বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার তিন বছর আজ।
অগ্নিকান্ডের তিন বছর উপলক্ষে দুপুরে নিহতের স্মরণে দোয়া ও মাহফিলের আয়োজন করা হয় সেই কারখানা চত্তরে। এসময় নিহতের স্বজনেরা বিচারসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
সোমবার (০৮ জুলাই) দুপুরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো মালিকপক্ষের আয়োজনে নিহতদের বিদেহি আত্মার শান্তি কামনায় এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়। নিহতের স্বরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
২০২১ সালের ৮ জুলাই সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড কারখানার ৬ তলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে প্রায় ২৯ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনায় আগুনে পুড়ে ওই কারখানার কর্মকর্তা-শ্রমিকসহ ৫৪ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম ও তার চার ছেলেসহ ৮ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তারা গ্রেপ্তার হয়। বর্তমানে আবুল হাসেমসহ ৬ আসামী জামিনে আছেন। পরবর্তীতে এ মামলাটির তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে কারখানা অব্যবস্থানাকে দায়ী করা হয়।
এ ঘটনায় তৎকালীন ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেমসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় নিরাপত্তা না থাকাসহ বিভিন্ন অবহেলার অভিযোগ আনা হয়। সে মামলায় গ্রেপ্তার হন সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ তার চার ছেলে।
পর্বতীতে ২০২৩ সালে আগুনে পুড়ে ৫৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ চার কর্মকর্তা, ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্তবিভাগ(সিআইডি)। তবে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয় এজহারভুক্ত আসামী আবুল হাসেমসহ তার চার ছেলেদের। এতে বিচারকাজ শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ মহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ জানান, এই অগ্নিকাণ্ডে ৫৪ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করে লেবার কোর্টে ৫১টি মামলা হয়েছে। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের পূর্বে আরও একটি মামলা করা রয়েছে বলে জানান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে কমিটি গঠন করেছিল জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কারখানাটি অবহেলার কারণেই এতো শ্রমিকদের মৃত্যু ঘটে। পরে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নিহত ৫৪ জনের পরিবারের সদস্যদের ২ লাখ টাকা করে এবং আহত ৩৮টি পরিবার সদস্যদের ৫০ হাজার টাকা ও কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রদান করে।