বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সোনারগাঁয়ের গৃহবধু কণিকা হত্যার ন্যায় বিচারের দাবি ও হত্যা কান্ডকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন নিহত কণিকার পরিবার ও এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় নিহত কণিকা আক্তারের মা মোসাম্মৎ মর্জিনা বেগম বলেন, ২০১৬ সালের ৮ মে আমার মেঝ মেয়ে কণিকাকে সোনারগাঁ উপজেলার খৈতারগাও গ্রামের গুলজার হোসেনের বড় ছেলে কুয়েত প্রাবসী বিপুলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । বিয়ের তিন মাস পর বিপুল কুয়েত চলে যান। শ্বশুর বাড়ীতে ভালই চলছিল কণিকার জীবন যাপন। কিন্তু মেয়ের জামাই বিপুল বিদেশ যাওয়ার পর থেকে জামাইয়ের ছোট ভাই দেবর জাহাঙ্গীর কণিকাকে আপত্তিকর প্রাস্তাব দেয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কণিকা আমাকে ফোন করে জানায়। জাহাঙ্গীর কণিকাকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছে। সে রাজি না হওয়ায় তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। বিষয়টি বিদেশ থাকা বিপুলকে জানালে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে কণিকার উপর নানা অজুহাতে দুর্ব্যবহার শুরু করে । কিন্তু গত ২০ জুন আনুমানিক বিকাল ৬ টার দিকে কণিকার দেবর জাহাঙ্গীর ফোন করে আমাকে জানায়, কণিকা পাগলামী করছে আমি কিন্তু বিপুল না আমি জাহাঙ্গীর এসব সহ্য করবো না। তাকে যেন গিয়ে নিয়ে আসি। পরে রাত আনুমানিক ৯:৩০ মিনিটের দিকে ফোন করে জাহাঙ্গীর আমাকে জানায় কণিকার অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাকে দেখতে হলে এখনি যেন আমরা চলে আসি। আমরা সাথে সাথে জাহাঙ্গীরের চাচী শামসুন্নাহারের মোবাইল ফোনে ফোন করে জানতে চাই কণিকার কী হয়েছে? সে আমাদেরকে বলে, কণিকা বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। তার কোন হুশ নেই। মেয়েকে দেখতে হলে এখনি আসেন। জবাবে আমি বললাম, আপনারা ডাক্তার আনছেন? সে আমাকে বলেছিল; ডাক্তার, কবিরাজ সবই এনেছি। ঐদিন রাত ১ টার দিকে আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে নিয়ে কণিকার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখি কণিকার লাশ পড়ে আছে মেঝেতে। মুখমন্ডলে, গলায়, পিঠে, বুকে, হাতে, পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় ও খামছিসহ মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই । কণিকার শ্বশুর বাড়ির লোকজন সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় । পরে সোনারগাঁ থানায় খবর দিলে তখন ঘটনাস্থলে এসআই আপন কুমার মজুমদার এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। মেয়ের লাশ পড়ে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মারের দাগ ও ক্ষত চিহ্ন ছিল। গলায় কাটা দাগ ছিল। আমাদের কাছে লাশের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আপন কুমার মজুমদার মামলা নেওয়ার সময় ৫,০০০ টাকা ও আসামী ধরার সুসংবাদে ৩,০০০ টাকা নেয়। আমি অত্যন্ত গরীব মানুষ। এরমধ্যে শুনতে পাচ্ছি আমার মেয়ে কণিকার ময়না তদন্ত রিপোর্ট নাকি হত্যার পরিবর্তে আত্মহত্যায় চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। ময়না তদন্তে নাকি এমন রিপোর্ট করাও হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে আমার মেয়ে কণিকাকে যে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। সেই ক্ষত চিহ্ন ও লাশের ভিডিও সেই সময় আমার স্বজনরা সংরক্ষণে রেখেছিল। তাহলে কিভাবে ময়না তদন্ত রিপোর্টে আমার মেয়ে কণিকা আত্মহত্যা করেছে বলে ফলাফল এসেছে। আমার কাছে পোস্ট মর্টামের রিপোর্টের প্রতিবেদন রয়েছে। আমি বিভিন্ন লোক মারফত জানতে পেরেছি, মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আপন কুমার রিপোর্টে কোন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। যার ফলে তার যোগসাজোশে এ রিপোর্ট ঘোড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে । তাই আমি পরিবারের পক্ষ থেকে আমার মেয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করছি ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কণিকার পিতা মোঃ কামাল হোসেন, ভাই নুরনবী, বোন রূম্পা, বোন জামাই বাদল, খালা নার্গিস বেগম, চাচা শাহজালাল, মামুন, চেন্নু, মামা নাজিম, বাবু কামাল সহ অনেকেই ।