বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সিদ্ধিরগঞ্জের মক্কিনগর মাদ্রাসার সেই বিরোধকৃত অর্পিত সম্পত্তিতে সন্ত্রাসী প্রতারক ভূমিদস্যু মনিরগংরা টিনের বেষ্টনি দিয়ে ফের গোপনে এর ভেতরে নির্মান কাজ করছে। এনিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও মনির গংদের মধ্যে চরম উত্তেজানা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় আবারও এ বিরোধকৃত অমিমাংসিত জায়গায় নির্মান কাজ করায় এলাকাবাসী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করে আতংকে দিনাতিপাত করছে। সারাদেশে জঙ্গীবাদের ইস্যু’র সুযোগ নিয়ে ওই জায়গায় রাতের আধারে গোপনে নির্মান কাজ করছে মনির গং। এতে মনিরগং সরকারের ভাবমূর্তি দেশের মানুষের কাছে নষ্ট করতেই এ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এদিকে মনির গংদের সন্ত্রাসী পায়তারা অন্যদিকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের উত্তেজনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী জানায়, যেখানে প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষ এই অর্পিত সম্পত্তির মিমাংসা চাচ্ছে, সেখানে প্রতারক, সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু মনির রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অর্পিত ভূমির দখলস্বত ও দখলের নতুন কৌশলে নির্মান কাজ করায় আতংক ও উত্তেজিত করে তুলছে এলাকাবাসীকে। অপরদিকে সংঘাতের উৎসাহ করছে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের।
তারা আরো বলেন, মনির মাদ্রাসা জামায়াত শিবির পরিচালিত ও জঙ্গিবাদের মিথ্যা দোহাই দিয়ে সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। আইনশৃংখলা স্বাভাবিক ও এলাকায় শান্তি বিরাজ রাখতে উক্ত অর্পিত সম্পত্তির চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ার পর্যন্ত ভূমিদস্যূ মনিরকে প্রতিহত করে রাখতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান এলাকাবাসী।
সমজমিনে পরিদর্শন ও বিভিন্ন সূত্রমতে, হীরাঝিল এলাকায় আটি মৌজায় এস.এ ১৩৯ নং খতিয়ানে ১৮৭ নং দাগে ৯৫ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি দখলকে কেন্দ্র করে মক্কী নগর কওমী মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে ভূমিদস্যু এলাকার মনির হোসেনের। এর আগেও এ নিয়ে একাধিকবার মারামারি হয়েছে। আদালতে মামলাও চলছে। মনির এলাকায় প্রতারক, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি। সরকারি ওই জমি বিগত ১৯৯৪ সালে সাবেক এমপি মো. গিয়াস উদ্দিনগংদেরকে সরকারি ভাবে ইজারা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে গিয়াসউদ্দিনগং ইজারা নবায়ণ না করায় জামিয়া আবু বক্কর(রাঃ)আল ইসলামিয়া (মক্কী নগর মাদরাসার)তৎকালিন প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা আলতাফ হোসাইন গত ২ হাজার ৩ সালে ওই জমি মাদ্রারাসার নামে লীজ নিয়ে নেয়। লীজের মেয়াদ শেষ হলে ২০১০ সালে ফের লীজ নবায়ণ করে। পরবর্তীতে লীজের মেয়াদ শেষ হলে আর কেউ এ সম্পত্তি লীজ না আনেনি। তবে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইন, ২০০১(সংশোধিত ২০১১) এর তালিকায় ওই জমি মাদ্রারাসার নামে উল্লেখ রয়েছে। কয়েক কোটি টাকার এ সরকারি জমি দখল করা নিয়েই মূলত মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে মনিরের বিরোধ। বর্তমানে জমিটি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও মনির দু,পক্ষই পৃথক পৃথকভাবে দখল করে রেখেছে। এতে এক পক্ষ গড়ে তুলেছে মসজিদ মাদরাসা আরেক পক্ষ গড়ে তুলেছে দোকান পাঠ। এ জমির ভোগ দখল নিয়ে একাধিকবার সন্ত্রাসী মনির গং ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়। সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুতে মনিরগংরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজি ইয়াছিন মিয়াকে ভূলতথ্য দিয়ে মক্কিনগর মাদ্রাসায় নিয়ে আসে। পরে তারা সেখানেই ইয়াছিনের উপস্থিতিতে মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়।
তবে এ ব্যাপারে মক্কীনগর মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল তৈয়ব আল হোসাইন বলেন, আমরা কোন দল করিনা, জনগনের আর্থিক সহযোগিতায় এ মাদ্রাসাটি পরিচালিত হচ্ছে। মনির হোসেন প্রভাব খাটিয়ে আমাদের ক্রয়কৃত ৪ শতাংশ জমি ও লীজকৃত ৩০ শতাংশসহ ৩৪ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন এবং তিনি রাস্তার উপর ১৬ টি দোকান ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। জনসাধারনের চলাচলের রাস্তার উপর মনির হোসেন দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। তাছাড়া একটি ভবনও রাস্তার উপর করেছেন বলে তৈয়ব আল হোসাইন অভিযোগে বলেন।
তিনি আরো বলেন, বেষ্টনি দেয়া জায়গাটি মাদ্রাসার নামে লিজ নেয়া অর্পিত সম্পত্তি। কিন্ত মনিরগংরা রাতের আধারে টিনের ভেতরে নির্মান তাজ করছে। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি তারা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। তবে আমাদের সম্পত্তি রক্ষার জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো।
এদিকে মনিরের বিরুদ্ধে কখোনো নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো সেনা কর্মকর্তা আবার কখনো সচিব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতারণা করার অভিযোগ রয়েছে। সাত খুনের অভিযুক্ত আসামী নূর হোসেনের ভূমি উপদেষ্টা ও ব্যবসায়িক পার্টনার ও মহাপ্রতারক হিসেবে পরিচিত মনির হোসেন। উত্তরা ব্যাংকের পে-অর্ডার জালিয়াতি, ঢাকা মেট্টো পলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সিল ও স্বাক্ষর জাল করায় ১৯৯৪ সালের ৪ নভেম্বর দায়ের করা মামলায় ৬ মাস কারাভোগ করেন মনির। ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আত্মীয় চাঁদপুরের কচুয়ার নিন্দাপুর এলাকার জনৈক ইসহাক সিকদারের কাছ থেকে জমির বায়না বাবদ ৫০ লাখ টাকা নেন মনির, বিনিময়ে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌজায় একটি জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা বলেন ইসাহাককে। টাকা আত্মসাৎ করার পরে মনির ইসাহাককে জমি রেজিস্ট্রি করে না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে থাকে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে হয়রানির করার। ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ দিয়ে প্রতারণার শিকার ইসহাক সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মনিরকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ইসাহাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করা হলে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশ মনিরকে গ্রেফতার করে ৩ দিন আটক রেখে ওই টাকা আদায় করা হয় মনিরের কাছ থেকে। মনির সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এক ওসির কাছে নিজেকে সচিব পরিচয় দিয়ে তদবির করলে ওসি বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মনিরকে ডেকে নিয়ে সাবধান করে দেন। সিদ্দিক মুন্সীর পিতা আইনুদ্দিন মুন্সী সিদ্ধিরগঞ্জের আটি মৌজায় ২৫ শতাংশ জমি ১৯৬৮ সালের ৯ জুলাই জনৈক গাইজুদ্দিন সর্দারের নিকট সাব কবলা দলিল মূলে বিক্রি করেন। কিন্তু ওই জমিটি দীর্ঘ ৪২ বছর পরে আইনুদ্দিন মুন্সীর ছেলে সিদ্দিক মুন্সীর কাছ থেকে ২০১১ সালের ১৪ জুন ওই ২৫ শতাংশ জমি ৬৩ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে বায়নানামা দলিল করেন মনির ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের নামে। পরে ওই জমিতে থাকা বাড়িঘর ও দোকানপাট জবর দখল ও উচ্ছেদের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে জমির মালিকের কাছে মোটা অংকের টাকা চাঁদাদাবি করে মনির। প্রতারণা করে দাদার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে ভুয়া নোটারি দলিল করেন জন্মদাতা পিতা, চাচা ও ভাই বোন ও ফুফুর সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেও দ্বিধাবোধ করেনি মনির। পরে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ৮টি মামলাসহ স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, জাল দলিল করে আপন চাচা আইজুদ্দিনের একটি জমি আত্মসাৎ করার অভিযোগে আইজুদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল আবাসিক এলাকায় সিএসও এসএ ১৮৭ নং দাগে ৪০ কোটি টাকা মূল্যের ৯৫ শতাংশ সরকারি খাস জমি জালদলিলের মাধ্যমে ভোগ দখল করছেন। তারই আপন ছোট ভাইদের সম্পত্তি দখল ও আত্মসাৎ করতে ও চাঁদাবাজি ও অপহরণ মামলা করেন মনির। পুলিশ তদন্তে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর হিরাঝিল মক্কীনগর মাদ্রাসার জমি দখল করতে গিয়ে ভাঙচুর ও মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় মনির ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার মুফতি হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে মনিরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের পছন্দের জায়গায় পোস্টিং করে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে মনিরের বিরুদ্ধে।