হাইকোর্টে রীট ॥ হেফাজতের আল্টিমেটাম ॥ ওসমান বিরোধীদের তৎপরতা ॥ মন্ত্রী-নেতাদের মন্তব্যে বন্দরের শ্যামল কান্তি‘র ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা!
আনিসুজ্জামান অনু,নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
বন্দরের কল্যানদি পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা এখন ব্যাক্তি রেষারেষির গন্ডি পেরিয়ে মহাপ্রলয়ের দিকে ধাবিত হবার উপক্রম হয়েছে। দিনে দিনে নারায়নগঞ্জসহ সারাদেশেই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীর জের ধরে সৃষ্ট উত্তাল তরঙ্গ কোথায় গিয়ে আছড়ে পড়বে তা হয়তো কারো জানা নেই। ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্যসহ ওসমান পরিবার বিরোধীদের উস্কানিমূলক কর্মসূচী আর শ্যামল কান্তি ভক্তের বিচারের দাবীতে শুক্রবারের প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে মুসল্লীদের জমায়েত দেশবাসীর জন্যে আতঙ্কের কারন হয়ে দাড়াচ্ছে বলে অনেকের ধারনা। যদিও সড়ক মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীসহ সকল মন্ত্রীর সম্মতিতেই শিক্ষা মন্ত্রনালয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে এ ঘটনায় এখনো ওসমান পরিবারের কান্ডারী এমপি শামীম ওসমান এবং ওসমান পরিবার বিরোধী হিসাবে পরিচিত নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি কোন মন্তব্য করেননি। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটিসহ উচ্চ আদালতের রীটের মাধ্যমে অনেক সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই এ ব্যাপারে সমাধানজনিত চুড়ান্ত নির্দেশনা মিলতে পারে বলে ধারনা দেশবাসীর।
ঘটনার পর থেকে ওসমান পরিবার বিরোধী গ্রুপের সাথে বামপন্থি নেতাসহ শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে উত্তপ্ত বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করলেও ইসলামী সংগঠনগুলো ছিল নিশ্চুপ। ঘটনার ৬দিন পরে নারায়নগঞ্জ শিক্ষক সমিতি বিব্রতবোধ করে বিবৃতি দিয়েছেন। শুক্রবার জুমআ’ নামাজ শেষে ডিআইটি এলাকায় হেফাজত ইসলামী নেতা মাওলানা আউয়ালের নেতৃত্বে মুসল্লীদের জমায়েত এখন ঘটনায় উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে। উক্ত জমায়েতে বক্তারা ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগসহ আল্লাহকে নিয়ে কটুক্তিকারী শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ফাঁিসর পাশাপাশি তার পক্ষে অবস্থানকারীদের শাস্তির দাবী জানিয়েছে। এ সময় মঞ্চে উক্ত ঘটনার মূল সাক্ষী নির্যাতিত ছাত্র রিফাত উপস্থিত থেকে বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষক শ্যামল কান্তির শাস্তি দাবী করেছে। তাদের দাবী বাস্তবায়িত না হলে বড় ধরনের জমায়েতসহ কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারী দেন মাওলানা আউয়াল।
গত ১৩ই মে ঘটে যাওয়া কল্যানদির পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরোধের জের ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুরো দায়-দায়িত্ব এখন এমপি সেলিম ওসমানের কাধেঁ। ঘটনার ভিডিও সম্বলিত সংবাদ প্রকাশের পর জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমানসহ পুরো ওসমান পরিবারকে ঘায়েল করার “হট ইস্যু” হিসাবে লুফে নেয় তাদের বিরোধী গ্রুপটি। আশ্চর্য্য হলেও সত্যি আল্লাহতায়ালাকে কটুক্তি করার অভিযোগে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবসের ঘটনায় হিন্দুসম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ না আসলেও ওসমান পরিবার বিরোধী গ্রুপসহ বামপন্থী দু‘একটি দলনেতা এবং সরকারী দলের নেতা ও দু‘এক মন্ত্রী সরব হয়ে উঠেন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্যে ঝাঝঁ থাকলেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ নমনীয়ভাবে বিবৃতি দিয়ে থেমে আছেন। স্বরাস্ট্রমন্ত্রী হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেছেন।
তবে ঘটনার পর থেকে এমপি সেলিম ওসমানের নীরবতার কারনে ঘটনার উৎসে থাকা শিক্ষার্থী রিফাত ও তার মায়ের দু‘রকম বক্তব্য আর ত্বকীমঞ্চের নেতাদের উস্কানিমূলক তৎপরতায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এরপরেও সেলিম ওসমানের পক্ষে ব্যবসায়ীদের অগোছালো সংবাদ সম্মেলন ঘটনা আরো জটিল করে তুলে। পরে পরিস্থিতি আঁচ করতে সক্ষম হয়ে গত ১৯মে তারিখে সেলিম ওসমান নিজে সংবাদ সম্মেলনে তার অবস্থান তুলে ধরেন এবং ঘটনার জন্যে লজ্জিত হলেও সৃস্টিকর্তাকে কটুক্তির কারনে শিক্ষককে শাস্তি প্রদানের পক্ষে অটল থেকে ক্ষমা প্রার্থনার দাবী প্রত্যাখ্যাান করেন। এজন্যে যে শাস্তি হউক না কেন তা মাথা পেতে নেবার সম্মতি জানান।
অপরদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ঘটনার পর সেলিম ওসমানের পক্ষে সমর্থন করে বক্তব্য দিলেও গত ১৯ মে সাংবাদিকদের কাছে তার উপরে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে এমপি সেলিম ওসমানের শাস্তি দাবী করে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়াও নিরাপত্তার অজুহাতে এবং উচ্চতর চিকিৎসার সুযোগ নিতে শ্যামল কান্তিকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের প্রমান না পাওয়ায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষককে আবারো স্বপদে বহাল করেছে শিক্ষা মন্ত্রনালয়। পাশাপাশি ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে জেলা প্রশাসনের উপরে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর আগে ঘটনার মূলহোতা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঘটনার পর পরই ভারতে চলে গেছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উক্ত শিক্ষক আবারো তার কর্মস্থলে স্বাভাবিক অবস্থায় যোগ দিতে পারবে কিনা। সূত্রমতে উক্ত প্রধান শিক্ষক ও তার পরিবার হয়তোবা এখন চিকিৎসার অজুহাতে দেশ ছেড়ে যাবার চেষ্টা করছেন।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ আর নারায়নগঞ্জের হাজারো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলাকারী দক্ষ রাজনীতিবিদ এমপি একেএম শামীম ওসমানের তৎপরতা ছাড়া সূষ্ঠ সমাধানের পথ দেখছেন না নারায়নগঞ্জবাসী। তবে এ ধরনের ঘটনায় বন্দরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন বন্দরবাসী।