আনিসুজ্জামান অনু,বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সপ্তাহ-মাস-বছর পেরিয়ে গেলেও অনেক নিখোঁজ ব্যাক্তির সন্ধান দিতে পারছে না পুলিশসহ কোন সংস্থাই। এ সকল নিখোঁজ ব্যাক্তির সন্ধানে পুলিশ কি ব্যর্থ নাকি আগ্রহ কম তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মাঝে। এমনি অবস্থায় সন্তানের খোঁজে মা,স্বামীর খোঁেজ স্ত্রী আর পিতার খোঁেজ সন্তানের মাঝে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এ্র মধ্যে কুতুবপুর নয়ামাটি এলাকার আবদুল হাকিমের ছেলে মাছ বিক্রেতা মাসুদ রানা এবং পশ্চিম ভোলাইল এলাকার স্বপন মল্লিকের ছেলে কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান ফয়সাল মল্লিকের নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকা সমালোচনার মুখে ঠেলে দিয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবত অসহায় পরিবারগুলো দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন উত্তর পাচ্ছে না, তাদের সন্তানেরা বেচেঁ আছে কি নেই ?
নিখোঁজ মাসুদ রানার বাবা আবদুল হাকিম বলেন, ‘গত ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট প্রতিদিনের মতো সকাল ৭টায় মাছ বিক্রির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। তারপর মাসুদের বন্ধু এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী আবদুর রশিদ মিথুনের ঘনিষ্ট সহযোগী লামাপাড়া এলাকার আবদুল করিম ওরফে কইরার ছেলে ডালিম মাসুদের স্ত্রী হাসিনা বেগমকে ফোন দিয়ে জানান রানাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু মাসুদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ডালিমের হাতে দেখতে পেয়ে সন্দেহ হয় হাসিনার। এছাড়াও ডালিমের অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে মাসুদের মা শাহিদা বেগম ও স্ত্রী হাসিনা আগস্ট মাসে ১২ তারিখে ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়রী করেন। পরে ১৪ তারিখ আবদুর রশিদ মিথুন,রফেদ আলীকে আসামী করে একটি অপহরণ মামলা করা হয়। যার নাম্বার ৪৫(১৪/৮/২০১৫ইং)। কিছুদিন পর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল বন্ধন কাউন্টারের সামনে থেকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সদর মডেল থানা পুলিশ ডালিমকে আটক করে। এছাড়াও আরো দুইজনকে পুলিশ আটক করলেও মিথুন জামিনে বের হয়ে যায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমার সন্তানের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ বছর ২ আগস্ট শিবু মার্কেট এলাকার সুমাইয়া বিরিয়ানী হাইজের সামনে থেকে মাদক সহ র্যাব-১১ মিথুনকে গ্রেপ্তার করে। আমরা চাই মিথুনকে র্যাব ও পুলিশ যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার ছেলে মাসুদের সন্ধান পাওয়া যাবে।
তারা এ ঘটনায় পুলিশের নির্লিপ্ততার অভিযোগ করলেও তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার বর্তমান সেকেন্ড অফিসার এসআই গোলাম মোস্তফা জানান,আসামীদের সঙ্গে তার সখ্যতার অভিযোগ সত্য না। এখন পর্যন্ত মামলায় ৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রয়োজনে মিথুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অপরদিকে প্রায় ৩ মাস যাবত নিখোঁজ রয়েছে কাশিপুর ভোলাইল এলাকার স্বপন মল্লিকের ছেলে ফয়সাল মল্লিক। এ ক্ষেত্রেও পুলিশী অবহেলার অভিযোগ করেছেন ফয়সালের পরিবার। অভিযুক্তরা প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের আটক করে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করছে না।
নিখোঁজ ফয়সালের পরিবার জানান,বন্ধুদের সাথে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) খেলায় বাজি ধরার পর গত ৩০ এপ্রিল রাত থেকে নিখোজ রয়েছে সে। এ ঘটনায় নিখোঁজ ফয়সালের মা বেগম ফাতেমা মল্লিক গত মে মাসের ২ তারিখে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ফয়সাল নিখোঁজ হওয়ার দিন পশ্চিম ভোলাইলের শফি বাজার এলাকার একটি চায়ের দোকানে বসে আইপিএল খেলায় বাজী ধরেছিলেন। এসময় তার সাথে আমির, মনির, শাহজাহান ও লিয়াকত নামের ৪জন ছিলেন।
থানায় অভিযোগের পর তার বাজি খেলার সহযোগি আমির (২৫) এর কাছে নিঁেখাজ ফয়সাল মল্লিকের মুঠো ফোনটি পাওয়া গেলে আমিরকে গ্রেফতার করেন তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার এস.আই নাহিদ-২। আটক হওয়া আমিরের তথ্য অনুযায়ি গ্রেফতার করা হয় বাজি খেলার আরো এক সহযোগি মনিরকে।
তবে মনিরকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর ওই এলাকার নির্বাচিত মেম্বার খোকা থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে আনেন তিনি। পরে ফয়সাল মল্লিকের পরিবার মেম্বারের স্বরনাপন্ন হলে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের তৎপরতা অনেকটাই সন্তোজনক থাকলেও মনিরকে গ্রেফতারের পরই খোকা মেম্বারের তৎপরতায় পাল্টাতে থাকে পুলিশের অবস্থান। এমনটাই অভিযোগ করলেন নিখোজের বড় বোন সানিয়া মল্লিক। তবে তদন্ত কর্মকর্তাএস.আই নাহিদ-২ ‘অভিযান চলমান রয়েছে’ বলে তার দায়িত্ব কোন রকম পাশ কাটানোর চেষ্টা করছেন।
সর্বশেষ ৮ আগস্ট বিসিক শিল্পনগরীর ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী সুজন মোল্লা নিখোঁজ হলেও পুলিশ তার কোন সন্ধান দিতে পারেনি। এ সময় তার কাছে নগদ আড়াই লাখ টাকা ছিল। সুজন মোল্লা ফরিদপুর আলফাডাঙ্গার গোপালপুরের গোলাম নবীর ছেলে। তারা বিসিক ভাঙ্গা ক্লাব এলাকায় হাজী আওলাদ হোসেনের বাড়ীতে বাড়া থাকে এবং ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা করে। ৮ আগস্ট সোমবার দুপুরে দোকান বন্ধ করে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে নারাযনগঞ্জ সিটি ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে। এ সময় তার মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়।
ফতুল্লা মডেল থানার এসআই আমির হোসেন জানান, সুজন মোল্লা নিখোঁজ সংক্রান্তে তার ভাই একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে তাকে অজ্ঞানপাটি অচেতন করে তার কাছে থাকা টাকা নিয়ে যায়। সুজনের মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে জানা গেছে ঢাকার কমলাপুর অবস্থান করছে। তাকে খুজে পাওয়া গেলে ঘটনার আসল রহস্য জানা যাবে।
আদর্শনগর জামিয়া তালিমিয়া মাদ্রাসার নুরানি বিভাগের ছাত্র আবু রায়হান নিখোঁজ রয়েছে গত কয়েকদিন পূর্বে। এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি দায়ের করেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুর রহমান ছিদ্দিক। যার নং-১৬১
অপরদিকে ২৮ জুলাই ভোরে নিখোঁজ হওয়া নুরে আলম আবিদ (২০) নামে এক প্রতিবন্ধি যুবকের সন্ধান এখনও মিলেনি। ফতুল্লা থানার তল্লা ছোট মসজিদ এলাকা গত ২৮ জুলাই বৃহস্পতিবার তার বাবা বশির উদ্দিনের সাথে মসজিদে ফজর নামাজ আদায় শেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেও অদ্যবধি বাড়ি ফিরে আসেনি। তার বাবা বশির উদ্দিন বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরী অর্ন্তভুক্ত করেছে। যার নং-২১ তাং-০১/০৮/১৬ইং।
এ ছাড়াও ২১ জুলাই নিখোঁজ হওয়া ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুরপাড় এলাকার মৃত আব্দুল হান্নান ওরফে শিরু মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম এখনো উদ্ধার হয়নি। এতে নিখোঁজের পরিবার উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে জীবনযাপন করছে।
স্ত্রী লাকী ভূঁইয়া জানায়, স্বামী রফিকুল ইসলাম বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকান পরিচালনা করে আসছিল। ২১ জুলাই বিকেল ৪টায় রফিকুল বাড়ি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজের দুইদিন পর রফিকুলের স্ত্রী লাকী ভূঁইয়া বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে নিখোঁজের পরিবারের পক্ষ থেকে এমনটাই অভিযোগ।
তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার এসআই জাফর আলী জানান,রফিকুলের মোবাইলের কললিস্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। চেষ্টা চলছে তার সন্ধান জানতে। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়, রফিকুল এর আগেও নিজে নিজে আত্মগোপন করেছিলেন। পরে চট্রগ্রাম থেকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন নিয়ে আসে।
