নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত ভাষা সৈনিক ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের বধূ মরহুমা নাগিনা জোহার চেহলাম উপলক্ষ্যে দোয়ায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমে ছিল। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী সাংগঠনের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সহ নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ উক্ত দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন।
শুক্রবার ১৫ এপ্রিল বাদ জুম্মা নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় কবরস্থানে চেহলাম উপলক্ষ্যে মরহুমার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছিল।
দোয়া শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে নেওয়াজ বিতরন করা হয়।
প্রয়াত ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা ছিলেন ভাষা সৈনিক ও স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন, সাবেক এম এল এ, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহোচর ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠার অন্যতম ব্যক্তিত্ব মরহুম একেএম শামসুজ্জোহার স্ত্রী।
এছাড়াও তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে সব থেকে বেশি ৪ মেয়াদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমান এবং উক্ত আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের গর্ভধারিনী রতœগর্ভা মা।
চেহলাম উপলক্ষ্যে দোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মরহুমা ছোট ছেলে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নাতি অয়ন ওসমান, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সিনিয়র সহ সভাপতি মঞ্জুরুল হক, জাতীয় যুব সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন, বিকেএমইএ এর সহ সভাপতি(অর্থ) জিএম ফারুক, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মাচেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর পরিচালক ফারুক বিন ইউসুফ পাপ্পু, মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগ নারায়ণগঞ্জ শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, সহ সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, আলীরটেক ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্ব›দ্ধীতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান কলম, সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ।
প্রসঙ্গত নাগিনা জোহা বার্ধক্য জনিত কারনে অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐতিহাসিক ৭মার্চ মৃত্যুবরন করেন। তিনি গত ১ মার্চ থেকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং ৬ মার্চ থেকে তিনি লাইফ সার্পোটের থাকার পর ৭মার্চ দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যু নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরে শোক পালন করা হয়। মরহুমার মৃত দেহে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সহ নারায়ণগঞ্জের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মাসদাইর করবস্থানে বড় ছেলে প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য নাগিনা জোহা ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার কাশেম নগরে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের পরিবারের পূর্বপুরুষদের নামানুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয়। বাবা আবুল হাসনাত ছিলেন সমাজ হিতৈষী ও কাশেম নগরের জমিদার। তিনি শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠ পোষকতায় বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। নাগিনা জোহার বড় চাচা আবুল কাশেমের ছেলে আবুল হাশিম ছিলেন অবিভক্ত ভারতবর্ষের মুসলীম লীগের সেক্রেটারি ও এমএলএ। চাচাতো ভাই মাহবুব জাহেদী ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ভাগ্নে পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট নেতা সৈয়দ মনসুর হাবিবুল্লাহ রাজ্য সভার স্পিকার ছিলেন। নাগিনা জোহা ১৯৫০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদালয়ের অধীনে মেট্টিক পাস করেন। ১৯৫১ সালে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের সন্তান রাজনীতিবিদ এ কে এম শামছুজ্জোহার সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। স্বামীর বাড়িতে নতুন বউ হিসেবে এসেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর শ্বশুর তৎকালীন এমএলএ খান সাহেব ওসমান আলীর চাষাঢ়ার বাড়ি ‘বায়তুল আমান’ ছিল আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু।