বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ১০ বছর আজ। দীর্ঘ বছরে হতাহতের পরিবারগুলো নিম্ন আদালত থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রায় পেয়েছে। আর মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে র্দীঘ সাত বছর ধরে ঝুলে আছে এই সেভেন মার্ডার মামলার বিচার। রায়ের ধীরগতির কারণে হতাশায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সাহায্য সহযোগিতার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবে না হওয়ায় ৭ পরিবারের মধ্যে ৫টি পরিবার অর্থাভাবে অর্ধহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পরিবার এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকারের কাছে তাদের একটাই দাবি, উচ্চ আদালতের রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করে র্যাব। অপহরণের তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায় এক এক করে সাত জনের লাশ ভেসে ওঠে। এ ব্যাপারে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এই চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যবেক্ষণ করে ৩৩ মাস পর এই মামলার রায় প্রদান করেন। রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বাকি ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ আসামি র্যাব সদস্য। পরে আসামি পক্ষের লোকজন উচ্চ আদালতে রায়ের বিপক্ষে আপিল করলে উচ্চ আদালত ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট কাউন্সিলর নুর হোসেন ও বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কামান্ডর মাসুদ রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই রায় মামলার বিচার দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়। কিন্ত আসামি পক্ষ সুপিম কোর্টের আপিল বিভাগে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে এই মামলাটি গতি হারিয়ে যায়। বিগত সাত বছর ধরে মামালাটি বিচার কাজ ঝুলে আছে। বর্তমানে রায়টি হাইকোট থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি অপেক্ষায় রয়েছে।
মামলার বাদী ও নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও রায় কার্যকরের ব্যাপারটি বিলম্ব হওয়ায় সংশয় প্রকাশ করছি। আদালতের এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ৭ খুনের ঘটনাটি শুধু এ দেশেই নয় দেশের বাইরেও নাড়া দিয়েছিল। দেশের বাইরে থেকেও এর সুষ্ঠ বিচারের দাবি উঠেছিল। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলাটি বর্তমানে মহামন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এই খুনের সঙ্গে বিপদগামী কিছু র্যাব সদস্য ও প্রভাশালী সাবেক কাউন্সিলর জড়িত। ওই গোষ্ঠিটি র্দীঘদিন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে না হয়, সেই চেষ্টার তদবির চালিয়ে আসছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে- এমন প্রত্যাশা করেন তিনি। রাষ্ট্রের কাছে তিনি দাবি জানান, এই মামলাটির দ্রুত শুনানি এবং নিষ্পত্তি করে রায়টি দ্রুত কার্যকর করার।