নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে মা হাসপাতালে প্রসুতির মৃত্যুর মামলায় আটক ম্যানেজারের হযরত ১ দিনের রিমান্ড হলেও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে মূলহোতা ডাক্তার নিলুফা ও নার্স শিউলি ও রুনা। এদিকে আসামি হযরত আলীকে ১’দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ওমর ফারুক ৫’দিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজেস্ট্রিট আদালতের বিচারক কে.এম মহিউদ্দিন ১’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আন্না আক্তার (২৪) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হলে হাসপাতালটির ম্যানেজার হযরত আলী, ডাক্তার নিলুফার আক্তার, নার্স শিউলি ও রুনাকে আসামি করে নিহতের স্বামী সুমন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ক্লিনিকের ম্যানেজার হযরত আলীকে গ্রেফতার করা হলেও রহস্যজনক কারণে মামলার এজাহার নামীয় আসামি মূল হোতা ডাক্তার নিলুফার আক্তার ও দু’নার্স রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে মামলার তদন্ত স্বার্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ওমর ফারুক রিমান্ডে থাকা হযরতের জবান বন্দির বিষয়ে গনমাধ্যমকে তাৎক্ষনিক কিছু জানাননি।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি সিআইখোলা বালুর মাঠ এলাকার হাজীর বাড়ীর ভাড়াটিয়া মোঃ সুমনের স্ত্রী আন্না আক্তারকে সন্তান প্রসবের জন্য গত ১ মে শিমরাইল মোড়স্থ হাজী ইব্রাহীম খলিল শফিং কমপ্লেক্সের মা হসপিটাল এন্ড ল্যাবের ১০৩ নং ক্যাবিনে ভর্তি করা হয়। গৃহবধূর সন্তান প্রসবের সময় না হলেও হাসপাতালের হাতুড়ে ডাক্তাররা সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পরামর্শ দেয়। সিজারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে ১৮ হাজার টাকা চুক্তি হয়।এর মধ্যে ১২ হাজার টাকা নগদ আর ৬ হাজার টাকা বাকী রেখে ২ মে বেলা ১১ টায় ভাড়াকরা ডাক্তার নিলুফার আক্তার আন্নার সিজার অপারশন করে। ডাক্তারের সহযোগী হিসেবে সাথে ছিল নার্স শিউলি ও রুনা। সিজারে আন্নার কন্যা সন্তান প্রসব হয়।
অভিযোগ উঠেছে,প্রসবের পর সন্তানের নাড় কাটার সময় মা এর রক্ত চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রগ কেটে ফেলা হয়।এতে কোন ভাবেই রক্ত করণ বন্ধ না হলে নয় ছয় বুঝিয়ে ডাক্তার নিলুফার আক্তার চলে যায়। পরে ক্লিনিকের প্রশাসনিক সচিব মাসুদ খান ও হযরত আলী তড়িঘড়ি করে মূমূর্ষ অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪ টায় রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। কিন্তু রোগীর অবস্থা দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার ভর্তি করেনি। তখন স্বজনরা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আন্না মারা যায়। পরে রাত সাড়ে ৮ টায় ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে এসে নিহতের স্বজনরা মা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও ডাক্তারের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই মোজাম্মেল ও ওমর ফারুক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ক্লিনিকে ছুটে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত এবং ম্যানেজার হযরতকে আটক করে। ওই দিন রাতেই নিহতের স্বামী সুমন বাদী ওই ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। বাদী সুমন মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মুশদগাও গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিন খানের ছেলে। ওই মামলায় ক্লিনিকের ম্যানেজার হযরত আলীগে গ্রেফতার করে,রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও রহস্য জনক কারণে মামলার এজাহারভূক্ত অন্য আসামি মূল হোতা ডাক্তার নিলুফার আক্তার নার্স শিউলি ও রুনাকে গ্রেফতার করছেনা পুলিশ।এ নিয়ে চলছে না সমালোচনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,এর আগেও মা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় একাধিক রোগী মারা গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় রোগীর স্বজনদের ম্যানেজ করে ঘটনা ধামাচাপা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারি নিয়ননীতি অমান্য করে অদক্ষ হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে পরিচালিত এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসার নামে রোগীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। চিকিৎসার নামে একজন প্রসূতিসহ একাধিক রোগীকে হত্যা করার পরও ওই ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করছেনা জেলা সিভিল সার্জন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।এতে এলাকার সচেতন মহলে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।