বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, রফিউর রাব্বি তার নিজের পুত্রকে হারিয়ে শোকে মূর্ছমান না হয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত হয়ে বই লিখেছেন উল্লেখ করে ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন,নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি ইতিহাস তার বইটি একটি আকড় গ্রন্থ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বিদ্যানগুনী মানুষের কদর নেই। দুর্নীতিবাজ ও লেখাপড়া না জানা মানুষেরা সব সময় স্বীকৃত হয় এবং তারা অনেক সময় অনেক কিছু পায়, যা পাওয়া উচিত নয়। এই বই থেকে নারায়ণগঞ্জ সর্ম্পকে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন। রফিউর রাব্বি’র যে অক্লান্ত শ্রম চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে, পৃথিবী যত দিন বেঁচে থাকবে, রফিউর রাব্বি বেঁচে থাকবেন। জয় বাংলা।
শনিবার বিকেলে নগরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ ও ‘বৃত্তের বাইরে’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট বই দুটি প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি মফিদুল হক, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন, লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। অনুষ্ঠান শুরুতে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি মফিদুল হক বলেন, ইতিহাস অনুধাবনে আঞ্চলিক ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম। যে কাজে আমরা বিশেষ পারঙ্গম হইনি। জাতির এ দৈন্য মোচনে এককভাবে বড় দায়িত্ব সম্পাদন করলেন লেখক, সংস্কৃতিকর্মী ও নারায়ণগঞ্জে জনসমাজের প্রতিনিধি রফিউর রাব্বি। যে কাজ একদল ঐতিহাসিকের, বড় মাপের প্রকল্প ছাড়া সম্পাদনের কথা ভাবা যায় না, আপন তাগিদ থেকে সেই গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রাজধানী ঢাকার চাইতেও প্রাচীন এ নারায়ণগঞ্জ। বইয়ে অকীর্তিত ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্প-বাণিজ্য ইত্যাদি ফুটে উঠেছে ‘নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য’ গ্রন্থে। বাংলাদেশের ইতিহাস চর্চায় বিশেষ অবদান রাখবে এই আকড় গ্রন্থটি।
মফিদুল হক আরও বলেন, আজকে হানাহানি খুনাখুনি, সহিংসতা, ধর্মকে অপব্যবহার করে সমাজে মানুষকে বিষাক্ত করে তোলা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে ৯ মাস জুড়ে ধর্মের অপব্যবহার করে মুসলমানদের নির্ধন করেছিল মুসলমানরাই। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তারা ইসলাম রক্ষার নাশে এই নৃশংসতা ঘটিয়েছিল। ফলে আমাদের বুঝতে হবে ধর্মের নাম যারা উচ্চারণ করে তাদের পরীক্ষাটা কোথায়,তাদের প্রকৃত ধর্মটা কোথায়।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে নানাভাবে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে, অন্ধকারের শক্তি মাথা চারা দিয়ে উঠেছে এবং সেই শক্তি আজোও তৎপর। এর বিপরীতে যে লড়াই বাংলাদেশের মানুষ আলাদাভাবে স্বীকৃতি দেয়। সারা বাংলাদেশে যখন অন্ধতা গ্রাস করছে, নারায়ণগঞ্জ তখন আশার আলো ফুটিয়ে রেখেছে। প্র্রকাশনা অনুষ্ঠানের বই দুটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সবকিছু মিলে এই বই দুটি শুধু ইতিহাসের বই নয়, আমাদের আজকের জীবনের বই, জীবনের জটিলতার মধ্য থেকে পথ খুঁেজ পাওয়ার একটি দিক নির্দেশনা। আলোক সন্ধান।
অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আপনারা ৭১ দেখেননি। আমি ৭১ এর ভয়াবতা দেখেছি। আপনারা একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করবেন। তিনি বলেন, জয়বাংলা আপনার-আমার শ্লোগান না, জয়বাংলা-কবি নজরুল এর। সেই জয়বাংলাকে আমরা ধারণ করি, জয়বাংলা শ্লোগান নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছি। আপনারা নিজের ইতিহাসের কথা ভুলে যাবেন না। আপনারা যে ধর্মের হোন ধর্মের ওপর বিশ্বাস রাখবেন, মানুষের ওপর অত্যাচার করবেন না।
সূচনা বক্তব্যে লেখক রফিউর রাব্বি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জের গৌরবের বিশাল একটি ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা যারা নারায়ণগঞ্জে বসবাস করি তা আমাদেরই অজানা। ঢাকা শহরেরও শত শত বছর আগে আমাদের নারায়ণগঞ্জ গড়ে উঠেছিল। এখানে শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা বাণিজ্য-এসবের বিশাল একটি অবয়ব এখানে ছিল। তারপরও আমাদের এই নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। নেতিবাচক ভাবমূর্তি থেকে বের হবার জন্যই সত্যের মুখোমুখি ও সঠিক ইতিহাসটা জানার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের পূর্বসূরী যারা তাদের জানার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি আমাদের উত্তরসূরী যারা তাদেরও জানার প্রয়োজন রয়েছে।