খেলাধূলাডেস্ক,বিজয় বার্তা ২৪
ধানমন্ডির আবাহনী ক্রীড়া চক্রের মাঠে ইনডোর প্রশিক্ষণে প্রতিদিনই আসেন কিশোর ক্রিকেটার জয়। নিজেকে পেস বোলার হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তিনি। তার মতো আরো অনেক কিশোর ক্রিকেটার নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এই মাঠে। কেউ বোলার, আবার কেউ ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে চাইছেন।
কিশোর ক্রিকেটার জয়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি যখন বোলিং করেন তখন তার অ্যাকশন নিয়ে কেউ খেয়াল রাখছে কিনা?
তিনি বলেন, আসলে যদি হাত সমস্যা হয় তাহলে অনেক সিনিয়র ভাই যদি দেখে তাহলে বলে। এভাবে তো আসলে হয় না। আমাদের আরো বড়-বড় কোচ দরকার।
সমপ্রতি বাংলাদেশ দলের তাসকিন আহমদে এবং আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন আইসিসি নিষিদ্ধ করার পর এ নিয়ে জারালো বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
বোলিং অ্যাকশন নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কোনো প্রশ্ন না উঠে সেজন্য উঠতি ক্রিকেটারদের অনেকেই সচেতন।
অনিক আহমেদ নামের ১৫ বছর বয়সী একজন পেস বোলার বলছিলেন বোলিং অ্যাকশনে ত্রুটি চিহ্নিত করা খুবই সূক্ষ্ম বিষয়। অনেক সময় বিষয়টি বুঝে উঠা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ১৫ ডিগ্রি-১০ডিগ্রি এটা অনেক বড় সমস্যা। এটা মেশিন ছাড়া বুঝা যায় না। আল-আমিন, আরাফাত সানি, তাসকিন ওরা তো ন্যাশনাল টিমে খেলছে। তারপরেও তো বুঝতে পারেনি।
খেলার মাঠে কোনো বোলারের বোলিং অ্যাকশনে ত্রুটি আছে কিনা সেটি সাধারণত আম্পায়াররা রিপোর্ট করেন। এক সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। বর্তমানে তিনি আইসিসির তালিকাভুক্ত আন্তর্জাতিক আম্পায়ার।
শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত বলেন, ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলোতে অনেকের বোলিং অ্যাকশনে ত্রুটি দেখা যায়। কিন্তু সে সংখ্যা খুব বেশি নয়।
শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদসৈকত মনে করেন, ঘরোয়া আসরের ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলোতে বোলিং অ্যাকশনের খুঁটি-নাটি বিষয়গুলোতে মনোযোগী হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এনিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না।
বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে বোলিং রিভিউ গ্রুপ নামের একটি কমিটি আছে। কারো বোলিং অ্যাকশন সন্দেহজনক মনে হলে আম্পায়ারদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সেসব বোলারদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত মনে করেন বোলিং অ্যাকশনে ত্রুটি থাকলে আগেই শুধরে নেয়া ভালো।
তাসকিন আহমেদ এবং আরাফাত সানি ছাড়াও যেসব বাংলাদেশি বোলারদের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে এর আগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছিল তারা হচ্ছেন আল-আমিন এবং সোহাগ গাজী। কিন্তু ঘরোয়া আসরে তাদের বোলিং অ্যাকশনকে কখনোই সন্দেহ করা হয়নি।
বাংলাদেশ ক্রিকটে বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোলিং অ্যাকশনের বিষয়ে তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক।
দিপু রায় চৌধুরী বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির সিনিয়র কোচ এবং বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৫ দলের প্রধান কোচ।
তিনি বলছেন, এখন বিভিন্ন পর্যায়ে বোলিং অ্যাকশনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
দিপুর রায় চৌধুরী বলেন, প্রথমে আমরা ছোট বাচ্চাদের হাতটা কারেকশন (শুদ্ধ) করি যাতে তারা ফেয়ার এন্ড লিগাল ডেলিভারি ( আইনসিদ্ধ) করতে পারে। বিসিবির যতোগুলো টুর্নামেন্ট আছে তার সবগুলোতে আম্পায়ারদের মাধ্যমে আমরা বোলিং অ্যাকশন মনিটর করি।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, বোলিং অ্যাকশনের দিকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিলে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট একবার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেটি শোধরানোর পরেও সেই বোলারকে তার পুরনো বোলিং ধার ফিরে বেশ কষ্ট হয়।
কারণ তখন সেই বোলারের আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।