বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
মাত্র ৬ বছরের শিশু কন্যা কায়নাত। তার সমবয়সের শিশুরা যখন স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে, খেলাধূলা করে শৈশব উপভোগ করছে ঠিক সেই বয়সে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছে কায়নাত। বিভিন্ন জটিল সব রোগ নিয়ে বেঁচে আছে শিশু কায়নাত। তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতোটাই কমে গিয়েছে যে তার শরীরে শ্বেত কনিকা উৎপন্ন হয়না। এছাড়াও তার হার্ট প্রায় ৬৯ শতাংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সাথে বাত জ্বর। সব কিছু মিলিয়ে শিশু কায়নাতের জীবন এখন দূর্ভিষহ যন্ত্রনা দায়ক। শিশু কায়নাতকে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। ইতোমধ্যেই জান্নাতের চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার মাধ্যমে ৬৫ হাজার টাকা তার মায়ের হাতে তুলে দিয়েছেন সেলিম ওসমান। যা দিয়ে কায়নাতের মা রেশমা আফরোজি তাকে নারায়ণগঞ্জের কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকার ল্যাবএইড এবং পিজি হাসপাতালের চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু হাপসাতালের চিকিৎসকেরা কায়নাতকে আরো চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। কায়নাতের উন্নত চিকিৎসার জন্য সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ১৬ মে মঙ্গলবার ঢাকার পিজি হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে কায়নাতের মা বেশমা আফরোজির হাতে আরো ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেক তুলে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকায় মেয়ে কায়নাতকে নিয়ে বসবাস করেন রেশমা আফরোজি। মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে পৃথিবীর আলো দেখলেও নিজের জন্মদাতা পিতাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি শিশু কায়নাতের। কায়নাত যখন তার মায়ের গর্ভে ৫ মাসের তখন একটি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় কায়নাতের বাবা জসিম উদ্দিন। মেয়ে বুকে আকড়ে ধরে বেঁচে আছেন মা রেশমা আফরোজি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। গর্ভ থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগের সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহন মেয়ে কায়নাত। প্রথম অবস্থায় কায়নাতের এসব সমস্যা সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারেনি মা রেশমা আফরোজি। কায়নাতের বয়স যখন মাত্র ৩ বছর তখন ঘন ঘন জ্বর আসার কারনে তার চিকিৎসা করতে গিয়ে এসব সমস্যার কথা জানতে পারেন তিনি। তখন থেকেই নিজের সর্বস্ব দিয়ে কায়নাতের চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন।
রেশমা আফরোজি বর্তমানে সৈয়দপুর এলাকায় একটি পরিবার পরিকল্পনা অফিসে চাকরি করছেন। কায়নাতকে লেখাপড়া করানোর জন্য গত বছর সৈয়দপুর এলাকায় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভর্তি করে ছিলেন। কিন্তু স্কুল চলাকালীন সময় কায়নাত জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় তাকে আর স্কুলে না পাঠানোর জন্য স্কুলের শিক্ষকেরা কায়নাতের মাকে জানিয়ে দেন। এছাড়াও শারিরীক অসুস্থ্যতার কারনে কায়নাত নিজেও ঠিক মত স্কুলে যেতে পারতেন না। নিজের সর্বস্ব দিয়ে কায়নাতের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে যখন তার মা হিমশিম খাচ্ছিলো তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সাপোর্টাস ফোরামের পেইজের ইনবক্সে কায়নাতের বেশ কয়েকটি ছবি সহ তার চিকিৎসার জন্য সহযোগীতা চেয়ে এমপি সেলিম ওসমানের কাছে মেয়েকে বাঁচাতে চিকিৎসার সহযোগীতার জন্য আবেদন করেন। ম্যাসেজটি সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের দৃষ্টিতে আসলে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্নার মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে কায়নাতের চিকিৎসার জন্য প্রথমে ৪৫ হাজার টাকা মুন্নার মাধ্যমে কায়নাতের মায়ের হাতে তুলে দেন। এতোদিন ওই অর্থেই কায়নাতের চিকিৎসা করে চল ছিলো। কিন্তু চিকিৎসকেরা কায়নাতকে আরো উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন এবং যথেষ্ট ব্যয় বহুল। তাই কায়নাতের উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার ১৬মে সন্ধ্যায় ঢাকার পিজি হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে তার মায়ের হাতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন এমপি সেলিম ওসমান। এ সময় তিনি কায়নাতের সাথে কথা বলেন এবং তার মায়ের কাছ থেকে তার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিভিন্ন খোঁজ খবর নেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না।
শিশু কায়নাতের মা রেশমি আফরোজি জানান, তিনি যখন তার মেয়ের চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারছিলেন না। তখন তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের কাছে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সহযোগীতা চেয়ে হাত পাতলে এমপি সেলিম ওসমান তার মেয়েকে বাঁচাতে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ যেন তার মেয়ের জন্য ফেরেস্তা রূপে এমপি সেলিম ওসমানকে তার কাছে পাঠিয়েছেন। মেয়ের চিকিৎসার সহযোগীতা জন্য তিনি সেলিম ওসমানের সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আল্লাহ দরবারে দোয়া ও ২টি নফল রোজা আদায় করেছেন। কিন্তু তার খুব আক্ষেপ ছিল যার সহযোগীতায় মেয়ের চিকিৎসা হচ্ছ তাকে একটি বার চোখের সামনে দেখার। শিশু কায়নাতেরও ইচ্ছা ছিলো সেলিম ওসমানকে স্বচক্ষে কাছ থেকে দেখার। আজকে তাদের সেই ইচ্ছাও পূর্ন হয়েছে।
রেশমি আফরোজি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জে এমপি সেলিম ওসমানের মত আরো অনেকেই আছে যারা অনেক বৃত্ত শালী। উনার মত অন্যরাও যদি এমন অসহায় মানুষদের সহযোগীতায় হাত বাড়িয়ে দিতেন তাহলে হয়তো আমাদের মত মানুষ গুলোর দু:খ কষ্ট লাঘব হয়ে যেত।