নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনার খন্ডিত ও একপেশে সংবাদ প্রকাশ করে দানশীল ব্যাক্তিত্ব ব্যবসায়ী নেতা এমপি সেলিম ওসমানের ভাবমূর্তি ক্ষুন করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ও জেলা ভিত্তিক ৪৩টি ব্যবসায়ী সংগঠন। সমাজসেবায় নিবেদিত ও দানশীল এ ধরনের ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে এভাবে অপপ্রচার চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এ শ্রেনীর ব্যাক্তিত্বরা সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে অনীহা প্রকাশ করতে পারেন। যা আমাদের দেশ ও সমাজের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল নারায়নগঞ্জ ক্লাব মিলনায়তনে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে আগত শিক্ষার্থী ও রাজনীতিকদের ব্যাপক উপস্থিতিতে বিকেএমইএর ব্যবস্থাপনায় এ সংবাদ সম্মেলনের আযোজন করা হয়। এতে বিকেএমইএর সহসভাপতি মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহকৃত লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনানোর পরে আরেক সহসভাপতি আসলাম সানি উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি ও ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী,হোসিয়ারী এসাসিয়েশনের সভাপতি নাজমুর আলম সজল,ইয়ান মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা,ক্লথ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক,মুনসুর,আবদুস সোবহানসহ অন্যানরা।
আসলাম সানি তার বক্তব্যে আরো বলেন,সেলিম ওসমান নারায়নগঞ্জের রাজনীতির ধারা পাল্টে দিয়েছেন। উন্নয়নের ধারায় সবাইকে একই প্লাটফর্মে আনার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোটি কোটি টাকা ব্যাক্তিগত অনুদানের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতসহ বিভিন্ন উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে নারায়নগঞ্জকে নীট সেক্টরের স্বর্গরাজ্যে পরিনত বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অর্জনে কাজ করছেন। যে স্কুল নিয়ে ঘটনা সেকানের উন্নযনের জন্যেও সেলিম ওসমান ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এ অবস্থায় ভাল-খারাপকে একসাথে করে কোন উস্কানিতে সহায়তা না করি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিকেএমই সহসভাপতি মঞ্জরুল হক জানান, সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান আমাদের ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছিলেন এ বিষয়ে নীরব থাকার জন্য। কারণ, প্রধান শিক্ষক ধর্ম নিয়ে যে কটুক্তি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল সেই ঘটনাটি বন্দরের ঐ এলাকায় বিস্তরভাবে জানাজানি হলেও ,যাতে ঘটনাটি আরো ব্যাপকভাবে সকল এলাকায় ছড়িয়ে না পরে এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ না পায়। ঘটনাটি একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে কি পরিমান অশান্ত করেছিল যে, ঐ এলাকার মানুষ পবিত্র জুমা‘র নামাজ আদায় না করেই সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে অবস্থান করছিলেন। সেখানে একজন মানুষ হিসেবে অবরুদ্ধ ঐ প্রধান শিক্ষককে সেলিম ওসমান এমপি আরেক জন মানুষ হিসেবে জনরোষের হাত থেকে জীবন রক্ষার্থে চরম অসুস্থ্য শরীর নিয়েও গিয়েছিলেন। প্রধান শিক্ষক সেখানে এমপি সেলিম ওসমানকে কাছে পেয়ে ত্রানকর্তার মতই তার কাছে জীবন বাঁচাতে আবেদন করেছিলেন এবং আনিত অভিযোগ স্বিকার পূর্বক তার (প্রধান শিক্ষক) সম্মতি অনুযায়ী যে ব্যবস্থা গ্রহন করেছিলেন তা দৃষ্টিকটু ও দুখ:জনক হলেও ঐ পরিস্থিতিতে অন্য কোন পথ খোলা ছিল না। সেক্ষেত্রে আপনাদের ও সচেতন মানুষের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তিনি তথা সেলিম ওসমান কি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য নাকি তিরস্কার পাওয়ার কথা ? লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ীরা বলেন, যে কাজটি তিনি করেছেন , যারা বিষয়টি না জেনে এবং জেনেও একপেশে ভাবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন ,তাদের কাছেও প্রশ্ন, ভবিষ্যতে যদি এমন ঘটনা পুনরায় ঘটে তবে জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের বা রাজনীতিক অথবা কোন সচেতন মানুষই কি নিজ দায়িত্বে সেখানে যাবেন এবং কোন অবরুদ্ধকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবেন?
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে পিয়ার সাত্তার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত হোসেন ও তার মা রিনা বেগমের বক্তব্যের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। ইসলাম ধর্ম নিয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত কটূক্তি করেছে বলে রিফাত ও তার মা রিনা বেগম তাদের বক্তব্যে অভিযোগ করেন।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রকৃত সত্য হলো সে দিন এ, কে, এম সেলিম ওসমান, এমপি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিকাল ০৪.০০ ঘটিকায়। অথচ মূল ঘটনা শুরু হয়েছিলো সকাল ১১.০০ ঘটিকায়। এই সময়ের মধ্যে ৩/৪ হাজার উত্তেজিত জনতা সেখানে উপস্থিত ছিলো। পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে খারাপ থেকে খারাপতর হতে যাচ্ছিলো। সেখানে এরমধ্যেই নারায়ণগঞ্জের জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, স্থানীয় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলো। কিন্তু এদের উপস্থিতির মধ্যেই স্কুল শিক্ষার্থীকে মারধর ও ধর্ম নিয়ে কটুক্তির বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পরার কারনে বিক্ষুদ্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে কয়েক দফা এলোপাথারি মারধর করে তার শার্ট প্যান্ট ছিড়ে ফেলে। কোন কিছুতেই পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে না পেরে উপস্থিত বিভিন্ন নের্তৃবৃন্দ স্থানীয় সাংসদ এ, কে, এম সেলিম ওসমান মহোদয়কে সার্বিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে ঘটনাস্থলে আসার অনুরোধ জানান। এরপর বিকাল ৪.০০ ঘটিকায় সাংসদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ঐ সময়ে পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ ছিলো যে, প্রধান শিক্ষক বিক্ষুদ্ধ জনতার চরম আক্রোশের মুখোমুখি হয় এবং ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
সেলিম ওসমান এমপি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর আক্রান্ত প্রধান শিক্ষক এমপি মহোদয়ের কাছে মিনতি করে নিজ কৃতকর্মের জন্য প্রকাশ্যে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে জীবন রক্ষার আবেদন জানান। তখন এমপি মহোদয় পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলদ্ধি করে প্রধান শিক্ষককে বাইরে নিয়ে যান এবং উপস্থিত জনতাকে বলেন, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটুক্তি করে কথা বলায় প্রধান শিক্ষক আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন এবং তিনি (প্রধান শিক্ষক) নিজেই নিজের শাস্তি গ্রহণ করবেন। এছাড়াও এ, কে, এম সেলিম ওসমান, এমপি মহোদয় আরো বলেন স্কুল ছাত্রকে মারধর করার বিষয়টি এবং অন্যান্য কর্মকান্ডের বিষয়টি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর পরপরই প্রধান শিক্ষক মহোদয় তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে কান ধরে উঠবস করতে থাকে। এসময় এ, কে, এম সেলিম ওসমান, এমপি বিক্ষুদ্ধ জনতার উদ্দেশ্যে বলেন প্রধান শিক্ষককে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে। আপনারা রাস্তায় কোন সমস্যা করবেন না। তখুনি এমপি মহোদয় প্রধান শিক্ষককে পুলিশ হেফাজতে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে তাকে থানায় না নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে এবং তাকে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন। এরপর তিনি স্কুল পরিচালনা কমিটি বিলুপ্ত রেখে ইউএনকে বিষয়টি তদন্ত করে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন। যে স্কুলে এই ঘটনা ঘটেছে সেই পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলেও এমপি সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেলিম ওসমান নিজের উপার্জিত প্রায় ২৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। যে ব্যক্তিটির মাত্র দেড় বছরে নিজের কষ্টার্জিত উপার্জন থেকে শিক্ষার প্রসারে সমাজের স্বার্থে কোটি কোটি টাকা অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছেন সে ব্যক্তিটিকে হেয় প্িরতপন্ন করার কারণ রয়েছে কিনা তা দেশের প্রতিটি অসাম্প্রদায়িক সচেতন বিকবেকবান মানুরের কাছে প্রশ্ন। সংবাদ সম্মেলনের গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ীরা জানান, সেলিম ওসমান ঐ দিন হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষের হাত থেকে প্রধান শিক্ষকের জীবন রক্ষা করে ধন্যবাদ পাওয়ার কাজ করেছেন। কিন্তু আমরা ধন্যবাদের বদলে তাকে তিরস্কার করছি।
কারণ, প্রকৃত ঘটনা ও অবস্থা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আমরা ব্যবসায়ী সমাজ চাই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসুক। এ, কে, এম সেলিম ওসমান, এমপিও চান প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসুক। ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশে উক্ত বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। যেহেতু উক্ত বিষয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, সেহেতু তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সাংসদ ও বিকেএমইএ ও এনসিসিআই এর সভাপতি এ, কে এম সেলিম ওসমান এর নামে কোন ধরনের অপপ্রচার না করার আমরা ব্যবসায়ী সমাজ অনুরোধ জানাচ্ছি। আইনকে আইনের গতিতে চলতে দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এর পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় উত্তেজনা দেখা দিলে আযোজকরা তড়িগড়ি সম্মেলনের কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষনা করেন।