বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
দেশে গণতন্ত্র ছিল না, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই গণতন্ত্র এনেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ছিল না। জিয়াউর রহমান মনে করেছেন, হানাহানি না করে সবাই নিজ নিজ পার্টি করবে। যোগ্য ও ভালো লোক সবাইকে নিয়ে একটি দল করেছেন তিনি। দুর্বৃত্ত পীড়িত দেশে গণতন্ত্রসহ বহুদলীয় গণতন্ত্র আনলেন। সবাইকে সুযোগ দিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে বিএনপির ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীন দেশকে যেভাবে গড়ে তোলার কথা, সেসময়কার সরকার করতে ব্যর্থ হয়। এতে অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে নেমে এসেছে অরাজকতা। সৃষ্টি করতে হয়েছে রক্ষীবাহিনী। তখন দেশ নিয়ে কোনো চিন্তা ছিল না। তারা কেবল ভেবেছিলেন- আমরা ক্ষমতায় আছি, যা ইচ্ছে তাই করতে পারি।
খালেদা জিয়া আরো অভিযোগ করে বলেন, মুজিব সরকার দেশ থেকে গণতন্ত্র দূর করে বাকশাল কায়েম করলো। জিয়াউর রহমান আসার পর গণতন্ত্র আনলেন। আপনারা যদি সেসময়কার (জিয়ার আমলের) মন্ত্রিসভার ক্যান্ডিডেটদের দেখেন, দেখবেন তারা সবাই সুযোগ্য ও ভালো লোক ছিলেন। যে দেশে গণতন্ত্র হারিয়ে গিয়েছিল সেই দেশে তিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনলেন। তিনি সবাইকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনিই নির্বাচন দেওয়া শুরু করলেন। জিয়াউর রহমান সবার সঙ্গে কথা বলতেন। কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী- সবার কথা তিনি শুনতেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ওই সময়ের সরকারের দেশকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল না বলেই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। এভাবে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের সমৃদ্ধ হয়েছিল। ফসলের উৎপাদন বেড়েছিল। যেখানে মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যেত, সেখানে শহীদ জিয়া মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে নতুন নতুন কল-করাখানা স্থাপন ও গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বহু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন।
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, আজকে সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে এই আওয়ামী লীগ। দেশে যদি গণতন্ত্র সচল না থাকে তাহলে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে না। আর প্রতিষ্ঠান সচল না থাকলে গণতন্ত্রও থাকতে পারে না। যেখানে ন্যায়বিচার থাকে না, গণতন্ত্র থাকে না, সেইখানে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এই আওয়ামী লীগের সময়ই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল প্রথম। মনে পড়ে আপনাদের, যশোরের উদীচীসহ আরো বিভিন্ন জেলাতে এ রকম ঘটনা আমরা ঘটতে দেখেছি। কিন্তু কোনো অপরাধী ধরা পড়ে নাই। কোনো জঙ্গি ধরা পড়ে নাই।
জঙ্গিদের ধরে বিচারের মুখোমুখি না করে কেন মেরে ফেলা হয়, তা জানতে চান খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে জঙ্গিদের মেরে ফেলার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের বিরোধী। তারা দেশের বিরুদ্ধে চুক্তির মাধ্যমে দেশের সর্বনাশ করছে। রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আমি যে বক্তব্য দিয়েছিলাম, সরকার তার জবাব দিতে পারেনাই। বরং বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সুন্দরবনে কেনো? সেখানে বাদ দিয়ে করুন।
ফারাক্কা বাঁধ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, পানির ন্যায্য বণ্টনের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক ফারাক্কা বাঁধ চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এখন ভারত ফারাক্কার গেট খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশে বহু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এটাই কি বন্ধুর পরিচয়? তারা তো শুষ্ক মওসুমে আমাদেরকে পানি দেয় না। তাহলে সরকার কেনো কোনো কথা বলছে না? বন্ধুর দ্বারা বন্ধু উপকৃত হবে। কিন্তু কোনো কথা বলছে না সরকার। বন্ধু হলে যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবে না তা কোনো বন্ধুত্ব নয়, আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের প্রাপ্য আদায় করা উচিত।
এ সময় খালেদা জিয়া ‘সাহস নিয়ে এবং কোনো অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা-হট্টগোল নয়, যা নির্দেশ দেওয়া হবে শান্তিপূর্ণভাবে সব মোকাবিলা করে’ এগিয়ে যাওয়ার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাব। ইনশাল্লাহ, এর সুফল বাংলাদেশের মানুষ পাবে। এবং এই দেশে হারানো গণতন্ত্র আবার ফিরে আসবে।’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা নতুন করে অনেক তরুণ ছেলেকে কমিটিতে পদ দিয়েছি। তাদেরকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান, নূরে আরা সাফা, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সরফত আলী সপু, কামরুজ্জামান রতন, আব্দুল কাদের ভুইয়া জুয়েল, রাজিব আহসান ও আকরামুল হাসান প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সভাস্থল সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। চারদিকে রঙ-বেরংয়ের বেলুন দিয়ে আর ফেস্টুন এবং ফুল দিয়ে সাজানো হয় মিলনায়তন।
