বিজয় বার্তা২৪ ডটকমঃ
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আপন জুয়েলার্সের মত অন্য জুয়েলারি কোম্পানির বিরুদ্ধেও অভিযান চালাবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সোমবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বনানীর একটি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় আপন জুয়েলার্স এর অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম এর ছেলে সাফাত আহমেদের জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করে। পাশাপাশি রবিবার থেকে অবৈধ স্বর্ণ ব্যবসার অভিযোগে আপন জুয়েলার্স এর বিভিন্ন শোরুমে অভিযান পরিচালনা করছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
ডার্টি মানি’র খোঁজে সোমবার পর্যন্ত আপন জুয়েলার্সের ছয়টি বিক্রয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দারা। গত ২৮ মার্চ দিলদারের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ বনানীর একটি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গত ৬ মে করা একটি মামলায় অভিযোগ উঠে। এরপর নানা ঘটনাপ্রবাহের পর আপন জুয়েলার্সের ‘ডার্টি’ মানি’ খুঁজতে অভিযানে নামার কথা জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দারা।প্রথম দিনের অভিযানে রাজধানীতে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এর মধ্যে বন্ধ পাওয়া একটি বিক্রয়কেন্দ্র সিলগালা করে দেয়া হয়। অন্য চারটি বিক্রয় কেন্দ্র ডিসিসি শাখা, মৌচাক শাখা, ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ার শাখা ও উত্তরা থেকে জব্দ করা হয় ২৮৬ কেজি স্বর্ণ এবং ৬১ গ্রাম হীরা।
সোমবার গুলশানে আপন জুয়েলার্স এর প্রধান শোরুমে অভিযান চালানো হয়। সেখানেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান। এমন অভিযান কি শুধু আপন জুয়েলার্স এর বিরুদ্ধেই চলবে, নাকি অন্য জুয়েলারি কোম্পানিগুলোও এর আওতায় আসবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সবখানেই এমন অভিযান চলবে।স্বর্ণ ব্যবসায়ী মেসার্স আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম ও তার ছেলে সাফাত আহমেদের চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। কোন কোন তথ্যে দেখা যায়, মেসার্স আপন জুয়েলার্সের মালিকগণ অবৈধ ব্যবসার আড়ালে ‘ডার্টি মানি’ অর্জন করেছেন, যা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এমন ঘটনায় এই ডার্টি মানির যোগসূত্র রয়েছে বলে শুল্ক গোয়েন্দার কাছে প্রতিয়মান হয়েছে।রবিবারের অভিযানে আপন জুয়েলার্স, মৌচাক মার্কেট শাখায় সর্বমোট ৫৩,৫১৮.০২ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য ১৯ কোটি ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭১.২ টাকা, এই শাখায় প্রাপ্ত ডায়মন্ডের অলংকারের ওজন ১৭.৩৫ গ্রাম, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২ কোটি ৩৭ লাখ ,৮৯ হাজার ৩০০ টাকা। সীমান্ত স্কয়ার শাখায় ৮১,৬৮৮.৬ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য ৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪১ টাকা, এই শাখায় প্রাপ্ত ডায়মন্ডের অলংকারের পরিমাণ ৩৩.৪৪ গ্রাম, যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ১০০ টাকা । উত্তরা শাখায় ৮২,০০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য ৩২ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এই শাখায় প্রাপ্ত ডায়মন্ডের অলংকারের পরিমাণ ৯.৭ গ্রাম, যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং ডিসিসি মার্কেট শাখায় ৬৮,৪৬২.৩০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য ২৫ কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ২৪৮ টাকা।রবিবারের অভিযানে উদ্ধার করা স্বর্ণ ও ডায়মন্ড সাময়িকভাবে আটক করে শুল্ক আইনের বিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠানসমূহের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এখন এসব মূল্যবান পণ্যের কাগজ-পত্রাদি গভীরভাবে যাচাই করা হবে। এই অনুসন্ধানে কোন অনিয়ম প্রমাণিত হলে আপন জুয়েলার্স ও তার মালিকদের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রবিবারের অভিযানে স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের বৈধ উৎস ও পরিশোধযোগ্য শুল্ককরাদি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আপন জুয়েলার্সের এ সকল শাখা কর্তৃক উপস্থাপিত দলিলাদি অভিযান পরিচালনাকারি দলের নিকট অপর্যাপ্ত প্রতিয়মান হয়েছে। তাছাড়া উপস্থাপিত দলিলাদিতে উল্লিখিত স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের পরিমাণের সাথে ইনভেন্ট্রিকৃত স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের পরিমাণের গরমিল পাওয়া যায়। উপস্থাপিত দলিলাদি অধিকতর পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, গত ৫ বছরে দেশে কোন বাণিজ্যিক আমদানি না থাকায় প্রাথমিকভাবে শুল্ক গোয়েন্দার কাছে তাদের স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের ব্যবসায় ‘অস্বচ্ছতা’ প্রতিয়মান হয়েছে।