রাণীনগর,নওগাঁ,বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নওগাঁয় ২০ জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ক্যাডারকে ১৫ বছর যাবত খোঁজছে পুলিশ। সেই জেএমবি’র ক্যাডাররা কোথায় কি অবস্থায় আছে তার কোন তথ্য নেই পুলিশের হাতে। এমনকি তাদের ছবিও নেই পুলিশের হাতে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোজাম্মের হক বিপিএম, পিপিএম।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এই ২০জন জেএমবি সদস্যের মধ্যে কয়েকজন বিদেশে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ তাদের পরিচয়, ছবি সংগ্রহ ও বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
জানা গেছে, দীর্ঘ সময় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গোপনে তাদের তৎপরতা চালালেও আভ্যন্তরীণ গ্র“পিংয়ের কারণে পক্ষে-বিপক্ষে অন্ত্রের শক্তির বৃদ্ধির লক্ষ্যে মহড়া চলতো তারা। প্রকাশ্যে ১৯৯৮ সালের ৩ মার্চ আত্রাই উপজেলার যুবলীগ নেতা লাল মোহাম্মদ লালুকে নৃশংসভাবে গলাকেটে হত্যার মধ্য দিয়ে রাণীনগর-আত্রাই উপজেলায় হত্যার রাজনীতি শুরু হয়। শুরু হয় অজানা আতংক। এই হত্যাকান্ডের শিকার আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ।
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন ক্ষমতাশীল এই উপজেলার রাজনৈতিক নেতাদের উপর ভর করে তারা রাজনৈতিক হত্যা কর্মকান্ড চালাতে শুরু করে। কিছু দিনের মধ্যেই রাজনীতিবিদরাই তাদের মূল টার্গেটে পরিণত হয়। একই বছর ২১ মে আত্রাই কৃষকলীগ নেতা গোলাম নবী , ১০ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগ নেতা ও মুনিয়ারী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ মেম্বার, ১৯৯৯ সালে ৩০ মার্চ আত্রাই উপজেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড: সিদ্দিকুর রহমান রাজা ও শ্রমিক লীগের আহবায়ক অরূন সরকারকে চরমপন্থী অর্থাৎ সর্বহারারা গুলি ও গলা কেটে হত্যা করে।
এরপর একের পর এক ২০০০ সালে ১৯ জুন রাণীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসসলাম নজু, ২০০১ সালের ১৫ মার্চ রাণীনগর উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমান ওরফে কানা মজিবর, ২০০২ সালের ১০ জানুয়ারী আত্রাই উপজেলার সিংড়া গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা মজিবর রহমান, ২২ মে আত্রাই উপজেলার যুবলীগ নেতা ভুট্টু প্রাং, ২০০৩ সালের ১২ ফ্রেব্র“য়ারী ঈদের রাতে আত্রাই উপজেলার মদনডাঙ্গা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন, ৩ এপ্রিল ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সালামত হোসেন ওরফে সুবাস চৌধুরী, ২৪ এপ্রিল ভোর রাতে আত্রাই উপজেলার নৈদীঘি গ্রাম ঘিরে চারটি পরিবারের মধ্যে মুনিয়ারী ইউপির নব-নির্বাচিত মেম্বার ও বিএনপির নেতা শুকবর আলীসহ তার ভাই বিএনপির নেতা আব্দুল জব্বার , বিএনপির নেতা মোজাম্মেল হোসেন ও তার ছোট ভাই বিএনপির নেতা ইকবাল হোসেন বিদ্যুৎ , বিএনপির নেতা জাহাঙ্গীর ও শাজাহানসহ ছয় জনকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়। ২১ জুন রাণীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাণীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন মাস্টার, ২২ সেপ্টেম্বর আত্রাই উপজেলার যুবদল নেতা ও ঠিকাদার আইনুল হক ভুট্টু, ২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারী রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আফজাল হোসেনকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করা হয়।
২০০৪ সালে জেএমবির তান্ডবের সময় খেজুর আলী ও আব্দুল কাইউম বাদশা হত্যা বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়। অবশেষে ২০০৫ সালে সরকার জেএমবি’কে নিষিদ্ধ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে একশ’র বেশি জেএমবি ক্যাডারের তালিকা করা হয়। জেএমবি’র তান্ডবের পর থেকে ২০ জন ক্যাডারকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। এদর মধ্যে কয়েকজন বিদেশে রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে। পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক বিপিএম, পিপিএম জানান, সারাদেশে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে ও মানুষের জানমাল নিরাপত্তা দিতে ইতিমধ্যে জেলার ১৯ জন জেএমবি ক্যাডারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও জেএমবি’র তান্ডবের পর থেকে নিখোঁজ ২০ জন জেএমবি ক্যাডারের অবস্থান, খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অপর জেএমবি সদস্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।