বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্ত্বরে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধন করেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেছেন, কারু শিল্পীদের তৈরী কারুপন্য বিপননের মাধ্যমে অর্থনীতিকে আমরা গতিশীল করতে পারি। এতে করে দেশীয় অর্থনীতি আরো বেশী চাঙ্গা করা সম্ভব। সরকারী ভাবে সৃজনশীল (কারু পন্যের) অর্থনীতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, শিল্প সংস্কৃতি শুধুমাত্র বিনোদনের উপকরন নয়, এটি অর্থ উপার্জনেরও মাধ্যম। রাজনীতির পাশাপাশি শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতির উন্নতির প্রয়োজন। এগুলোর উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয় না। তাই সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চার প্রয়োজন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্ত্বরে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আসাদুজ্জামন নূর কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য হলো লোক সংস্কৃতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরানো নির্দশন সংরক্ষন ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গবেষনা করা এবং গবেষনা গ্রস্থ প্রকাশ করা। মন্ত্রী মাসব্যাপী মেলা প্রসঙ্গে বলেন, কারুশিল্পীদের প্রশিক্ষন দিয়ে কারুপল্লী স্থাপন করে স্থায়ী মেলায় রূপ দেওয়াই হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য। মানুষ যখনই এখানে আসবে তখন মেলা দেখতে পাবে। প্রতি বছর লোক ও কারুশিল্পীদের মেলার মাধ্যমে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার কারু পল্লী তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
ফাউন্ডেশন চত্ত্বরের সোনারতরী মঞ্চে মেলা উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আক্তারী মমতাজ, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সোনারগাঁও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার সোহেল রানা। এসময় আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সঙগঠনের নেতৃবৃন্দ, জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী প্রাচীন জনপদ পানাম নগরী নিয়ে বলেন, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের বড় সর্দার বাড়ির মতো পানাম নগরীকে সংস্কার করে আদি রূপ ফিরিয়ে আনা হবে। ইতিমধ্যে পানাম নগরীর ৫২টি বাড়ির সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। পরে মেলা চত্বরের বিভিন্ন ষ্টল পরিদর্শন করেন। এর আগে মন্ত্রী ফাউন্ডেশন চত্বরে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। এবারের মেলার আকর্ষণ গ্রামীন লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম “মৃৎশিল্পের প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন” শিরোনামে প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে ঢাকা ও রাজশাহী অঞ্চলের প্রথিতদশা ৮ জন মৃৎ শিল্পী অংশ নেওয়া।
মেলার প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চল থেকে ৫৪ জন কারুশিল্পী অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে নওগাঁ ও মাগুরার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি ও মুখোশ, চট্টগ্রামের তালপাতার হাতপাখা, রংপুরের শত রঞ্জি, সোনারগাঁওয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নক্শিকাঁথা, বেতের কারুশিল্প, মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, ঠাকুরগাঁয়ের বাঁশের কারুশিল্প, কুমিল্লার তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও সিলেটের ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্পসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগের মাটির কারুশিল্প স্থান পেয়েছেন।
মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে লোকজ নাটক, লোক কাহিনীর যাত্রাপালা, বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান,লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি,কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তী-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী, লোকজ জীবন প্রদর্শনী থাকবে।