বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
শহরের মধ্য থেকে বাসস্ট্যান্ড সরানোর ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, শহরবাসী এখন দাবী তুলছেন বাসস্ট্যান্ডটিকে শহরের বাইরে নিয়ে যেতে। স্থানীয় পত্রিকা গুলোতেও এমন সংবাদ ছাপানো হচ্ছে। কিন্তু পরে বাসস্ট্যান্ড সরানোর পর দেখা যাবে ওই একই পত্রিকায় আবার নিউজ হবে বন্দরের মানুষ নদী পাড় হয়ে বাস স্ট্যান্ডে যেতে বাস ভাড়ার অধিক টাকা রিকশা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। করলেও দোষ আবার না করলেও দোষ। কথায় আছে যত দোষ নন্দ ঘোষ। তারপর সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র আমরা সবাই জনপ্রতিনিধি। আমরা জনগনের গোলামি করতে এসেছি। জনগনকে স্বস্তি দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমি জেলা প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ রাখবো পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সাথে আলোচনায় ব্যবস্থা করে তাদের সাথে কথা বলেন। শহরের বাইরে বাস স্ট্যান্ড নির্মাণের জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার জন্য করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করুন তারপর আমি বিদেশ থেকে ফিরে এসে সর্ব সম্মতিক্রমে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। আর শহরে প্রবেশ মুখে অর্থ্যাৎ চাষাঢ়া মোড়ে, রাইফেল ক্লাব ও বাইতুল আমানের সামনে যাচ্ছেতাই ভাবে টেম্পু ও বেবী স্ট্যান্ড করা হয়েছে এ গুলো সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বিত্তবান বা সামর্থবানদের জন্য যে এসি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে ওই বাস কাউন্টারের স্থানে যাতে করে বিত্তবানদের সুবিধা দিতে গিয়ে একটির অধিক বাস রেখে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করা হয় সেই বিষয়টির প্রতি নজর দিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
রোববার ৬ আগষ্ট বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শহরে সৃষ্ট যানজট এবং ট্রাকে মালামাল লোড-আনলোড করার ব্যাপারে নিতাইগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফার্টিলেজার অ্যাসোসিয়েশনের সাথে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের ৫জন সংসদ সদস্য সিটি করপোরেশনের মেয়র, ডিসি এবং এসপিকে নিয়ে যে দিন এক টেবিলে বসতে পারবো আমি মনে করবো সেদিনই আমার কাজ শেষ। যেদিন সবাইকে নিয়ে এক টেবিলে বসতে পারবো সেদিন থেকে নারায়ণগঞ্জে বিরাজ করবে শান্তি আর উন্নয়ন হবে আরো অনেক বেশি গতিশীল। আশা করছি সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের পরিবর্তন আনতে সকলে যেভাবে সহযোগীতা করছেন এভাবে সহযোগীতা করলে খুব দ্রুতই আমরা প্রাচ্যেরডান্ডির ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে একটি শান্তির নগরী প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ীদের জন্য ৩০টি, ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের জন্য ৩০টি এবং ফার্টিলেজার অ্যাসোসিয়েশনের ২০টি সহ মোট ৮০টি ট্রাক দিনের বেলায় শহরে প্রবেশ করে মালামাল লোড-আনলোড করতে পারবে। তবে কোন অবস্থায় কেউ রাস্তায় ট্রাক রেখে সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারবে না। আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক জেল দেওয়ার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এবং উক্ত বিধানে সকল ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সম্মতি প্রকাশ করেছেন। ৮০টি ট্রাকের মধ্যে প্রতিটি ট্রাক আগের নিয়মেই ৩ ঘন্টা অবস্থান করতে পারবে। এর বাইরে অন্যান্য জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে আসা অতিরিক্ত ট্রাক গুলো পঞ্চবটিতে সিটি করপোরেশনের ট্রাক স্ট্যান্ডে অবস্থান করবে। প্রতিটি ট্রাক নিউ মেট্রো হলের মোড় হয়ে শহরে প্রবেশ করবে। প্রবেশকালে মেট্রো হল মোড় একটি টোকেন দেওয়া হবে এবং মন্ডলপাড়া বিজ্রের সামনে থেকে আরো একটি টোকেন দেওয়া হবে। মন্ডলপাড়া থেকে টোকে দেওয়ার পর নির্ধারিত ৩ ঘন্টা সময় হিসেব করা হবে। ট্রাক প্রবেশের এই নিয়মকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করা হবে। এছাড়াও রাতের বেলা রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত পন্য লোড আনলোড করা যাবে। যত দিন পর্যন্ত নিতাইগঞ্জ এলাকায় রেলওয়ের জমিটিতে একটি স্ট্যান্ড তৈরি করা সম্ভব না ততদিন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। সংসদ সদস্য, সিটি মেয়র, ডিসি, এসপি এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ আমরা ওই জায়গা গিয়ে বিধি মোতাবেক নিয়ম মেনে জায়গাটি খালি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আপাতত নিতাইগঞ্জ এলাকায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ৪০জন আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ মাস আনসার সদস্যদের পারিশ্রমিকের টাকা এমপি সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রদান করা হবে।
গত ১ আগষ্ট থেকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আনসার সদস্যদের পারিশ্রমিক ও উৎসব ভাতা বাবদ সেলিম ওসমান তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ২০০ টাকার চেক জেলা প্রশাসক রাব্বি মিঞার হাতে তুলে দেন। পরে রাব্বি মিয়া উক্ত চেকটি জেলা আনসার কমান্ডার লুৎফর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেলিম ওসমান বলেন, আমি সিটি মেয়র আইভিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি উনি সিটি করপোরেশন এলাকায় আমাকে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। আজকে উনি এখানে উপস্থিত থাকলে অনেক সুবিধা হতো। সিটি করপোরেশন থেকে কত গুলো রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এবং শহরে কত গুলো রিকশা চলাচল করছে। শহরে প্রবেশ করা অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রন করা গেলে যানজট আরো কমে যাবে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন দেওয়া রিকশা গুলোতে ডিজিটাল প্লেট লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। যাতে করে শহরে প্রবেশমুখেই ওই ডিজিটাল প্লেটে স্ক্যানার ধরলেই বুঝা যাবে রিকশাটির অনুমোদন আছে কিনা। এ পদ্ধতিটি বাস্তবায়ন করতে সিটি করপোরেশন প্রয়োজনে ব্যবসায়ী সংগঠন গুলোর সহযোগীতা চাইতে পারেন। যে কোন ব্যবসায়ী সংগঠন সিটি করপোরেশনকে স্পন্সর করতে পারে।
জেলা প্রশাসক রাব্বি মিঞার সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা পুলিশ সুপার মঈন উল হক, এডিএম হামিদুল হক, আনসার জেলা কমান্ডার লুৎফর রহমান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন পারভেজ, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না, সিটি করপোরেশনের ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, আটা ময়দা মিল মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন, অটো ফ্লাওয়াল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ ওয়াজেদ আলী বাবুল, সুগার ওয়েল মিল মালিক সমিতির সভাপতি শংকর সাহা, ট্রাক, ট্যাংকলরী কর্ভাট ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাসুদুর রহমান মানিক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।