‘ভাষা আন্দোলন ও নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা’ রচনা প্রতিযোগীতার ফলাফল চূড়ান্ত, ৩১ মার্চ বিজয়ীদের পুরস্কৃত করবেন সেলিম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘ভাষা আন্দোলন ও নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগীতার ফলাফল চূড়ান্ত হয়েছে। বিচারকদের চুড়ান্ত মূল্যায়নে প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়া ৪১৪ জন প্রতিযোগীর মধ্য থেকে ৩জন বিজয়ী হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন বন্দর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেনীর ছাত্রী সাদিয়া আফরিন ¯িœগ্ধা। দ্বিতীয় হয়েছেন সরকারি তোলারাম কলেজের অনার্স ইংরেজী বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্রী আফরাসীম আহমেদ। তৃতীয় হয়েছেন নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী আনজুমান রাফিয়া।
আগামী ৩১ মার্চ বিকেল ৩টায় শহরের ইসদাইর এলাকায় অবস্থিত পৌর ওসমানী স্টেডিয়াম সংলগ্ন ( প্রস্তাবিত এ কে এম শামসুজ্জোহা স্টেডিয়াম) মাঠে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ডিজিটাল মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের সম্মানী তুলে দিবেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
প্রথম পুরস্কার হিসেবে ৫লাখ, দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ লাখ এবং তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ২ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এ পুরস্কারের টাকা প্রদান করা হবে।
এরআগে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান তার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চেয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
পরবর্তীতে গত ৩ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মহান শহীদ ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি মূলক সভায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ভাষা ‘আন্দোলন ও নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা’ নিয়ে রচনা প্রতিযোগীতার প্রস্তাব করেন। সেই মোতাবেক জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিঞা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) শাহীন আরা বেগমকে আহবায়ক করে ৯ সদস্যের একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে প্রতিযোগীতার আয়োজন করে ৭ ফেব্রুয়ারী রচনা আহবান করেন। ২২ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার ৪টি থানা এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন স্কুল থেকে মোট ৪১৪টি রচনা জমা পড়ে ছিল।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, আমি বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চেয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে ছিলাম। কিন্তু তারা অনেকেই আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি। এমনকি একটি স্কুলের শিক্ষকও ভুল উত্তর দিয়েছে। সরকারী মহিলা কলেজের একজন ও বন্দরে হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মঞ্চে কেঁদে কেঁদে বলে ছিলো তারা কখনও এ সব বিষয়ে জানার সুযোগ পায়নি। তাদেরকে সুযোগ করে দেওয়া হয়নি। তাই বর্তমান প্রজন্ম যাতে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সহ সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে সে কারনেই আমার এ প্রচেষ্টা। সরকারী মহিলা কলেজের ঘটনার পর আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রস্তুতিমূলক সভায় আমি রচনা প্রতিযোগীতা আয়োজনের প্রস্তাব রেখেছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে রচনা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ, অধ্যাপক এমরান জাহান, সরকারী তোলারাম কলেজের প্রভাষক জাহিদ হাসান এবং সরকারী মহিলা কলেজের প্রভাষক মেহেরুন্নেছা সেচ্ছায় কঠোর পরিশ্রম করে প্রত্যেকটি রচনা অত্যন্ত সূক্ষ ভাবে বিশ্লেষন করে আলাদা আলাদা নাম্বার প্রদান করেন। সকলের প্রদত্ত নাম্বার একত্রিত করে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্ধারন হয়।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে দীর্ঘদিন অপরাজনীতির কারনে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। তাই বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানার জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম কিভাবে দেশকে গড়তে চায় সেই স্বপ্ন ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বর্তমানে যারা দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই সকল জনপ্রতিনিধিদের নতুন প্রজন্মের ভাবনা সম্পর্কে অবগত করতেই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
সেলিম ওসমান আরও জানান, ইতোমধ্যেই তিনি আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আবারো রচনা প্রতিযোগীতা আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩১ মার্চ ডিজিটাল মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ ব্যাপারে চুড়ান্ত ঘোষণা প্রদান করবেন। নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার সব গুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্কুল ও কলেজ শাখায় আলাদা আলাদা প্রতিযোগীতার আয়োজন করবেন। এক্ষেত্রে বিজয় দিবসের প্রতিযোগীতার পুরস্কারও ‘ভাষা আন্দোলন ও নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রতিযোগীতার মতই হবে। প্রতিযোগীতায় রচনার বিষয়বস্তু তিনি ৩১ মার্চ ডিজিটাল মেলার অনুষ্ঠানে ঘোষণা করবেন।
রচনা প্রতিযোগীতাটির আয়োজন এবং সার্বিক সহযোগীতা করায় জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিঞা সহ মূল্যায়ন কমিটির সকল কর্মকর্তাদের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সেলিম ওসমান। সেই সাথে বিজয়ীদের লেখা রচনা পত্রিকায় প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।