বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিডিআরকে হত্যা করা হয়েছিল বাইরের একদল প্রশিক্ষিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সন্ত্রাসী দিয়ে। একটি বাহিনীর লোক, যারা এদেশে থাকে না, এদেশের লোক তারা নয়। বিদেশ থেকে এনে আমার দেশের বিডিয়ারের ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহরের সলিমুল্লাহ সড়কের ডনচেম্বার এলাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস আক্ষেপ নিয়ে বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এই সেনা হত্যার বিচার আজও হলো না। যাদের বিচার হচ্ছে এবং হয়েছে এছাড়া অনেকে ফাঁসির আদেশ নিয়ে জেলে আছেন। তারা সকলেই নির্দোষ। তারা কেউ দোষী নয়। জেলের ভেতরে তাদের কান্না দেখে আমরা আমাদের চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারি নাই। যাদেরকে ওই দিন হত্যা করা হয়েছিল তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তাদের পরিবার পরিজনের প্রতি আমি সহানুভূতি জানাই। বিডিআরের দুইটি পরিবারকে আমরা আমাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০টি বছর লালন করেছি। তাদের সন্তানরা বড় হয়েছে। যারা শাহাদাত বরণ করেছে তাদেরকে তো আমরা ফিরিয়ে আনতে পারবো না। আমার বক্তব্য হলো যারা এখন জেলে আছে তাদের ব্যাপারে কোন কথা বার্তা আমরা শুনতে চাই না। তাঁরা প্রায় ১৪-১৫ বছর জেলে পঁচে মরছে। তাদেরকে কেন ছাড়া হচ্ছে না, জানি না। আওয়ামী লীগ ছাড়ে নাই আওয়ামী লীগের কারণে। এই সরকার কেন ছাড়বে না? তা আমি জানি না। আমার দাবি যারা বেঁচে আছে, যে অবস্থায় আছে তাদেরকে অবিলম্বে জেলখানার গেটটা খুলে দিয়ে বিনা বিচারে মুক্ত করা হোক। তাদের কোন সাজার প্রয়োজন নাই।
দেশের বর্তমান প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, দেশে মানুষের অবস্থা খুব খারাপ। আজকে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট অনেক বেড়ে গেছে। কারা করছে আপনারা জানেন। যারা বলে দিনের বেলায় যদি আমরা হাঁটতে না পারি, রাতের বেলায় আমরা কাউকে ঘুমোতে দিব না। সেই দূর থেকে ভারতে বসে বসে আওয়ামী লীগের ওই দালাল চক্র, আওয়ামী লীগের তথাকথিত নেতৃবৃন্দ, যারা এই দেশকে লুট করেছে, এদেশের মানুষকে খুন করেছে, এদেশের সর্বনাশ করে ভারতে বসে আছে। ওরা ওই দেশে বসে বসে চক্রান্ত করছে কিভাবে এ দেশকে অশান্ত করা যায়।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ দেশকে অশান্ত করেন আর যাই করেন। এদেশের মানুষের মনের যে শক্তি, এটা কখনো আপনারা ভাঙতে পারবেন না। এদেশের মানুষের ঐক্যকে আপনারা কখনো ভাঙতে পারবেন না। এদেশের মানুষ শান্তি চায়, ভালোমতো বাঁচতে চায়। আপনারা উঠতে দিবেন না, আমাদেরকে রাত্রে শান্তি মত ঘুমোতে দিবেন না, আমাদের ইচ্ছেতে মরতে দিবেন না লুটপাট করবেন, চুরি ডাকাতি করবেন, আগুন লাগাবেন অনেক কিছু করবেন বলেছেন। আপনারা চেষ্টা করে দেখেন। পারেন কিনা? বাংলাদেশের মানুষ এতো সহজে আপনাদের কে ছেড়ে দিবে এটা ভাবার কোন সুযোগ নাই।
অন্তবর্তী সরকার নিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসে আমরা সবাই তাদেরকে সমর্থন দিয়েছিলাম। আমরা বলেছি এই সরকার যদি ব্যর্থ হয় এই দেশের মানুষ ব্যর্থ হয়ে যাবে, এই দেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে। সুতরাং সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। আমরা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। কিন্তু ওই পর্যন্ত নয় যে আজীবন চলবে আর আমরা অপেক্ষা করতে থাকবো। আজীবন আমরা কোন ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করবো না। তথাকথিত কিছু ভদ্রলোক বলেন- বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবেনা, আরেকজন বলেন- নির্বাচন যারা চায় তারা এদেশের মঙ্গল চায় না। আরে মিয়া ১৭ বছর কই ছিলা তুমি? আমরা ১৭ বছর আন্দোলন করেছি নির্বাচনের জন্য। অনেকে ধরেই নিয়েছেন নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। কারণটা হল বিএনপি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি দল। এই দলের জনপ্রিয়তাকে ধ্বংস করার জন্য আজকে এক শ্রেণীর লোক মাঠে নেমেছে। অপকর্ম করছে আরেকজন নাম হচ্ছে বিএনপির।
শেখ হাসিনার তৈরি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওই দিন একজন বলেছিল আমরা আজীবন আপনার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে থাকতে চাই। সকল সময় আপনার সঙ্গে আছি, মৃত্যুর পরেও আপনার সঙ্গে থাকবো। এই ধরনের কথাবার্তা ওই মিটিংএ যারা বলেছেন এই সিন্ডিকেটকে আপনারা ভেঙেছেন? এমন প্রশ্ন রেখে নিচে আব্বাস বলেন, এই সিন্ডিকেট রয়ে গেছে। এই সিন্ডিকেটের কেউ গ্রেপ্তার হয় নাই। এই সিন্ডিকেটের লোকজন লুটেরার দলের সঙ্গে ছিল এবং এরা আজকেও সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে রেখেছে, কমতে দিচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দ্রব্য মূল্যের দাম কখনো কমবে না। অনেকে বুদ্ধি দিচ্ছে এদেরকে গ্রেপ্তার করলে দেশ চালানো যাবে না। অনেকে আবার তাদের অফিস পরিদর্শন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে কিন্তু গ্রেপ্তার হয় না। এই নারায়ণগঞ্জে অনেক কুলাঙ্গার আছে, যারা আজকে ঘরে বসে আছে এবং ভারতের সাথে কথা বলে এই নারায়ণগঞ্জকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদেরকে কেউ গ্রেপ্তার করছে না। এ সরকারের এই সমস্ত দিকে নজর দেয়া উচিত।
গণতন্ত্র সোনার হরিণ নয়। আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা কথা বলতে চাই। আমরা ভোটের অধিকার চাই উল্লেখ করে স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মীর্জা আব্বাস বলেন, ওমুক ভাইকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই। যে ভাই এ কথা লেখুক- বিএনপির কেউ যেন এমন কোন কথা না লেখে। আমরা কোন ভাইকেই সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখতে চাই না। সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে অন্য কোন নির্বাচন নয়। ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছি। আমাদের ৫ হাজার নেতা জীবন দিয়েছে। হাজার হাজার কর্মী আহত অবস্থায় আছে। এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নয় এটা জাতীয় নির্বাচনের জন্য।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, নজরুল ইসলাম আজাদ, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব, শরীফ আহম্মেদ টুটুল, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ।