নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
আজ ৪ এপ্রিল, ঐতিহাসিক বন্দর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভোর বেলায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সিরাজউদ্দৌল্লা ক্লাব মাঠের আশ-পাশের এলাকা থেকে ৫৪ জন মানুষকে বর্বর পাকিস্তানী সেনারা আটক করে সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠের দক্ষিন-পশ্চিম কোনে (বর্তমান বন্দর বধ্যভূমি) দাঁড় করিয়ে মেশিনগান দিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এরপর পাকিস্তানী সৈন্যরা কাজী ইদ্রিসের বাড়ী ও আশপাশের বাড়ী থেকে মুলিবাঁশের তৈরী বেড়া খুলে এনে যন্ত্রণা কাতর দেহগুলোর উপর রেখে গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। বন্দরের কিছু লোক দূর থেকে লুকিয়ে প্রত্যক্ষ করেন এ জঘণ্য হত্যাযজ্ঞ। যারা দূর থেকে এগুলো প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের অন্যতম মরহুম আব্দুল মান্নান ভূইয়া, দীল মোহাম্মদ হাফেজ, মোহাম্মদ আলী হাফেজ প্রমূখ। স্থায়ী রাজাকার, পাক বাহিনীর দোসররা ও স্থানীয় পাকিস্তানপন্থীদের নিয়ে ৪ এপ্রিল বন্দরের অনেকের বাড়ীঘরও জ্বালিয়ে তান্ডবলীলা চালায়। নিরীহ ৫৪ জন মানুসকে কে ব্যাশ ফায়ার করে মৃত্যু নিশ্চিত করতে পুড়িয়ে মারা, বিভিন্ন বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেয়া লৌমহর্ষক এই ঘটনাগুলি বন্দরবাসীদের জন্য অত্যন্ত বেদনা ও শোকের দিন। সেই থেকে প্রতিবছর বন্দরবাসী ৪ঠা এপ্রিল বন্দর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে। প্রতি বছর ৪ এপ্রিল সিরাজদ্দৌলা ক্লাব মাঠের বধ্যভূমিতে বন্দরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রী,বন্দর গণহত্যা দিবস উদযাপন কমিটি,একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি,শহীদ পরিবার, আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ যথাযথ মর্যাদার ৪ এপ্রিল বন্দর গণহত্যা দিবস পালন করে আসছে।৪ এপ্রিল সিরাজদ্দৌলা ক্লাব মাঠে ৫৪ জনসহ ঐদিন বন্দরের বিভিন্নস্থানে আরও শতাধিক নিরস্ত্র মানুষকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। এসব শহীদদের সকলের নাম পরিচয় উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। প্রাক্তণ কমিশনার ও আওয়ামীলীগ নেতা মরহুম আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন খান,আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও প্রবীন নেতা ইউনুস খান,বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নাসির,আওয়ামীলীগ নেতা ইউসুফ ভূইয়া ননী,আব্বাস আলীসহ অন্যান্য শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রচেষ্টায় ও সহায়তায় ২৪ জনের নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে। তারা হলেন,ছমিরউদ্দিন সরদার,মমতাজউদ্দিন মাষ্টার,আলী আকবর, রেজাউল ইসলাম বাবুল,আমির হোসেন, নায়েব আলী, আলী হোসেন,ইউসুফ আলী,সরজু চন্দ্র কানু, যমুনা চন্দ্র কানু, লছমন চন্দ্র কানু,কানাই লাল কানু,গোপাল চন্দ্র, ভগবত চন্দ্র,দূর্গা চরন প্রসাদ,নারায়ণ চন্দ্র প্রসাদ,ইন্দ্র চন্দ্র দাস,সুরেশ চন্দ্র দাস, দিগন্ত চন্দ্র বর্মণ,বনেল চৌধুরী,মোবারক,হারাধন মাষ্টার,নারায়ণ চৌধুরী,পরেশ দাস। এছাড়া বন্দর খানবাড়ীর আবুল বাশার খানসহ অনেককে সেই দিন বন্দরের বিভিন্নস্থানে পাকবাহিনী ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে।