রণজিৎ মোদক,বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম : নারায়ণগঞ্জের শস্য ভান্ডার বলে খ্যাত ফতুল্লা থানাধীন নদী ঘেরা বক্তাবলীতে একটি পুলিশ ক্যাম্পের দাবি দীর্ঘদিনের। এটি ছন্নছাড়া একটি দ্বীপ এলাকা। সম্প্রতি ঐ এলাকায় বখাটে ও মাদক সেবীদের উপদ্রব্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। চুরি, ছিনতাই, অসামাজিক কার্যকলাপসহ দুর্নীতির আকড়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সারা বাংলাদেশে। এই এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস থাকা সত্ত্বেও নেই কোনো নিরাপত্তা। যেখানে লক্ষাধিক লোকের বসবাস সেখানে কেনো নিরাপত্তা নেই? প্রশ্নটা সাধারণ মানুষের।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী বেষ্টিত একটি চর এলাকা বক্তাবলী ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নটি ফতুল্লা থানার অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা খারাপ হওয়ায় ফতুল্লা পুলিশের নজরের বাহিরে বললেই চলে। তবুও ফতুল্লা থানা পুলিশ তার যথা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যায় এই এলাকার মানুষদের নিরাপত্তার স্বার্থে। সারাদেশে মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকদ্রব্য থেকেও রেহাই পায়নি এই ঐতিহ্যবাহী বক্তাবলী ইউনিয়ন। যার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা আজ পর্যন্ত কেউ করেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশে যে কয়টি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বক্তাবলী তার মধ্যে অন্যতম। নারায়ণগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চল ধলেশ্বরীর পাড় ধরে বক্তাবলীর বাইশটি গ্রাম। বক্তাবলী ও আলীরটেক দুটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে বক্তাবলী পরগনা। বক্তাবলীর পূর্বে ও দক্ষিণে ধলেশ্বরী আর উত্তরে বুড়িগঙ্গা নদী। এই ইউনিয়নে রয়েছে প্রায় ১ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। কিন্তু নিরাপত্তার বালাই নেই এই বক্তাবলী ইউনিয়নে। এখানে একটি নৌ পুলিশ ফাঁড়ি আছে। নৌ পুলিশরা জলে নিরাপত্তা দেয় তাহলে স্থলে দেবে কে? এমন প্রশ্ন বক্তাবলী ইউনিয়নের প্রত্যেকটি মানুষের।
জানাযায়, বক্তাবলী ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধে এক রাত্রে গনহত্যার শিকার হন প্রায় ১৩৯ জন মুক্তিকামী। দেশের এতো বড় উদ্যোগে যারা সবসময় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন তারাই আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে। সারাদেশের মতো বক্তাবলী ইউনিয়নেও মাদকের কড়াল ছোবলে যুব সমাজ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এই দ্বায়ভার কে নিবে? এমন প্রশ্নে ফাঁপিয়ে উঠেছে বক্তাবলীর মানুষের মন। একটি পুলিশ ফাঁড়ির আবেদন বক্তাবলী ইউনিয়নের সর্ব সাধারণ মানুষের।
এ বিষয়ে বক্তাবলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ শওকত আলী জানান, বক্তাবলী সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য একটি পুলিশ ফাঁড়ির খুব প্রয়োজন। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তবে একটি স্থায়ী জায়গার অভাবে পুলিশ ফাঁড়ি করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বক্তাবলীতে ৮ থেকে ৯ লক্ষ টাকা শতাংশ হিসাবে জমি বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে দাম বেশি হওয়াতে নিজস্ব অর্থায়নে জমিক্রয় সম্ভব হচ্ছে না।
একটি সূত্রে জানাযায়, বক্তাবলীতে প্রচুর পরিমান সরকারী খাস জমি আছে। কিন্তু পুলিশ ফাঁড়ির জন্য ১০ শতাংশ জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। খাসের জায়গা গুলো এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ইট খোলার মালিকরা অবৈধভাবে দখল করে ফায়দা লুটছে। এছাড়াও বিগত এরশাদ আমলে প্রসন্ননগর গুচ্ছ গ্রামে দুস্থদের মাঝে সরকারী খাসের জমি ৫ বিঘা করে বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সমস্ত জায়গাগুলো এখন কাদের আয়ত্তে রয়েছে কিংবা কারা ভোগ করছে? অথচ লক্ষাধিক লোকের নিরাপত্তারর জন্য মাত্র ১০ শতাংশ খাসের জায়গাও মিলছে না।
এ ব্যাপারে বর্তমান সাংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান চাইলেই এ সমস্যা দূর করতে পারেন। তিনি চাইলেই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অনতি বিলম্বে একটি স্থায়ী পুলিশ করতে পারেন বলে এমনটাই দাবি করছেন সাধারণ মানুষ।