বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের ৫৩ নম্বর ভবনে (তাজ মঞ্জিল) জঙ্গিদের আস্তানায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে নয়জন নিহতের ঘটনায় বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ভয়ে অনেকে এই ভবন ছেড়ে স্বেচ্ছায় চলে গেছেন। অন্য যারা ছিলেন, তাদের সরিয়ে দিয়ে বাড়িটি খালি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বুধবার ছয়তলা ভবনটি খালি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপরই সেখানে পাহারা বসান তারা। মাস শেষ হওয়ার আগে হঠাৎ করে বাসা ছেড়ে দিতে হওয়ায় অনেকে বিপাকে পড়েছেন। একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
কথা হয় কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের বাসিন্দা আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত সোমবার গভীর রাতে তাজ মঞ্জিলে ভাড়া থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি শুরু হলে ভয়ে শরীর কাঁপতে শুরু করে। সারা রাত ভয়েই কেটেছে। মনে হয়েছে আজ জীবনের শেষ দিন। মনে মনে আল্লাহকে ডেকেছি। সকালে ৯ জঙ্গির নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সেই আতঙ্ক এখনো কাটেনি। এ এলাকার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিজের নিরাপত্তা নিয়ে টেনশনে আছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’
কথা মানিক শরীফের সঙ্গে। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে দুই বছর ধরে তাজ মঞ্জিলের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকি। নিরাপত্তার জন্য বুধবার সব ভাড়টিয়াদের এই ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমার এক আত্মীয়র বাসায় উঠেছি। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাত থেকে আমার ছোট মেয়েটি ঘুমের মধ্যে কেঁদে ওঠে এবং সমস্ত শরীর কাঁপে। গত সোমবার রাতে গুলির শব্দে ভয় পেয়েছে।’
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গত সোমবার রাতে গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। প্রথমে ভাবছি পাশের কোনো ভবনে বোমা হামলা কিংবা আগুন লেগেছে। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী হয়েছে। এর একটু পর তিন থেকে চারটি গুলির শব্দ পাই। এর কয়েক মিনিট পর অনেকগুলো গুলির শব্দ পাই। গুলির সময় মনে হচ্ছিল আজ আমিসহ পরিবারের জীবনের শেষ দিন। আর বাঁচব না। স্রষ্টার কাছে সাহায্য চেয়েছি। তিনি বাঁচিয়েছেন।’
কথা হয় ৫ নম্বর রোডের ৫৮ নম্বর বাড়ির ভাড়াটিয়া ওবায়দুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নয় জঙ্গি নিহতের পর এই এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। কখন কোথায় কী হয়? ভয়ে কেউ বাসা থেকে তেমন বের হচ্ছে না। রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। বুধবার সকাল থেকে দোকান-পাট খুলতে শুরু করেছে।’
কল্যাণপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নয় জঙ্গি নিহতের পর এই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়ানো হয়েছে তল্লাশি। যাকে সন্দেহ হচ্ছে, তাকেই তল্লাশি করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
তাজ মঞ্জিলের মালিক সাবেক শুল্ক কর্মকর্তা আতাহার উদ্দিন আহমেদ। ছয়তলা বাড়ির প্রতিটি তলায় রয়েছে চারটি করে ইউনিট। দ্বিতীয় তলায় মালিকের ছেলে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
অন্য তলার বিভিন্ন ইউনিটে মেস করে ভাড়া থাকতেন ব্যাচেলররা। বছরের ১২ মাসই বাড়ি ভাড়ার নোটিস ঝোলানো থাকে। তাই সব সময়ই মানুষের আনাগোনা থাকে। এর আগেও এ ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে। এক বছর আগে মিরপুর মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন খানের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে নাশকতার অভিযোগে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওসি সালাউদ্দিন গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার নিহত হয়েছেন।
পল্লবী জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) শরিফুর রহমান বলেন, এ এলাকায় কয়েকটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব স্থানে পুলিশ মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ভূঁইয়া মাহাবুব হোসেন বলেন, বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে একাধিক চেকপোস্ট। তবে সাধারণ মানুষের কোনো ভয় নেই। তারা নির্ভয়ে চলাচল করতে পারেন।