লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল,বিজয় বার্তা ২৪
শব্দদূষণ একটি নীরব ঘাতক। কোনো শব্দ যখন আমাদের কাছে অসহনীয় কিংবা বিরক্তিকর বলে মনে হয় তখনই তাকে শব্দদূষণ বলে। প্রতিদিন শব্দদূষণ বাড়ছে, ফলে জন- জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে, অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শব্দদূষনের ফলে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, উৎকণ্ঠা, মানসিক ভীতি এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও শব্দদূষণের ফলে অস্থিরতা, স্নায়ুচাপ, গ্যাস্ট্রিক, ক্ষনস্থায়ী রক্তচাপ বৃদ্ধি, রক্তের উচ্চচাপ, হৃদরোগ, শ্রবনশক্তি হ্রাস, নিদ্রাহীনতা, ডায়াবেটিস, রক্ত সরবরাহ সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। শব্দদূষণের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা ও গর্ভবর্তী মায়েরা। শব্দদূষণের মধ্যে বড় হওয়া শিশুর মানসিক বিকাশ সুস্থ ও স্বাভাবিক হয় না। গর্ভবর্তী মায়ের উচিত শব্দদূষণ এড়িয়ে চলা। কেননা শব্দ দূষণের ফলে গর্ভের সন্তানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা অনেক সময় জন্ম- পরবর্তী সারাজীবন শিশুটিকে বয়ে বেড়াতে হতে পারে। শব্দদূষণ বর্তমানে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ একটু সচেতন হলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব।
শব্দদূষণ রোধে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
১। শব্দদূষণ আমাদের জন্যে কতটা ক্ষতিকর সে বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরী করতে হবে।
২। গাড়ীর চালককে অযথা হর্ণ বাজাতে নিষেধ করতে হবে।
৩। নিজেরা গাড়ী চালানোর সময় হর্ণ কম বাজাতে হবে এবং ট্রাফিক সিগন্যালে বা জ্যামে অযথা হর্ণ বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪। রাস্তায় চলাচলের উপযুক্ত ও যান্ত্রিক ত্রুটিমুক্ত গাড়ী ব্যবহার করতে হবে।
৫। ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ী চালাতে হবে।
৬। গাড়ীর হর্ণ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে প্রয়োজনে নতুন আইন করতে হবে।
৭। প্রশিক্ষিত ও দক্ষ চালক দ্বারা গাড়ী চালাতে হবে।
৮। প্রচারণামূলক কাজে মাইকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৯। শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
১০। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে।
১১। নতুন কলকারখানা স্থাপনে শব্দদূষণ যাতে না বাড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে।
১২। মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতে গাড়ীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১৩। ট্রাফিক পুলিশের যথাযথ দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ ও সুযোগ-সুবিধা এবং দায়িত্বে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
১৪। শব্দদূষণের ক্ষতি এবং তা থেকে উত্তরণের বিষয়টি পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১৫। নগরীতে আবাসিক বাসাবাড়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল আলাদা আলাদা এলাকায় নিদিষ্ট জায়গায় তৈরী করতে হবে।
১৬। সকল কলখারখানা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে স্থাপন করতে হবে।
১৭। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠা ও ড্রাইভিং ট্রেনিং ব্যবস্থার উন্নয়নে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
১৮। ট্রাফিক পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএকে সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বর্তমানে শব্দদূষণ এক ভয়াবহ সমস্যা। তবে আমরা সচেতন হলে শব্দদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। এই বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের অধিক সচেতন এবং তৎপর থাকা উচিত।