বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ে ব্যাংকার স্বামী ও সন্ত্রাসী দেবরের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই সন্তানের জননী শিরিন আফরোজ শিলা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। ঈদের আগের দিন তাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার শিলার পরিবার এখন আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সিদ্ধিরগঞ্জের পূর্ব সানারপাড় এলাকায়। যৌতুকের দাবিতে গত ১০ বছর ধরে নির্যাতনে চালিয়ে যাচ্ছে স্ত্রী শিলার উপর।
জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের পূর্ব সানারপাড় এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল মান্নানের বড় মেয়ে শিরিন আফরোজ শিলার সঙ্গে ২০০৭ সালে ১৯ মে চাঁদপুর জেলার কচুয়ার থানার মালিগাঁও গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে মাসুম বিল্লালের বিয়ে হয়। বিয়ের পর গৃহবধূর শিলার বাবা আঃ মান্নান জামাতা মাসুম বিল্লাল ও মেয়ে শিলার চাকুরির ব্যবস্থা করে দেয়। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রী পূর্ব সানারপাড় এলাকায় ফুলবর আফাজ হাউজে ভাড়ায় বসবাস করে আসছে। বর্তমানে স্বামী মাসুম বিল্লাহ মিউচুয়্যাল ট্রাষ্ট ব্যাংকের মার্চেন্ট ব্যাংক শাখা, এমটিভি টাওয়ার, বাংলা মটর, ঢাকায় কর্মরত আছে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক নিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-ঝাঁটি লেগে থাকায় কলহের সৃষ্টি হয়। সব সময়ই স্বামী তার স্ত্রী শিলাকে নির্যাতন করে আসছে। বিয়ের দশ বছরে তাদের রয়েছে মেয়ে মাইশা (৮) ও ছেলে মাহিন (৫)। গৃহবধূ শিলার উপর নির্যাতন চালাতে স্বামী মাসুম বিল্লাহকে সমর্থক দিচ্ছে গৃহবধূর শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারা বিয়ের ১০ বছরে নানাভাবে মানষিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে আসছে শিলার উপর। নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে শিলার বাবা বাধ্য হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি জিডি (নং ৫৬৯, তাং- ১৫/০২/১৪ ইং) করেন। উক্ত জিডিতে শিলাকে অমানুষিক নির্যাতন করার কথা এবং শিলার ভাই আরমানকে হত্যার হুমকির কথা উল্লেখ রয়েছে। জিডির পরও স্বামী মাসুম বিল্লাহর নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বরং আরও বেড়ে গেছে। দিনের পর দিন পর্যায়ক্রমে শিলার উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জুন ঈদের আগের দিন স্বামী ও দেবর শিলার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। এসময় দেবর পলাশ মাইশা ও মাহিনের সঙ্গে অশোভন করলে এর প্রতিবাদ করে শিলা। এ সময় স্বামী পলাশকে বাঁধা না দিয়ে উল্টো শিলাকে মারধর করার নির্দেশ দেয়। এক পর্যায়ে দেবর পলাশ ভাবী শিলাকে বেধরক মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। তাদের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে স্বামী ও দেবরকে আটক করে রাখে। রক্তাক্ত আহত অবস্থায় গৃহবধু শিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে মেয়ে শিলা হাসপাতালের বেডে শুইয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। শিলার অবুঝ সন্তান মাইশা ও মাহিনকে গৃহবধূর পিতা আব্দুল মান্নান তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন।
গৃহবধু শিলা জানায়, যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বশুর বড়ির লোকজন তাকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। ঈদের আগের দিন স্বামীর নির্দেশেই দেবর তাকে বেধরক মারধর ও রক্তাক্ত করেছে। বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী যৌতুকের জন্য মারধর করে আসছে। শুধুমাত্র সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করে নীরবে সংসার করে যাচ্ছি। কিন্তু ঈদের আগের দিন পলাশের বেধরক মারধর তাকে বেশি কাবু করে ফেলেছে। তিনি আরও জানান, শ্বশুর বাড়ির লোকজন বিশেষ করে দেবর তোফাজ্জল হোসেন পলাশ ও মাহমুদুল্লাহ সোহেল, মা মাহামুদা বেগম, ভগ্নিপতি আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল কাদের, স্বামীর বোন তাসলিাম আক্তার, আসমা আক্তার। বর্তমানে শিলা চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। মেয়ের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান জানায়, বিয়ের পর থেকেই মেয়েকে নির্যাতন করছে জামাতা মাসুম বিল্লাহ ও তার বাড়ির লোকজন। এরা শুধু মেয়েকে নয় আমার একমাত্র ছেলে আরমানকেও হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। তিনি আরও জানান, বিয়ের সময় তাদের দাবিকৃত ৫ লাখ টাকার মালামাল দেয়া হলেও মেয়ের উপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। আমি কষ্ট পাব বলে মেয়ে আমাকে সব সময় নির্যাতনের কথা বলে না। আমি নাতি ও নাতনির মুখে নির্যাতনের কথা শুনি। জামাতার ভাই পলাশ আমাকে ও আমার ছেলে আরমানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে আমি তাদেরকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিকার দাবি করছি।