স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
দেশে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার কর্তৃক সৃষ্ট সন্ত্রাস, সহিংসতার কারণে গণতন্ত্র অন্ধকারে হারিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, গুম ও হত্যাসহ আতঙ্কের এক অভূতপূর্ব বাতাবরণে দেশের গণতন্ত্র আজ অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।
রবিবার বিকাল ৪টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, দেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ কিছু মানুষের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, অথচ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর এর খড়গ নেমে এসেছে। কারণ যারা বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পাননি তারাই বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারির বেতন কিছুটা বৃদ্ধি হলেও জীবনযাত্রার মান এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এই বেতন বৃদ্ধিতেও তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাড়ী ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যূৎ-পানির বিল প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এদের ক্রয়ক্ষমতা এখন চরম সংকটাপন্ন।
তিনি আরো বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম হু হু করে বেড়েই চলছে। অনেক টাকা দিয়ে সামান্য পরিমান আনাজ-পাতি কেনা যায় ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের এখন নাভিশ্বাস উঠেছে। উদরে প্রচন্ড ক্ষুধা থাকলেও তারা মুখে কিছু বলতে পারছে না। নিম্নবিত্তরা এখন রাস্তায় ভবঘুরে ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছে। আবারো সেই জয়নুল আবেদিনের চিত্রের মতো ডাস্টবিনে কুকুর মানুষ একসাথে খাবার খুটে খাচ্ছে। দেশে আবারো দুর্ভিক্ষের পদধ্বণি শোনা যাচ্ছে। ঢাকার নাভিমূলের যে সমস্ত রাস্তা ভিআইপি রোড বলে পরিচিত, যেসব রাস্তা দিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা যাতায়াত করেন, সেসমস্ত রাস্তার আশেপাশেই ডাস্টবিনে ক্ষুধার্ত মানুষ খাদ্য খুঁজে বেড়াচ্ছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, শনিবার ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে গোটা জাতি হতবাক হয়েছে। সিইসি বলেছেন- কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সহিংসতাই গতকালই ৮ জনের প্রাণ গেছে। প্রাণহানি আর রক্তপাতের বিভৎস পৈশাচিক যে নির্বাচন দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে অথচ সেটিকে আমলে না নিয়ে সিইসি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কোন সুস্থবোধসম্পন্ন মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব কী না এটি আজ দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউপি নির্বাচন নিয়ে এ পর্যন্ত ৭৯ জন মানুষের প্রাণ ঝরে গেছে। অথচ রকিবউদ্দিন সাহেব এটাকে পানিভাত মনে করছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেননি, বরং তিনি নিষ্ঠার সাথে সরকারের চাকুরী করেছেন। তিনি সংবিধান বহির্ভূত বেআইনী কাজ করেছেন বলেই নির্বাচনে এতো রক্তপাত, সহিংসতা ও লোকক্ষয় হয়েছে। কাজী রকিবউদ্দিন দেশে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন, নিশ্চয়ই মেধাবী ছিলেন, আর সেই কারণে সিভিল সার্ভিসে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু এখন তার বক্তব্য ও কর্মকান্ড একেবারেই ভাঁড়ের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থার বিকৃত স্বাস্থ্যবর্ধনে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে ভূমিকা রেখেছেন তা ইতিহাসে কালিমালিপ্ত কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবেই বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রখ্যাত তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়। অথচ আজকেও সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তথ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে অর্ধেকের বেশী ব্যাংক। যদিও এর আগে বেশকিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোপাট হয়ে গেছে, এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকান্ড তথ্য প্রযুক্তির সাথেই সংশ্লিষ্ট। শেয়ার মার্কেট এর নিয়ন্ত্রণও তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত। অথচ শেয়ার মার্কেটের লক্ষ কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজকোষ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি হয়ে গেল। রাজকোষ তথা বাংলাদেশ ব্যাংকও তথ্য প্রযুক্তির নিরাপত্তার চাদরে আবৃত। অথচ জনগণের প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর এতো বড় একজন তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা থাকার পরও রাষ্ট্রীয় তহবিল হরিলুট হলো কী করে। এতো বড় রিজার্ভ চুরির ঘটনার কয়েক বছর আগেই সাইবার হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থচুরির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। অথচ বাংলাদেশ সরকার এই রিজার্ভ চুরির আগে কোন সতর্কতা আমলে নেয়নি। তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ অনেকেই বলেছেন-এই চুরির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা জড়িত। তবে সরকারের উঁচু মহলের কাছ থেকে গ্রীণ সিগন্যাল না পেলে এই চুরির ঘটনা ঘটাতে সাহস পেতো না। ফলে সরকারের প্রচন্ড ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গরাই এই চুরির সাথে জড়িত।