বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
অপরাজনীতির শিকার হয়ে প্রাণ দেয়া এক মেধাবী কিশোরে নাম ‘তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী’। ২০১৩ সালের ৬মার্চ নারায়ণগঞ্জে নিজ বাসার কাছ থেকে অপহৃরনের দু’দিন পর ৮মার্চ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর খাল থেকে পুলিশ উদ্ধার করে তার নিথর দেহ। হত্যাকান্ডের এক যুগ পেরুলেও অভিযোগপত্র দাখিল হয়নি আলোচিত এ হত্যা মামলার। বিচারের বিলম্বতার কারনে হতাশ নিহতের পরিবার ও নাগরিক সমাজ।
‘ত্বকী নেই’ এটি চিরন্তন সত্য হলে কি হবে? মা রওনক রেহানা কাছে ত্বকী যেন এখানো জীবন্ত। হয়ত তাই এখনো খাতার ফাঁকে ফাঁকে ত্বকীর লেখা কবিতা পড়ে পুত্রকে বলা হয়নি, এমন একটা কিছু বলার অপেক্ষায় থাকেন তিনি। ত্বকীর সাথে তার কথা না হওয়ার সময়টা আজ এক যুগ অতিবাহীত হলো। পুত্র হত্যার বিচারের দির্ঘ্য সময় অতিবাহিত হওয়ার হতাশ হয়ে তিনি বলেন, এ সরকারের সময়টাতে ত্বকী হত্যার বিচারকার্য্য শেষ হবে এটাই যেন হয়।
২০১৩ থেকে ২০২৫ পেরিয়ে গেছে ১২টি বছর। দীর্ঘ এই সময়ে সন্তানের স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে খুনের বিচারের আশায় প্রতিবাদ কর্মসূচীসহ বিভিন্নভাবে দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন বাবা রফিউর রাব্বী।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নগরীর শায়েস্তা খাঁন রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। সেই মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে উঠে আসে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর আগে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে অভিযান চালায় র্যাব।
হত্যাকান্ডের এক বছর পর ২০১৪ সালে ৮ মার্চ তৎকালিন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানও সংবাদ সম্মেলন করে উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরীসহ ১১ জন কিশোর ত্বকী হত্যায় অংশ নেয়। জানানো হয় দ্রুত আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হবে। কিন্তু হত্যাকান্ডের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি। তবে এরই মধ্যে গত ৫ আগষ্ট আওয়মী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বতী কালিন সরকার দায়িত্ব নিলে র্যাব ত্বকী হত্যা মামলায় নতুন করে আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তাদের মধ্যে আজমেরী ওসমানের গাড়ীচালক ও সহযোগীরা রয়েছে। তবে পালিয়েছে আজমেরীসহ আরও অনেকে।
মামলার অগ্রগতি নিয়ে হাতাশ প্রকাশ করেছে সুশীল সমাজ।
ত্বকী হত্যা মামলার ৮১ ধার্র্য্য তারিখ গেলেও আদালতে এখনো অভিযোগ পত্র দাখিল হয়নি। এ সরকারের সময়ে দ্রুত তদন্ত প্রতিবদেন দাখিলের দাবী মামালার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবুর।
দীর্ঘদিন পর তদন্ত শুরু করেও কেনো তা স্থিমিত হয়ে পড়েছে জানতে চাইলে র্যাব জানায় এই মামলাটির তদন্ত আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিহত ত্বকীর বাবার সাথে আমাদের সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে। তিনিও আমাদেরকে এই মামলায় সহায়তা করছেন। ৫ আগষ্টের পর থেকে আমরা এই মামলায় আরো ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদেরকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। তদন্ত শেষ হওয়া মাত্রই অভিযোগ পত্র আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানায় র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
এই মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যার বিচার কোনভাবেই বন্ধ করে রাখা যাবেনা। ত্বকীকে হত্যা করে যে কলংকিত করা হয়েছে তা মুক্ত করতে এই হত্যাকান্ডের বিচার করা হবে বলে দাবি নাগরিক সামাজের।