বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করেছেন মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (২১শে জুলাই) দুপুরে ফতুল্লা বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় এই ঘোষনা দেওয়া হয়।
সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, ‘আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় আমার রাজনৈতিক গুরু আনোয়ার হোসেন। নির্বাচনে তিনিই জয়ী হবেন, এত কোন সন্দেহ নাই। কেননা আজ এখানে একই মঞ্চে নারায়ণগঞ্জ মগানগর আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা যেহেতু একবাক্যে তাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেখানে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনে কষ্ট দিয়ে আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা কোন ফালতু লোককে মনোনয়ন দিবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। কেননা তিনি সর্বদাই একটি কথা বলে থাকেন, দলের কর্মীরা দলের সাথে বেঈমানী করলেও তৃণমূল কর্মীরা কখনো দলের সাথে বেঈমানী করে না এবং করবেও না। আর তাই আপনারা যারা তৃণমূলের কর্মী আছেন, তারা যেহেতু আনোয়ার ভাইকে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে সিটি নির্বাচনে দেখতে চান, সেখানে আমি শামীম ওসমানেরও নেত্রীর কাছে তার পক্ষে কোন সাফাই গাইতে হবে না। আপনাদের প্রতি ভালোবাসা রেখে নেত্রী নিজেই আনোয়ার ভাইকে প্রার্থীতা দেবেন। কেউ যদি মনে করে থাকেন যে উপ-মন্ত্রী হয়ে গেছেন বলে তিনিই নৌকার প্রার্থীতা পেতে যাচ্ছেন, তাহলে আমি বলব তিনি ভুল ভাবছেন। উদাহরণ সরূপ, সিটি নির্বাচনের সাড়ে ৪ বছর অতিবাহিত হবার পরে নাসিক মেয়রকে উপমন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতী দেয়া হয়েছে। যা শুরুতেই দেয়া হয়নি। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে আইভীর নাম না থাকা সত্বেও দীর্ঘ ৭ মাস কেন্দ্রে তৃণমূলের তালিকাটি পড়ে থাকলেও সেখানে কোন কাটছিট না করেই কেন্দ্র তাকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষনা দেন। এতেই বোঝা যায় তার প্রতি কেন্দ্রের টান কতটুকু।’
এম এ রশিদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি আর আইভী একই সূত্রে গাঁথা। যতদিন পর্যন্ত ওই চেয়ারটাকে শূণ্য করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ থেকে জঙ্গি দমন করা সম্ভব হবে না। আইভী আর সিটি নির্বাচন এক হতে পারে না। তাকে নিয়ে কোন কথা হবে না। কেননা তিনি আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে আসলেও আ’লীগের কেউ নন। তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না।’
এ্যাড. খোকন সাহা তার বক্তব্যে বলেন, ‘২০০৩ সালে পৌর আমলে যখন সেলিনা হায়াৎ আইভী কে সহ-সভাপতি করে শহর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হলো, তখন এই পদটি তার মনে ধরেনি। এরপর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের কোন সভা-সমাবেশে উপস্থিত হননি। বরংচ এর কিছুদিন বাদেই তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যাহার করে নেন। তিনি সর্বদাই জামায়েত শিবিরের সাথে মিলে রাজনীতি করে গেছেন। তাকে আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে গণ্য করা হয় না। আর তাই সিটি নির্বাচনে তার হাতে কোন ভাবেই নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হবে না।’
নাজমুল আলম সজল তার বক্তব্যে বলেন, ‘আইভী কখনোই আওয়ামী লীগের ছিলনা। এখনো নেই। যে জামাত-বিএনপি’র ছত্র ছায়ায় থেকে রাজনীতি করে, তাকে অবাঞ্চিত করার কিছুই নেই। বরংচ তাকে মাইনাস করেই আমরা রাজনীতি করি।’
এসময় তিনি আনোয়ার হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আসন্ন সিটি নির্বাচনের পূর্বে হয়তোবা কেউ মায়া কান্না করে নেত্রীর কাছ থেকে নৌকা প্রতীক ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মন কোন ভাবেই জয় করতে পারবেন না। সুতরাং যদি আপনি নৌকা প্রতীক নাও পান, তাহলে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আপনাকে যে মার্কা দেব, তাই নিয়ে আপনি নির্বাচনে লড়াই চালিয়ে যাবেন। জয় আমাদেরই হবে ইনশাহ্ আল্লাহ।’
মাহামুদা আক্তার মালা তার বক্তব্যে বলেন, ‘দেশে সর্বত্রই জঙ্গি হামলার হুমকী আসলেও এখনো পর্যন্ত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এবং নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে কোন ধরণের হুমকী আসেনি। এতেই বুঝা যায় তারা জঙ্গিদের মদদ দিয়ে থাকেন এবং তাদের সাথে মিলে কাজ করেন। আসন্ন সিটি নির্বাচনে আমরা এমন কাউকে চাইনা যিনি মিডিয়ার সামনে গেলে আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে নানা রকম কটুক্তি করেন। আমরা আ’লীগের নেতাকর্মীরা এমন ত্যাগী নেতাকে প্রার্থী হিসেবে পেতে চাই, যিনি সুখে দুঃখে সব সময় ছায়ার মত নেতাকর্মীদের পাশে থেকে তাদের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। সেই হিসেবে আনোয়ার হোসেনই হচ্ছেন যোগ্য প্রার্থী। আইভী আমাদের দলের কেউ নয়। তাকে আমরা অবাঞ্চিত ঘোষনা করলাম।’
আনোয়ার হোসেন বলেন, যখন আমরা শামীম ওসমানের বিপক্ষে আন্দোলন করেছিলাম, তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে আইভিকে বহুবার অনুরোধ করেছিলাম আমাদের এই সংগ্রামে অংশ নিতে। কিন্তু তখন তিনি আমাদের ডাকে আসেন নি। অনেকে বলে আমি নাকি সেলিম ওসমানের সাথে আতাত করেছি। সেলিম ওসমান নাকি আমাকে গাড়ী বাড়ী দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আসুন দেখুন আমার কোন গাড়ী আছে কি না, আর আমি সেলিম ওসমানের কাছ থেকে কোন বাড়ী নিয়েছি কিনা। আমার জীবনে আমি কারো কাছে হাত পাতি নাই।
তিনি বলেন, আমি একটি ইন্স্যুরেন্স কম্পাটিতে চাকুরী করি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ্ যেন আমাকে সুস্থ্য অবস্থায় মৃত্যু দান করেন। কারণ অসুস্থ্য অবস্থায় দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকলেও চিকিৎসা করার মত টাকা আমার নেই। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন বঙ্গবন্ধু আর্দশ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শ মোতাবেক থাকবো, গুরু আর শিষ্য একসাথেই থাকবো।
মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. খোকন সাহার সঞ্চালনায় বর্ধিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একে এম শামীম ওসমান, জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সহ-সভাপতি গোপীনাথ দাস, মাসুদুর রহমান খসরু, সামসুজ্জামান খান ভাষাণী, রোকনউদ্দীন আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, এ্যাড. মাহামুদা আক্তার মালা, জিএম আরাফাত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম আরমান, শাহ্ নিজাম, আহসান হাবীব, আইন বিষয়ক সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ আদালতের পিপি এ্যাড. এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. আনিসুর রহমান দিপু, বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিুবর রহমান, কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান নান্নু, সহ-সভাপতি আলী আকবর, মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক মিনহাজুল ইসলাম রিয়াদ, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ, নাসিক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, শারমিন হাবিব বিন্নি, ইসরাত জাহান খান স্মৃতি প্রমুখ।