছে পিকাপভ্যান ৬টি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রতি আহবান রেখে বলেন, আলোচনায় অনেক সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব। নিতাইগঞ্জে দীর্ঘদিনের সৃষ্ট দুর্ভোগের সমস্যা আমরা আলোচনার টেবিলে বসেই সমাধান করতে পেরেছি। নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালকে আলোচনার মাধ্যমে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আলোচনার হয়ে ছিলো বলেই নারায়ণগঞ্জে এখন আর গার্মেন্টস গুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ নেই। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে শিল্প পুলিশের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। আলোচনার মাধ্যমে আমরা হকার সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধান করতে পারবো বলে আশা করছি। তাই আমি সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ রাখবো জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার, বিকেএমইএ, ইর্য়ান মার্চেন্ট সহ আলোচনার জন্য বেশ কয়েকটি সম্মেলন কক্ষ রয়েছে। আপনারা যখন যেখানে খুশি আলোচনার বসতে পারেন। নিজের মাঝে কোন ভুল বুঝাবুঝি থাকলে তা দরজা বন্ধ করে শেষ করে নারায়ণগঞ্জের সমস্যা গুলো সমাধান এবং উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে সহযোগীতা করুন। একটি সুন্দর ও আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সহযোগীতা সব থেকে বেশি প্রয়োজন।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, একটা সময় নারায়ণগঞ্জ পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু আদমজী, বাওয়া জুট মিল, ল²ী নারায়ণ, চিত্তরঞ্জন, আর্দশ, ঢাকেশ্বরী মিল বন্ধ করার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে নীটওয়্যার ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা নীটওয়্যারে এগিয়ে যাচ্ছি এবং পন্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছি। হোসিয়ারী থেকেই নীটওয়্যারের সৃষ্টি। আর হোসিয়ারী শিল্পের জন্ম এই নারায়ণগঞ্জেই। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেএমইএ এর সকল কার্যক্রম নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীক করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে বিকেএমইএ চাষাঢ়ায় খাজা সুপার মার্কেটের পেছনে জমি কিনে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। জমি কেনার সময় আমরা সেখানে ১৬ ফুটের রাস্তা দেখলেও এখন দেখতে পাচ্ছি আসলে রাস্তা নেই। কখনো শুনি এটা ব্যক্তি মালিকানার জায়গা, কখনো শুনি সিটি কর্পোরেশনের, আবার কখনো শুনি রাজউকের জমি। এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করি এবং জমিটির কেনার জন্য আবেদন করলে রাজউক থেকে বিকেএমইএকে টেন্ডারের মাধ্যমে জমিটি বিক্রি করার কথা বলেন। বিকেএমইএ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ১৫ কোটি টাকা ইজিএম এর করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা নির্মাণ কাজে ৩ কোটি টাকা ব্যয় করে ফেলেছি। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন একটি মামলা দায়ের করে সমস্ত কিছু আটকে রেখেছে। বিকেএমইএ শুধু একটি সংগঠন নয় এটি সমস্ত দেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির একটি অংশ। আমরা লিখিতভাবে মেয়রের কাছে আবেদন করবো হয়তো দেশের অর্থনীতি এবং নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের স্বার্থে বৈধ উপায় ওই জমিটুকু বিকেএমইএকে পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন নয়তো জমিটি আপনাদের প্রয়োজন হলে বিকেএমইএ এর কাছ থেকে কিনে নিয়ে যান ক্ষতিপূরণ সহ।
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেকের কাছে এটা নির্বাচনের বছর। কিন্তু আমি সেটা মনে করি না। একজন জনপ্রতিনিধিদের কোন নির্বাচনী বছর নেই। নির্বাচন হতে এখনো অনেক সময় বাকি। জনগনের জন্য এখনো অনেক কিছু করার রয়েছে। আমি বহুবার বলেছি আগামী জুন মাসের ৩০ তারিখে আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবো নির্বাচন করবো কিনা। ইতোমধ্যে অনেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য বেড়াচ্ছেন সব জায়গায় নৌকা চাই। আমি বলবো শুধু নৌকা চাই বললেই হবে না। আসলে মার্কা কি সেটা বড় কথা নয়। এলাকার উন্নয়নটাই মূখ্য বিষয়। বন্দরের মানুষে সেই বৃটিশ আমল থেকে নৌকা করে নদী পারাপার হচ্ছে। আমরা ফেরী সার্ভিসের ব্যবস্থা করছি। রাস্তা হয়েছে কিন্তু দপ্তরে ফাইল নড়তে চায় না। আমরা সেখানে আরেকটি সেতু নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে শীতলক্ষ্যা সেতু-৩ এর কাজ চলছে। শান্তিরচরে নীটপল্লী সহ সকল শিল্পকারখানার মাধ্যমে বৃহৎ অর্থনৈতিক জোন নির্মাণের কাজ চলছে। লাঙ্গলবন্দে মেগা প্রকল্প করা হচ্ছে, ৭টি ইউনিয়নে ৭টি স্কুল নির্মাণ সহ গ্রামীন অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। সব শেষে বলবো নির্বাচন যখন হবে তখন হবে। যতটুকু সময় আছে সবাই মিলে একত্রে এলাকার উন্নয়নে অংশীদার হোন। সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলে কাজ করুন। বন্দরে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বেশ কয়েকটি ভাল রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে রাস্তার মাঝ থেকে বিভিন্ন স্থাপনার কারণে উন্নয়নের সঠিক ব্যবহার ব্যাহত হচ্ছে। ওই সকল সমস্যা গুলো সমাধানে সহযোগীতা করুন।
কারো নাম উল্লেখ না করে নিজেকে নিয়ে করা একটি মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেকে বলেন আমি বিদেশে টাকা পাচার করছি। আমি বলবো না জেনে কোন কথা বলা ঠিক না। যান আমার ব্যাংকের দরজা খুলে দিলাম, আমি বিদেশে টাকা পাচার করেছি নাকি বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা এনেছি একটু হিসেবটা দেখে আসুন। কত রেমিট্যান্স জমা হয়েছে আমার একাউন্টে। লাভের হিসেবটা আপনারাই নির্ধারণ করে দিবেন। আমার পরিবারের ছেলে বিয়েতে কত কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সেটা নিয়ে কথা বলাও আপনার ঠিক নয়। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের যেমন দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমি মনে করি ঠিক তেমনি সকল জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। অযথা কান কথা শুনে অপরাজনীতিকে উস্কে দেওয়া ঠিক নয়। তার থেকে ভাল হবে ভবিষ্যত উন্নয়ন নিয়ে পরিকল্পনা করা। শহরের বেশ কিছু স্থানে ফুটওভার বিজ্রের প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশাপাশি বিকল্প রাস্তা চালু, যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, চারারগোপ এলাকায় রেলওয়ের বিশাল জমি রয়েছে সেখানে বাসস্ট্যান্ডটি স্থানান্তর করা যায় কিনা সেটি নিয়ে কাজ করা, ডাবল রেললাইন, সাংস্কৃতিক চর্চায় শিল্পকলা একাডেমী, নগরবাসীর উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল কলেজ নির্মাণ, ভবিষ্যত প্রজন্মকে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে একটি উন্নত মানের বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ সহ বহু কাজ করা বাকি রয়েছে। প্রয়োজনে সবার সাথে আলোচনার বসে সেগুলো সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করুন। আমি বহুবার আহবান জানিয়েছি। আবারো আহবান জানাচ্ছি। পাশাপাশি বলবো যদি উন্নয়নের স্বার্থে আমার কোন সহযোগীতার প্রয়োজন হয় আমাকে ডাকা হলে আমি অবশ্যই সহযোগীতা করবো। এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই আওয়ামীলীগের জন্ম ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছে। যুদ্ধে বিজয় লাভের পর আমার বাবাই প্রথম রেডিওতে ঘোষণা দিয়ে ছিলেন। এই নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমার দাদা বাবা ও ভাইয়ের অপরিসীম ভালবাসা দিয়েছেন। সেই অর্থে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য আমার অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের সব ধরনের সহযোগীতা করতে প্রস্তুত আছি। আমাকে যখন ডাকা হবে আমি উপস্থিত হবো। এক্ষেত্রে অনেকের অভিযোগ আমার সাথে নাকি দেখা করা কঠিন। ডাকলে পাওয়া যায় না। আমি বলবো আমি একজন জনপ্রতিনিধি হওয়ার পাশাপাশি দেশের একটি বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন পরিচালনা করছি। দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছি। তাই আমাকে হাতে একদিন সময় রেখে ডেকে আপনাদের ডাকা সাড়া দিয়ে আপনাদের সাথে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিবেন।
জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিকেএমইএ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল হক, পরিচালক আবু আহম্মদ সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, সহ সভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, বিকেএমইএ প্রথম সহ সভাপতি মনসুর আহম্মেদ, দ্বিতীয় সহ সভাপতি ফজলে এহসান শামীম, সহ সভাপতি (অর্থ) হুমায়ন কবির খান শিল্পী, পরিচালক জিএম ফারুক সহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।