অরুন কুমার দেঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট,বিজয় বার্তা ২৪ ডেস্ক
আসলেও আমরা জানিনা। কী কারনে প্রায় দেড়যুগ ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান হচ্ছেনা। সেই কবে পুলিশ সুপার মমিনউল্লাহ্ পাটোয়ারী থাকতে ওসমানী ষ্টেডিয়ামে বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান হয়েছে তা হয়তো অনেকেরই মনে নেই। যে সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন আবদুল মতিন চৌধুরী। তারপর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আরো একটি ক্রীড়ানুষ্ঠান হয়েছিলো মাসদাইর পুলিশ লাইন মাঠে। সে সময়ে পুলিশ সুপার ছিলেন মনে হয় মালেক খসরু। যার সময় পুলিশ লাইনে স্থাপিত হয়েছিলো ‘সুজন বাদিয়ার ঘাঁট’। আর বোরহান সিদ্দিকী ছিলেন তৎকালীন সময়ের আইজিপি।
তারপর থেকে কতো এস পি এ জেলায় এলেন আর গেলেন তবে কেনো জানি তাঁরা আর কোন বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান করতে পারলেননা। ভূত ভবিষ্যতে করতে পারবেন এমন সম্ভাবনাও নেই। কেনো, তা খোদ পুলিশের লোকেরাও হয়তো বলতে পারবেনা। ভুল না করলে সে সময়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উঠিয়ে জাকজমক ভাবে ক্রীড়ানুষ্ঠান করা হতো। এমন কী তৎকালীন সময়ে টানবাজার নিষিদ্ধ এলাকা থেকেও ক্রীড়ানুষ্ঠানের জন্যে আর্থিক সহযোগিতা করা হতো বলে শহরে নিরব প্রচার ছিলো। মুদ্দা কথায় জেলা পুলিশের ক্রীড়ানুষ্ঠানকে সফল করতে সাদা ও কালো টাকা বলতে তখন কিছু ছিলোনা। যে ক্রীড়ানুষ্ঠানে বিশেষ শ্রেনী পেশার মানুষজনেরা অংশ গ্রহন করতো। যেখানে ছিলো নানা ধরনের খেলাধূলা। ছিলো বাহারী খাবার দাবার, গানবাঁজনা ও র্যাফেল ড্র সহ নানা রকমের পুরস্কার। এতে করে পুলিশ ও সাধারণ জনগনের সম্পর্ক আরো শক্ত হতো। ‘পুলিশ জনগনের বন্ধু’ কথাটিকে কেউ কথার কথা বলতে পারতোনা। উভয়ের মধ্যে ঐক্য ও একতা সব বিপদকে মোকাবেলা করতে সহায়তা করতো। অথচ, এখনো এ জেলায় সেই মাঠ যেমনি ছিলো তেমনি রয়েছে। আরো রয়েছে বাঘা বাঘা পুলিশ কর্মকর্তাও ।
নেই শুধু বরাবরের মতো পুলিশের সেই বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান। মনে হয় জেলা পুলিশের সব সখ ও আনন্দ সেই পুলিশ সুপারের করা সুজন বাদিয়ার ঘাঁট দিয়ে পালিয়ে গেছে। তা’নাহলে বর্তমান পুলিশ সুপারদের মধ্যে ক্রীড়ানুষ্ঠান বিষয়টি স্থান পাচ্ছেনা কেনো। বছর আসে-বছর যায় কখনো খেলাধূলা হয়না। নিয়মানুযায়ী নিয়ম পালন করাইতো পুলিশের আসল নিয়ম। তারপরও কেনো পুলিশ বার্ষিক খেলাধূলাকে হেলা-ফেলা করছেন তা কারো বোধগম্য নয় ।
বিজ্ঞরা বলেন, জেলায় ব্যবসায়ী নেতা ও শিল্পপতিদের অভাব নেই। হাত বাড়ালেই টাকা পাওয়া যাবে। বছরে একটি কেনো দু’টি ক্রীড়ানুষ্ঠান হলেও টাকার অভাব হওয়ার কথা নয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি তারপরও তাঁদের মধ্যে বছরে একবার খেলার ছলে চোর-পুলিশ খেলাও হচ্ছেনা ! সঙ্গত কারনেই আমরা ধরে নিতে পারি পুলিশের ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই ইচ্ছে পূরণ হতো। আসলে আমাদের মধ্যে সেই পুলিশ সুপার মমিনউল্লাহ্ পাটোয়ারী ও মালেক খসরুর মতো মানুষের বড় অভাব। কোথাও না কোথাও মন মনন ও মানুষিকতার ঘাটতি রয়েছে। চিন্তা ও চেতনায় অভাব আছে। আর এ কারনেই পুলিশ ও জনগনের সাথে দূরত্ব দিন দিন বাড়ছে। বন্ধুু কথাটি ক্রমশই শক্রতে পরিনত হচ্ছে। লোকে বলেন, আজকাল পুলিশ নানা কাজে ব্যস্ত। খেলাধূলার কথাটি তাদের মাথায় খেলেনা। যদি খেলেই থাকতো তা’হলে একমাত্র জেলা ডিবি’র কথিত গ্রেফতার বানিজ্যের টাকা দিয়েই একটি বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান সুন্দরভাবে হয়ে যেতো। ডানে বামে তেমন হাত বাড়াতে হয়তো হতোনা। সে সাথে জেলা ডিবি’র মাথা থেকে দুর্নীতির বোঝাও কমতো। কথায় কথায় পুলিশ পত্রিকার সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসতোনা। শেষে এসে বর্তমান পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে বিনীতভাবে একটি আবেদনই করবো পুলিশের জন্যে একটি ক্রীড়ানুষ্ঠান করতে আপনার উদ্যোগ ও ইচ্ছেটাই যথেষ্ট। সহযোগিতার জন্যে জেলাবাসীতো বরাবরের মতো আপনাদের সাথে থাকবেই ?
(অরুন কুমার দেঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট)।