গত বছরের নভেম্বরে অসুস্থতার কথা বলে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী টাওয়ারে বাসা ভাড়া নেয় সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী। প্রথমে ৩ তলায় বাসা ভাড়া নেয়ার পর ফ্লাটটি ছোট হওয়ায় একই ভবনের ৮ম তলায় একটি বড় পরিসরের ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আরসা প্রধান। ভাড়া নেয়ার সময় ফ্ল্যাট মালিকদের তারা জানিয়েছিলেন, আরসা প্রধান আতাউল্লাহ অসুস্থ, হসপিটালে ভর্তি হবে। বারবার হসপিটালে যেতে হয়। তাই চট্ট্রগ্রাম থেকে এখানে ঢাকার কাছে বাসা ভাড়া নিতে ইচ্ছুক। পেশায় চট্টগ্রামের ট্রলার ব্যবসাীয়। সেই থেকেই তারা বসবাস করছে এ ফ্লাটেই। নামাজ পড়ার সময়, নিত্যপন্য ক্রয়, ময়লা-আবর্জনা ফেলাসহ প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া তারা বাসা থেকে বের হতেন না তারা। বেশি কথাও বলতেন না কারো সাথে। তাদের গ্রেপ্তারের খবরে হকচকিয়ে গেছেন এলাকাবাসী। কিছুতেই মানতে পারছেন না পাশের দেশের বিদ্রোহীগোষ্ঠির প্রধান তাদের এলাকায় থাকতেন।
এর আগে গত ১৬ ও ১৭ মার্চ র্যাব-১১’র দুটি টিম নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকায় এবং ময়মনসিংহের নতুন বাজার মোড়ে অবস্থিত গার্ডেন সিটিতে অভিযান চালিয়ে আরসা’র কমান্ডার আতাউল্লাহ(৪৮) ও সেকেন্ড ইন কমান্ড মোস্তাক (৬৬) সহ ১০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তারা দুজন ছাড়া বাকিরা হলেন মনিরুজ্জামান (৩৩), সলিমুল্লাহ (২৭), মোসা: আসমাউল হুসনা (২৩), মোঃ হাসান(১৫), আসমত উল্লাহ (২৪), মো: হাসান (৪৩), মোসা: শাহিনা (২২), মোসা: সেনোয়ারা (১৭)।
র্যাব জানায়, অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৫১ লক্ষ ৩৯ হাজার ১শ টাকা, ইউএস ডলার ও রিঙ্গিতসহ আরও কিছু বৈদেশিক মুদ্রা, আরসার কমবাট ইউনিফর্ম, মোবাইল ফোন, চাকু, স্টিলের চেইন ও ঘড়িসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৬ জনকে সোপর্দ করে দুটি মামলা দায়ের করেন তারা। ওই দুই মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
আরসা বাহিনীর প্রধান আয়াতুল্লাহ তার অসুস্থতার কথা বলে বাকি সদস্যদের নিয়ে প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী টাওয়ারের মো. কবিরের মালিকানাধীন ৩ তলার ফ্লাটে উঠেন। এবিষয়ে মো. কবির বলেন, উনার বাড়ি চট্টগ্রাম, উনি খুবই অসুস্থ। তারা বেশি দিন থাকবে না। বারবার ডাক্তার দেখাতে হয় তাই ভাড়া নিতে চান। সাথে তার ভাই আর পরিবার থাকবে। চট্টগ্রামে তার ট্রলারের ব্যবসা আছে। এসব কথা বলে আমার কাছ থেকে বাসা ভাড়া নিয়েছে। এসময় উনাদের সাথে একজন বিশেষ বাহিনীর লোক বলে পরিচয় দেন। উনিই এখানে তাদেরকে নিয়ে আসছিলো। সাথে ২ দুইজন সাংবাদিকও আসছিলো। তবে তাদের নাম পরিচয় আমি জনি না।
তিনি আরও বলেন, ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়ার পর বিশেষ বাহিনীর পরিচয় দেয়া ব্যাক্তি উনাদের (আরসা সদস্য) বেডিং পত্র কিনে দিয়েছিলো। ভাড়া দেয়ার পর ভাড়া ঠিকমতই দিতো। আমার এখানে নভেম্বরে ভাড়া নিয়ে ২ মাস ছিলো। ফ্ল্যাট ছোট বলে এই বাড়ির ৮ তলায় ভাড়া উঠেন তারা।
এরপর চলতি বছরের জানুয়রিতে একই বাড়ির ইতালি প্রবাসী আব্দুল হালিম সরকারের মালিকানাধীন ৮ তলার ফ্ল্যাটে ভাড়া উঠেন আরসা বাহিনীর গ্রেপ্তারকৃত সদস্যরা। ইতালি প্রবাসী আব্দুল হালিম দেশের বাইরে থাকায় তার বেয়াই মো. খোরশেদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় সেই ফ্ল্যাটে উঠেন তারা। মো. খোরশেদ বলেন, প্রথমে ৩ তলার কবির ভাইয়ের ফ্লাট ভাড়া নিয়েছে তারা। ২ মাস পর আমার বেয়াই হালিম ভাইয়ের ফ্লাটের কাজ শেষ হলে সেটা ভাড়া নিতে চায় বলে দারোয়ানকে জানায়। দারোয়ান আমাকে বলসে তাদরে নাকি ছোট ফ্লাটে হবে না তাদের বড় ফ্লাট দরকার। তাই হালিম ভাইয়ের ৮ তলার ফ্লাটটা ভাড়া চাচ্ছে। এরপর ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় আমি ভাড়া দিয়ে দেই।
ভূমিপল্লী টাওয়ারের দারোয়ান মো. এমরান জানান, পাঁচ মাস আগে ৩ তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া দেন তারা। বাসা থেকে কম বের হতো এই পরিবারের সদস্যরা। আমরা ভেবে ছিলাম তারা আলেম পরিবার তাই বাসা থেকে কম বের হয়। মহিলা ও বাচ্চাসহ ৯ জন সদস্য থাকতো। তিনি (আয়াতুল্লাহ) সব সময় মসজিদে নামাজ পড়তো। আমাকে একবার বলে ছিলো তাদের বাড়ি চট্টগ্রাম। মাঝে মাঝে গৃহস্থলির ময়লা ফেলতে বের হতেন।
পাশের ছায়া ভবনের দারোয়ান মো. আবুল কালাম বলেন, আয়াতুল্লার সাথে আমার প্রায়ই কথা হতো। নামাজে যাওয়ার সময় তার সাথে দেখা হতো। তিনি এমন লোক কোন সময়ই ধারণা করতে পারি নাই। আমাগো লগে থাইক্কা গেলো আমরাই কইতে পারলাম না। অথচ তারে নিয়া কয়েক বছর আগে নিউজ দেখছিলাম। সে সময় তার আরও বেশিদাড়ি ছিলো। কিন্তু এখন কম থাকায় চিনতে পারি নাই।