বিজয় বার্তা ২৪ডেস্ক
১১ ফ্রেরুয়ারী সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি খুন হয়েছিল নিজেদের বেড রুমে।গত চার বছরে মামলার সমাধান তো দূরের কথা খুনের ক্লু পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারেনি দেশের কোন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাগর-রুনি খুনের বিচার প্রসঙ্গে সাগরের মা সালেহা মনির সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন ২৪ ঘণ্ট-৪৮ ঘণ্টা, সাল, বছর না কত যুগ লাগবে? মসনদ রক্ষা, পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার কন্টক পথ পাড়ি দিতে সরকার নিজেই এত ব্যাস্ত যে সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার তো দূরের কথা,সাগর-রুনির একমাএ সন্তান মেঘকে দেয়া ওয়াদা পর্যন্ত এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী রক্ষা করতে ব্যার্থ হয়েছে সেখানে বিচার পাওয়া তো সুদূর পরাহত।
সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের প্রায় সপ্তাহ দুয়েকের পরে সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আমার একটি লেখা একটি জাতীয় গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল “মেঘের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা”। মেঘের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম তার পিতা-মাতা হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সরকারের ব্যর্থতার জন্য। মেঘের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম সাহারা খাতুনের ৪৮ ঘণ্টা, ৭ দিনের মাথায় মামলার মনিটরিং দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী কাধে নেয়া, চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড হওয়া সত্বেও মরদেহের ভিসেরা না করা, প্রধানমন্ত্রীর বেডরুম তত্ত্ব এবং সব মিলিয়ে সরকারের লুকোচুরি জন্য। আরো ক্ষমা চেয়েছিলাম চলমান জীবন নতুন কোন ইস্যু সামনে এলে মেঘকে ভুলে যাব বলে।
সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ৪৮ ঘণ্টা, আইজিপির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মনিটরিং এত কিছুর পরেও মহামান্য উচ্চ আদালত পুলিশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিকে বোগাস ও জিরো বলে অবহিত করেছিলেন। পুলিশের কর্মকান্ডের সমালোচনা করে মহামান্য উচ্চ আদালত র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব ভার দেয়। র্যাব দায়িত্ব পেয়ে পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে ২০১২ সালের মে মাসে লাশ উত্তোলন করে ভিসেরা ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা আমেরিকায় পাঠায়। দেশের মানুষ র্যাবের দায়িত্ব নেয়াটাকে আশার আলো মনে করেছিল। কিন্তু ডিএনএ রিপোর্ট ও র্যাবের সাড়ে তিন বছরের তদন্ত ফল দেখেও আবার নিরাশ হয় সাগর-রুনির পরিবার ও দেশবাসী।
পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব নেয়া আরেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম. খা. আলমগীর দায়িত্ব নিয়েই হত্যাকারীদের সনাক্ত ও রহস্য উন্মোচন করার জন্য ১০ দিনের প্যাকেজ ঘোষণা করেন। ঘোষণার ৮ দিন পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দেন হত্যাকারীদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করা গেছে। মহাখালীতে ডাঃ নিতাইকে হত্যাকারী গ্রীলকাটা চোরের দলই সাগর-রুনিকে হত্যা করেছে। কিন্তু এর পরে মন্ত্রী মহোদয় কিংবা তদন্তকারী দল কেউই আর মুখ খুলে কিছু জানাননি। গ্রেফতারকৃতরা সাগর-রুনি হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে স্বীকারোক্তি কিংবা কোন তথ্য দিয়েছে কিনা? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাটকীয় ঘোষনা ও ফলাফল হিসাবে অশ্বডিম্ব প্রাপ্তি সবই ফালতু বলে মনে করেন সচেতন মানুষ। সবার ধারনা সরকারই কেন জানি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন থেকে সরে গেছে। সাগর-রুনির মামলার ফাইলে ধুলোর স্তর যথারীতি মোটা হচ্ছে। মেঘের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত পুলিশ ও প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীতো মেঘের উন্নত জীবন কিংবা তার পিতা-মাতা হত্যাকান্ডের বিচারের ব্যবস্থা করেননি, উল্টো হত্যাকান্ডের একমাত্র চাক্ষুস সাক্ষী মেঘের নিরাপত্তা বেষ্টনী পর্যন্ত তুলে নিয়েছেন। তাহলে তো ধরেই নেয়া যার সরকার সাগর-রুনির হত্যাকান্ড ও মেঘের কষ্টের জীবন ভুলে গেছে।তবে আমাদের ভাগ্য ভাল যে,বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সাহেব সাগর রুনির হত্যাকান্ড নিয়ে কোন প্যাকেজ ও তত্ব ঘোষনা করেননি।
এক সময় সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা পর্যন্ত মুখে ফেনা তুললেও সদিচ্ছার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি কখনো। হত্যাকান্ডের প্রায় চার বছর হলেও কোন ক্লুই পাওয়া না যাওয়ায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন তাহলে সাগর-রুনিকে কি কোন পৃথিবীর বাইরে থেকে কোন এলিয়েন এসে হত্যা করে আবার ভিন গ্রহে ফিরে গেছে? তা না হলে আসামী না হয় ধরা গেল না, সরকার এই হত্যাকান্ডের টিকিটিও ছুতে পারছে না কেন? নাকি সরকারের ঘনিষ্ট কেউ এই হত্যাকান্ডে জড়িত বলেই অন্যানা হাজারো মামলার মতো করুন পরিনতির জন্যেই পরিকল্পিতভাবে সময় ক্ষেপন করা হচ্ছে ভুলে যাওয়ার জন্য। জংগী থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধী গ্রেফতারে সাফল্য ও বিরোধী দলের তথাকথিত বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের তথ্য নিমিষে আবিস্কার করতে পারলেও সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের মিনিমাম তথ্যও র্যাাব উদ্ধার করতে না পারাটা আশ্চর্যজনকই বলেই মনে করে দেশবাসী।
খুনের সময় সাগর-রুনির সেল ফোন ও সাগরের ব্যবহৃত ল্যাপটপটি খুনিরা নিয়ে যায় এবং হত্যাকান্ডের দিন দুয়েক পর সাগর সম্পাদিত এনার্জি বিষয়ক অনলাইন পোর্টাল থেকে সব তথ্য মুছে দেয় একটি চক্র। কিন্তু কোন তদন্তকারী দলই এ পর্যন্ত সেল ফোন দুইটি ট্র্যাক করার কিংবা কিভাবে অনলাইন পোর্টালটি মুছে দিল তা জানার চেষ্টা করেননি। বর্তমানে আইটি বিশেষজ্ঞরা চাইলেই জানতে পারতেন কোন আইপি থেকে সাগরের ওয়েব সাইটটি মুছে দেয়া হয়েছে। আর এভাবেই সম্ভব হতো খুনিদের সনাক্ত করা। তাছাড়া সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পরে তাদের ভিসেরা পর্যন্ত পরীক্ষা করেনি পুলিশ। অথচ মফস্বলের খুনের পর্যন্ত পোষ্ট মোর্টমের পরেই ভিসেরা পরীক্ষার জন্য শরীরে বিশেষ অঙ্গ প্রতঙ্গ মহাখালীতে পাঠায়। তবে সাগর-রুনির মত চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডে কেন পুলিশ ভিসেরা পরীক্ষা করলো না? তবে কি বলা যায় না সাগর-রুনিকে যারা হত্যা করেছে ও করিয়েছে তারা প্রথম দিন থেকেই তদন্তের গতি হাতে নিয়ে নিয়েছে? তবে তো ধরেই নেয়া যায় সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনে সরকার আন্তরিক নন। আন্তরিক হলে এত গোজামিল কিংবা লুকোচুরি থাকতো না।
সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পরে বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত সাংবাদিক সমাজ এক কাতারে দাড়িয়ে বিচারের দাবী করলেও এখন বাৎসরিক স্বরন সভায় তা সীমিত হয়েছে। যথারীতি অদৃশ্য শক্তির ইশারায় সরকার পন্থীরা বিচারের দাবীতে এখন আর তেমন সক্রিয়ও নেই।
সাগর-রুনির প্রতি সীমাহীন অবহেলা আর লুকোচুরি, মেঘকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা খেলাপ, মেঘের নিরাপত্তার নিয়োজিত পুলিশ প্রত্যাহার করায় মেঘের কাছে আবারো ক্ষমা চাই। মেঘ তুমি হয়তো বড় হয়ে যখন বুঝতে পারবে তার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের খুজে বের করতে লুকোচুরি হয়েছে। তোমাকে দেয়া ওয়াদা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ভঙ্গ করেছে, তখন যেন ভয়ে শিউরে না উঠো কোন দেশে তুমি বেড়ে উঠেছে? তোমার যেন মনে হয় সরকার তোমার সাথে প্রতারনা করলেও দেশবাসী তোমার সাথে ছিল, তোমার পিতা-মাতার সহকর্মীরা তোমার সাথে ছিল। তাই দ্বিতীয় বারের মত তোমার কাছে আমাদের ক্ষমা প্রার্থনা। সাগর-রুনি তোমরা বেচেঁ থাকবে আমাদের অসহায়তে¦র প্রতীক হয়ে,তোমরা বেচেঁ থাকবে সরকারের লুকোচুরি খেলার প্রতিবাদ হয়ে, সাগর-রুনি তোমরাই প্রমান করবে বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ! খুনি বা গডফাদার না হোক কমপক্ষে ক্লু উন্মোচন করাটা এখন দেশবাসীর দাবী।
লেখক : মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ
১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, নাসিক
আহবায়ক-নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল