জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, গত ৩টি অবৈধ নির্বাচনের পরে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হতে পারে না। আরো একটি তথাকথিত নির্বাচন হতে পারেনা। অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে। গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান পুনর্লিখিত হতে হবে। ক্যাম্পাসগুলোতে নতুন ধারার রাজনীতি চালু হয়েছে। আগামীতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হতে যাচ্ছে। নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চুনকা মিলনায়তনে আয়োজিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এদিন জাতীয় নাগরিক কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তী রাজনৈতিক বন্দোবস্তে নারীদের অংশগ্রহণ শীর্ষক’ এক নারী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সামান্তা শারমিন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পুরো আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অগ্রবর্তী এবং ১৪ তারিখের যে অংশগ্রহণ ছিল সেটাকে আমরা মুখ্য করে তুলি। কিন্ত আরেকটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে যখন নারীরাও নারীদের কোটার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। যখন তাঁরা বলেছে- যে আমাদের পক্ষে কোটার প্রয়োজন নেই, মেধার ভিত্তিতে আমাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক। আমরা চাকরি পাব। আমরা মেধার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চাই।
তিনি আরও বলেন, কোটার কথা বলে যে জুলুম এখানে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছিলো সেটার বিরুদ্ধে নারীদের ছিলো এটা প্রথম পদক্ষেপ। পরবর্তীতে আমরা ১৪ তারিখে দেখেছি তারা কীভাবে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট পয়েন্টকে ভেঙেচুরে হল থেকে বেরিয়ে এসেছিল এবং তার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের নতুন অভ্যুত্থানের একটি সূচনা ঘটেছিল। আমাদের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নারীদের যে জাগরণ ঘটেছে নারীদের রাজনৈতিক ইনস্পিরেশনের অংশগ্রহণ ঘটেছে। আমরা অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে দেখেছি আমাদের যত শহীদ পরিবার ও আহত আছেন তাদেরকে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে দিয়ে তাদেরকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব নারীরা নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের বিচার চাচ্ছি। আওয়ামী লীগ কত মাত্রায় এখানে অন্যায় করেছে। সেটার মাত্রা যদি আমরা ব্যাখ্যা করতে চাই তাহলে এ রাতেও শেষ হবে না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের জায়গায় যাঁরা জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছে, যুক্ত থেকেছে সেখানেও যদি নারীরা যুক্ত থেকে থাকে তাদেরও বিচার করা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নারী নেতৃত্বের নামে নারীদের পিছিয়ে রাখতে অনেক কলা কৌশল অবলম্বন করেছেন। যেখানে সংরক্ষিত আসনের নামে নারীদের ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে কিন্তু আমরা দেখেছি নারী নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে এটা বড় বাঁধা ছিল। কারণ এখানে দলীয় প্রয়োজনে শুধুমাত্র কতগুলো নারীর ফেইস ব্যবহার করা হয়েছে।আমাদের বাংলাদেশে নারীরা এ ভাবে আর ব্যবহৃত হতে পারে না এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর নিজের নারী হওয়া সত্ত্বে সে নারীর এমপাওয়ারমেন্ট ঘটেছে এটা বহির্বিশ্বে দাবি করেছে। এটা সম্পূর্ণ ছিল এটা মিথ্যা ছিল। এটাও আমাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।
শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যাবর্তন করা হোক এবং শেখ হাসিনার বিচার করা হবে। আমরা এখনও উপদেষ্টা পরিষদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী দেখতে পাচ্ছি না। যদি এমন হয় যে বিভিন্ন সেক্টরে নারীরা এখনও পিছিয়ে আছেন তাহলে কী করলেন? নারীরা এখানে এগিয়ে আসতে পারবেন। সেই পদ্ধতি আমাদেরকে বের করতে হবে।
আমরা সংস্কারের কথা বলছি। বিচার, সংস্কার তারপর আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছি। শুধুমাত্র নির্বাচন নয়, এখানে তিনটি অবৈধ নির্বাচনের পরেই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হতে পারে না। অবশ্যই হতে হবে গণ পরিষদ নির্বাচন এবং গণ পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এখানে সংবিধান পুনঃ লিখিত হতে হবে। এই সংবিধান শেষ পুনঃলিখিত হয়েছিল ৭২ সালে এবং সেখানে সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে ছিলেন একজন মাত্র নারী। বেগম রাজিয়া খাতুন। তিনি ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতনি।
সাদিয়া ফারজানা দিনার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম, জাতীয় নাগরিক কমিটির নারী বিষয়ক সেলের সম্পাদক সাদিয়া ফারজানা দিনা প্রমুখ।